কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গ ভূগর্ভ-জলের ক্ষেত্রে প্রায় দেউলিয়া অবস্থায় পৌঁছেছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এই পরিস্থিতিতে ভূগর্ভস্থ জলের ভারসাম্য বজায় রাখতে ২০০৫ সালের সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করে নিয়ন্ত্রণবিধি আরও কঠোর করার পথেই হাঁটছে রাজ্য সরকার। ভূগর্ভ-জল ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে মূলত যেখানে-সেখানে গভীর নলকূপ বসানোয় রাশ টানতে চাইছে নতুন সরকার।
মঙ্গলবার বিধানসভায় নিজের দফতরের বাজেট-বিতর্কের জবাবি বক্তৃতায় জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র ওই আইন সংশোধনের কথা জানিয়েছেন। মন্ত্রী জানান, অনুমতি ছাড়াই যেখানে-সেখানে গভীর নলকূপ বসিয়ে বেআইনি ভাবে ভূগর্ভস্থ জল তুলে নেওয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর হতে চায় তাঁর দফতর। সেই জন্যই ২০০৫ সালের রাজ্যের ভূগর্ভস্থ জল নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা হচ্ছে। অনুমতি ছাড়া যত্রতত্র গভীর নলকূপ বসালে জামিন-অযোগ্য ধারায় কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে ওই সংশোধনীর সাহায্যেই। অনুমতি না-নিয়ে গভীর নলকূপ বসালে বর্তমান আইনে ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা জরিমানার বিধান আছে। নতুন ব্যবস্থায় জরিমানা ছাড়াও কঠোরতর শাস্তি হবে।
মন্ত্রী বিধানসভায় বলেন, ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য বামফ্রন্টের আমলে যে-আইনটি তৈরি করা হয়েছিল, তাতে বেআইনি ভাবে জল তোলার দায়ে কেউ ধরা পড়লে জরিমানা দিলেই ছাড় পাওয়া যেত। এই সামান্য শাস্তির সুযোগ নিয়ে গ্রামাঞ্চলে বেআইনি ভাবে আকছার গভীর নলকূপ বসিয়ে বছরের পর বছর ঢালাও জল তোলা হয়ে আসছে। জল বিক্রিও চলছে। মন্ত্রীর মন্তব্য, জল বিক্রেতারা এখন এত ধনী হয়ে উঠেছে যে, জরিমানার টাকা দেওয়া কোনও ব্যাপারই নয়। এই অবস্থায় ভূগর্ভস্থ জলের ভারসাম্য রক্ষায় মন্ত্রীর দাওয়াই, “আমরা স্থির করেছি, বর্তমান আইন সংশোধনের মাধ্যমে জামিন-অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার এবং শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।”
জলসম্পদ দফতরই সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি জারি করে যত্রতত্র কম অশ্বশক্তির গভীর নলকূপ বসিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তোলার ঢালাও অনুমতি দিয়েছিল। গভীর নলকূপ বসানোর জন্য বিদ্যুৎ দফতরের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার যে-শর্ত ছিল, তা থেকেও ছাড় দেওয়া হয়েছিল পুরোপুরিই। কৃষকদের স্বার্থেই তারা এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে বিজ্ঞপ্তিতে যুক্তি দেখিয়েছিল সৌমেনবাবুর দফতর। ওই বিজ্ঞপ্তি জারির পরে গ্রামেগঞ্জে ফের গভীর নলকূপের ব্যবহার বেড়ে গিয়েছে। এতে ভূগর্ভস্থ জলের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে বলে পরিবেশবিদ ও ভূবিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
জলসম্পদ দফতরের সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিটি সংশোধন না-করলে ২০০৫ সালের আইন সংশোধন করে কোনও লাভ হবে কি?
বিধানসভার বাইরে মন্ত্রী জানান, তাঁর দফতরের সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় অংশ সংশোধন করা হবে। বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ বসানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের আগাম অনুমতি নেওয়াটা ফের বাধ্যতামূলক করা হবে। |