উত্তর ২৪ পরগনায় কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতাল এবং মালদহ ও মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র সংগ্রহে আসরে নেমেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ও পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নের স্বার্থেই যে ওই তিনটি মেডিক্যাল কলেজ চালু করা জরুরি, সে কথা বিশদে ব্যখ্যা করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদকে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। চিঠিতে উল্লেখ করেছেন সাচার কমিটির সুপারিশের কথাও। এই তিনটি মেডিক্যাল কলেজকে ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হচ্ছে পরিকাঠামোর অভাব। মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যেই পরিকাঠামোর অভাব মিটিয়ে ফেলার দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে রাজ্য সরকার।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ছাত্র ভর্তি শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কোন কোন মেডিক্যাল কলেজ অনুমোদন পাচ্ছে তা স্থির হয়ে যায় ৩০ জুনের মধ্যে। ফলে চার দিনের মধ্যে ওই ছাড়পত্র না এলে চলতি বছরে পড়ুয়া ভর্তি করতে ব্যর্থ হবে মেডিক্যাল কলেজগুলি। যারা আগের বছর ভর্তি হয়ে পঠনপাঠন শুরু করেছে, তাদের ভবিষ্যৎও খানিকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এই পরিস্থিতিতে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া-র চেয়ারম্যান কে কে তলওয়ারের সঙ্গে আলোচনার পরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ জানান, চার দিনের মধ্যেই রাজ্য ওই ছাড়পত্র পেয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন।
ক্ষমতায় এসে পাঁচ বছরে রাজ্যে ১০টি মেডিক্যাল কলেজ গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মমতা। সেই উদ্দেশ্যে একাধিক হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজ করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু পরিদর্শনে এসে ওই তিনটি মেডিক্যাল কলেজে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে জানিয়ে দ্বিতীয় বষের্র ছাত্র ভর্তি বন্ধ করে দেয় এমসিআই। এই পরিস্থিতিতেই মেডিক্যাল কলেজগুলির অনুমোদনের জন্য গুলাম নবির দ্বারস্থ হয়েছেন মমতা। আজাদকে চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “আগেও বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রককে চিঠি লেখা হয়েছে। ওই তিনটি মেডিক্যাল কলেজের জন্য এমসিআই যাতে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দ্রুত দেয় সে জন্য আপনাকে পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করছি।”
চিঠিতে মমতা উল্লেখ করেছেন, জনসংখ্যার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে কম মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। সে কারণেই রাজ্য সরকার আগামী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় চিকিৎসা শিক্ষায় আসন বাড়াতে তৎপর হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকলে এমসিআই ছাড়পত্র দিতে অপারগ বলে জানিয়েছে। এই অবস্থায় রাজ্যের পক্ষ থেকে এমসিআই-কে আশ্বাস দেওয়া হয়, আপাতত তারা ছাড়পত্র দিয়ে দিক। পরিকাঠামোগত সমস্যাগুলি ধাপে ধাপে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সমাধান করে ফেলবে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে আশ্বাস দিয়েছেন যে, “ওই কলেজগুলির পরিকাঠামোগত উন্নতি, শিক্ষক নিয়োগ এবং অন্যান্য সমস্ত ধরনের সাহায্য করা আমার সরকারের সর্বাধিক অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে।” সুদীপবাবুর দাবি, “এমসিআই প্রাথমিক ভাবে রাজ্যের যুক্তি মেনে নিয়েছে। তবে এর জন্য প্রতিটি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি চেয়েছে তারা। আশা করছি চার দিনের মধ্যেই ওই ছাড়পত্র আসবে।” |