চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে ঘিরে রঘুনাথপুর পুরসভার পরিস্থিতি আরও জটিল হল।
পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আদৌ গৃহীত হয়েছে কি না, এই নিয়ে চলা বিতর্কের মধ্যেই রঘুনাথপুর পুরসভার নতুন চেয়ারম্যান গঠনের জন্য সভা ডাকলেন বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরেরা। আজ বুধবার, ওই সভা ডেকেছেন পুরসভার দুই তৃণমূল কাউন্সিলর বিষ্ণুচরণ মেহেতা ও দীনেশ শুক্ল এবং আরএসপি-র নাজিয়া পারভিন। যদিও ওই সভাকে অবৈধ বলে দাবি করেছেন বর্তমান পুরপ্রধান, তৃণমূলের মদন বরাট। রঘুনাথপুরের এসডিও প্রণবকুমার বিশ্বাস বলেন, “এ দিন সন্ধ্যায় দু’পক্ষই আমার কাছে এসেছিলেন। বুধবারের সভায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নজর রাখতে এক জন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকবেন।”
মদনবাবুর বিরুদ্ধে পুরসভা পরিচালনার কাজে একাধিক অভিযোগ তুলে সম্প্রতি অনাস্থা এনেছিলেন তৃণমূলের তিন এবং কংগ্রেস ও আরএসপি-র দু’জন মিলিয়ে পাঁচ জন কাউন্সিলর। গত ১১ জুন পুরসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের উপরে আলোচনার জন্য তলবি সভা ডেকেছিলেন পুরপ্রধান। তবে ওই সভায় অনাস্থা গৃহীত হয়েছে কি না, তা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়।
পুরসভা সূত্রের খবর, ওই দিন সভায় উপস্থিত ছিলেন পুরপ্রধান-সহ তৃণমূল কংগ্রেসের ৬ জন, আরএসপির এক জন এবং সিপিএমের দু’জন কাউন্সিলর। অর্থাৎ, মোট ৯ জন। অনাস্থা প্রস্তাব সমর্থন করেন ৪ জন। অনাস্থার বিপক্ষে ভোট দেন ৩ জন। সিপিএমের দু’জন নিরপেক্ষ থেকে ভোটদানে বিরত ছিলেন। এই প্রক্ষিতেই তৈরি হয়েছিল জটিলতা। পুরপ্রধান দাবি করেন, সভায় উপস্থিত কাউন্সিলরদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ (এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম পাঁচ জন) অনাস্থার পক্ষে ভোট দেননি। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হয়েছে।
উল্টোদিকে বিক্ষুব্ধদের মধ্যে বিষ্ণুচরণ মেহেতার দাবি ছিল, ভোটাভুটিতে অংশ নেওয়া ৭ জনের মধ্যে তো সংখ্যাগরিষ্ঠ (৪ জন) অনাস্থার পক্ষেই ভোট দিয়েছেন! ফলে অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। ঘটনা হল, সভার পরে দু’পক্ষই দ্বারস্থ হয়েছিল প্রশাসনের। বুধবার যে সভা ডাকা হয়েছে, সেখানে পর্যবেক্ষক রাখার জন্য জেলাশাসক ও রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন করেছে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রশাসন অনাস্থা নিয়ে তাদের মতামত জানায়নি।এ সবের মধ্যেই বুধবার নতুন পুরপ্রধান নির্বাচন নিয়ে সভা ডেকেছেন তিন কাউন্সিলর। বিষ্ণুবাবুর দাবি, “আমরা প্রশাসনের মতামতের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের তরফে কোনও সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। এ দিকে অনাস্থা প্রস্তাবের পরে নতুন চেয়ারম্যান গঠনের দিন পেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী তিন জন কাউন্সিলর মিলে পুরপ্রধান নির্বাচনের সভা ডাকা হয়েছে।” বিক্ষুব্ধ ওই অংশের আশঙ্কা, অনাস্থার পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নতুন পুরপ্রধান গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করলে পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগ করতে পারে প্রশাসন। বিষ্ণবাবু বলেন, “সমস্ত সম্ভবনা খতিয়ে দেখে পুরসভায় অচলাবস্থা এড়াতে আইন মেনেই সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভায় প্রশাসনের তরফে পর্যবেক্ষক পাঠানোর আবেদনও করা হয়েছে।” বুধবারের সভায় উপস্থিত থাকার জন্য কাউন্সিলরদের চিঠি দিয়েছেন বিষ্ণুবাবুরা। তবে অনাস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়া তৃণমূলের তিন জন চিঠি নেননি। তাঁদের ডাক মারফত চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বুধবারের সভাকে অবৈধ বলে পাল্টা দাবি করে পুরপ্রধান বলেন, “অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। ফলে নতুন পুরপ্রধান গঠনের জন্য ডাকা সভার বৈধতা নেই।” তাঁর দাবি, প্রশাসন তাদের মতামত এখনও জানায়নি। তাই ‘আইন বহির্ভূত’ ভাবে সভা ডাকা হয়েছে। তাঁরা সভায় যাবেন না বলেও জানিয়েছেন পুরপ্রধান-সহ বাকি তিন কাউন্সিলর। |