আনন্দমঠ হোমের নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেই গলদ ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। রবিবার দুপুরে নিরাপত্তার সেই ফাঁক গলেই হোমের ৪২ জন আবাসিক মেয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পুরুলিয়া শহরে চলে আসেন। বিক্ষুদ্ধ আবাসিকেরা হোমের সদর দরজা দিয়েই বাইরে বেরিয়েছিলেন। যে প্রবেশপথে ২৪ ঘণ্টাই নিরাপত্তারক্ষী থাকার কথা। তদন্তে প্রশাসন জেনেছে, সেই সময় মাত্র দু’জন পুরুষ নিরাপত্তারক্ষী ডিউটিতে ছিলেন। কোনও মহিলা রক্ষী না থাকায় মেয়েদের আটকানো যায়নি।
বস্তুত, আনন্দমঠ হোমের আবাসিকদের এই ‘বিদ্রোহ’-এর ঘটনায় শুধু জেলা প্রশাসনই নয়, নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসনও। রাজ্যের সমাজকল্যাণ ও নারী বিকাশ দফতরের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র মঙ্গলবার বলেছেন, “আমি জেলা প্রশাসনের কাছে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়েছি। ওখানকার সমস্যা খতিয়ে দেখতে আমি নিজে পুরুলিয়ায় যাব।” |
সোমবার শহরের উপকণ্ঠের ওই সরকারি হোমে তদন্তে গিয়ে পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) হৃষিকেশ মুদি ও জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক স্বপন মুখোপাধ্যায় দেখেছেন যে, হোমে কোনও সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী নেই। শুধু তাই নয়, হোমের ভিতরেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢিলেঢালা। রবিবার বিক্ষুদ্ধ আবাসিকদের একাংশ যেভাবে জানালা, দরজা, আসবাবপত্র ভাঙচুর চালিয়েছেন, তা দেখে সরেজমিনে তদন্তে যাওয়া আধিকারিকেরা মনে করছেন, হোমে শৃঙ্খলারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, হোমের কর্মীদের যাঁর যে বিভাগে দায়িত্ব, তাঁরা ঠিকঠাক ভাবে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন কিনা। অতিরিক্ত জেলাশাসকও মঙ্গলবার বলেন, “দায়িত্বে গাফিলতির কিছু উদাহরণ আমাদের নজরে এসেছে।”
আধিকারিকেরা তদন্তে গিয়ে এ-ও দেখেছেন যে, লোডশেডিং হলে কাযর্ত অন্ধকারেই থাকতে হয় হোমের আবাসিকদের। হৃষিকেশবাবু বলেন, “ওখানে জেনারেটরের ব্যবস্থা নেই। আমরা আপাতত প্রতিটি ঘরে বিকল্প আলোর ব্যবস্থা করছি। পরবর্তী কালে ওখানে সৌর আলোর ব্যবস্থা করার ভাবনাচিন্তা চলছে। পাশাপাশি হোমের যে সব মেয়ে শহরের বিভিন্ন স্কুল বা কলেজে পড়ছে, তাঁদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য সাইকেল দেওয়ার ভাবনাও রয়েছে।” হোম পরিদর্শন করে যে সমস্ত বিষয় তাঁদের চোখে পড়েছে, তা জেলাশাসককে জানানো হবে বলেও জানান অতিরিক্ত জেলাশাসক।
আনন্দমঠ হোমের সুপার ডালিয়া আচার্য এ দিন বলেন, “আমাদের কিছু সমস্যার কথা প্রশাসনকে জানিয়েছি। সেগুলির মধ্যে মহিলা পুলিশ নিয়োগের কথাও রয়েছে।” উল্লেখ্য, বর্তমানে ওই হোমে ৮ জন পুরুষ নিরাপত্তারক্ষী এবং সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত একজন মহিলা হোমগার্ড থাকেন বলে হোম সূত্রের খবর। ডালিয়াদেবীর কথায়, “আবাসিকেরা কেন এ ভাবে বিদ্রোহী হয়ে উঠল, তা জানতে হবে। ওদের সঙ্গে পৃথক ভাবে কথা বলব।” |