৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ
স্বাস্থ্য-তদন্তে নির্দোষ ডাক্তার দোষী
সাব্যস্ত ক্রেতা আদালতে

সামান্য ছানি অস্ত্রোপচারের পরে তাঁর বাঁ চোখটা খুইয়েছিলেন এক বৃদ্ধা। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠায় এ নিয়ে তিন বছরে ছ’টি তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছিল। আর ছ’বারের মধ্যে পাঁচ বারই স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছিলেন, তাঁরা চিকিৎসকের কোনও গাফিলতি দেখতে পাচ্ছেন না।
ষষ্ঠ তদন্তের পরে অবশ্য সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম ও চিকিৎসককে কাজের ব্যাপারে ‘সতর্ক’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তার পরে বিষয়টি আর এগোয়নি। অভিযোগ গ্রাহ্য করেনি রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলও। কিন্তু ক্রেতা সুরক্ষা আদালত তার রায়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করে রোগিণীর পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল। ওই নির্দেশ নিয়েই ফের স্বাস্থ্য দফতরের দ্বারস্থ হচ্ছেন রোগিণীর পরিবার। তাঁদের বক্তব্য, শুধু আর্থিক ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করেননি, তাঁরা চেয়েছিলেন অভিযোগ প্রমাণ করে যথাযথ ব্যবস্থা নিক স্বাস্থ্য দফতর। এখনও সেই জায়গাতেই অনড় রয়েছেন তাঁরা।
বিষয়টি নিয়ে এখন আলোড়ন চলছে স্বাস্থ্য দফতরেও। ‘গাফিলতি পাওয়া যায়নি’ বলার পরেও কেন নজিরবিহীন ভাবে একটি অভিযোগের জন্য ছ’টি তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছিল, সেই প্রশ্নও উঠেছে। আগের তদন্ত যথার্থই ‘নিরপেক্ষ’ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে ফের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হতে পারে বলে স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন।
পাঁচ বছর আগে অস্ত্রোপচার হয়েছিল বর্ধমানের এক নার্সিংহোমে। নমিতা চট্টোপাধ্যায় নামে ওই রোগিণীর অস্ত্রোপচার করেছিলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের পরেই রোগিণীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। আত্মীয়দের অভিযোগ, নমিতাদেবী ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ’-এ আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও অস্ত্রোপচারের আগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও মৌসুমীদেবী আয়ুর্বেদিক চোখের ড্রপ দিতে বলেছিলেন বলেও অভিযোগ। নার্সিংহোমের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিয়েও অভিযোগ ওঠে। অস্ত্রোপচারের দিন কয়েকের মধ্যেই এমন গভীর সংক্রমণ ছড়ায় যে তার জেরে বাঁ চোখটি তুলে ফেলতে হয়।
ক্রেতা সুরক্ষা আদালত তাদের রায়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে যেমন দায়ী করেছে, তেমনই সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমেরও পরিকাঠামোগত গাফিলতি ছিল বলে জানিয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, অস্ত্রোপচারের আগে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষাও করতে বলেননি। এমনকী অস্ত্রোপচারের পরে যথাযথ ‘ডিসচার্জ সামারি’ লিখে কী ভাবে চোখের পরিচর্যা করতে হবে, সেটাও লেখেননি। এর পরে যখন রোগিণীর পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, তখন তাঁকে অন্যত্র রেফার করে দায় এড়িয়েছেন। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে এ জন্য সাড়ে চার লক্ষ টাকা এবং নার্সিংহোমকে ৫০ হাজার টাকা অর্থাৎ মোট পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মৌসুমীদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “নির্দেশের কপি খতিয়ে দেখা হয়নি। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।” মন্তব্য করেনি সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমও।
এর আগেও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে অস্ত্রোপচারের জন্য ওই নার্সিংহোমকে সতর্ক করেছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। আর মৌসুমীদেবী যে হেতু সরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসক, তাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রোপচার হলেও অভিযোগ সংক্রান্ত তদন্তের ভার গিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের কাছেই। নমিতাদেবীর ছেলে অমিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পাঁচ বছর ধরে সুবিচারের জন্য লড়াই করছি। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়ে এক ধাপ সাফল্য পেলাম ঠিকই। কিন্তু আমি চাই স্বাস্থ্য দফতর এবং মেডিক্যাল কাউন্সিল বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করুক। তা না হলে আরও অনেকের এমন সর্বনাশ হতে পারে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.