কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) ভোটে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে কিছুটা ‘সুর নরম’ করলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ।
মঙ্গলবার গুরুঙ্গের নেতৃত্বে মোর্চার প্রতিনিধিরা দিল্লিতে বিদায়ী অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদম্বরমের সঙ্গে বৈঠক করেন। চিদম্বরমের সঙ্গে বৈঠকের পরে গুরুঙ্গ সাংবাদিকদের বলেন, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের জিটিএ ভোটে যোগ দিতে অনুরোধ করেছেন। ওঁকে জানিয়েছি, ‘ভোটে যোগ দেবে না’ সে কথা মোর্চা কখনও বলেনি। ভোটে দাঁড়ালে আমরা যে ৪৫টি আসনেই জিতব, সেটাও জানিয়ে দিয়েছি।” শ্যামল সেনের কমিটির রিপোর্টে তাঁদের আপত্তির কথাও চিদম্বরমকে জানিয়েছেন গুরুঙ্গরা।
মোর্চার অন্দরের খবর, কেন্দ্র-রাজ্য ও পাহাড়বাসীর একটা বড় অংশ যে দ্রুত ভোটের মাধ্যমে জিটিএ গড়ে উন্নয়ন-প্রক্রিয়ায় গতি আনার পক্ষে তা মানছেন খোদ গুরুঙ্গ। সে জন্য জিটিএ ভোটের দিন ঘোষণার পরে, তাতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে অবস্থান স্পষ্ট না করলেও, ভোট বয়কটের কথাও গুরুঙ্গ বলেননি।
তবে এ দিনই ডুয়ার্সের গরুবাথানে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের ‘বহিষ্কৃত’ নেতা জন বার্লা ও তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে মোর্চা নেতা রোশন গিরি ও হরকাবাহাদুর ছেত্রী দীর্ঘ বৈঠকের পরে মোর্চার তরফে ভোটে যাওয়ার ইঙ্গিত আরও জোরদার হয়েছে। হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেন, “নয়াদিল্লিতে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। জন বার্লাদের সঙ্গেও আমাদের সব বিষয়ে কথা হয়েছে।” এর পরেই রোশন গিরি ও হরকাবাহাদুর ছেত্রীর পাশে বসে জন বার্লা বলেন, “জিটিএ ভোট নিয়ে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। ওই ভোটে আমরা মোর্চাকে সব রকম সাহায্য করব।”
বস্তুত, গুরুঙ্গরা তরাই-ডুয়ার্সের প্রায় ৪০০ মৌজাকে জিটিএ-র অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুললেও শ্যামল সেন কমিটি মাত্র ৫টি এলাকার সুপারিশ করায় সবচেয়ে ক্ষুব্ধ হন মোর্চা অনুগামী জন বার্লারা। তাতে মোর্চা নেতৃত্বের ‘অস্বস্তি’ বেড়ে যায়। ইতিমধ্যে জিটিএ ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, আগামী ২৯ জুন জিটিএ ভোটের কথা মাথায় রেখে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্রমোহন।
এমতাবস্থায়, এ দিন নয়াদিল্লিতে চিদম্বরমের সঙ্গে দেখা করেন মোর্চা নেতারা। ভোট নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি, তাঁর কাছে জিএলপি-দের (গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেল) কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নিরাপত্তা বাহিনীতে চাকরি দেওয়া ও গোর্খাদের জন্য পরিচয়পত্র চালু করার দাবিও তুলেছে মোর্চা। গুরুঙ্গ জানান, আগেও সমস্যায় পড়ে তাঁরা কেন্দ্রের কাছে দরবার করেছেন, ভবিষ্যতেও করবেন। কেন্দ্র, রাজ্য ও মোর্চার মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতেই জিটিএ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই জিটিএ-র বিষয়ে সমস্যা হলে তাঁরা বারবার কেন্দ্রের কাছে আসবেন।
নয়াদিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করতে চান গুরুঙ্গ। মোর্চা সূত্রের খবর, সে জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সময়ও চাওয়া হয়েছে। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক শীর্ষ নেতা জানান, দলের কিছু ‘রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা’র ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে ওয়াকিবহাল করে তাঁর সহযোগিতা চাওয়া হবে। জিটিএ-তে যে ৫ সদস্যকে মনোনীত করা হবে, তাঁদের মধ্যে অন্তত ৪ জনকে যাতে তরাই-ডুয়ার্স থেকে বাছা হয়, সেই আর্জিও কি জানানো হবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে? এ প্রশ্নের জবাব দেননি মোর্চা নেতারা। |