জন সচেতনতায় সরকারি প্রকল্পের প্রচার
ঢাকের বাদ্যিতে মিলছে সাফল্য, দাবি জেলা প্রশাসনের
শারদ উৎসবের এখনও কয়েকটা মাস বাকি। কিন্তু বনগাঁ মহকুমার বাগদা ব্লকের হাট-বাজারগুলি এখন থেকেই ঢাকের আওয়াজে মুখর। সৌজন্যে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, তাদের যাবতীয় সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে সাদারণ মানুষকে অবহিত করতেই এমন অভিনব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাগদা ব্লকে সম্প্রতি এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। সরকারি এই ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলেছে বলে দাবি করেছে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, “জেলার প্রতিটি ব্লকে একজন করে ঢাকিকে নিযুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতেই আমাদের এই উদ্যোগ।”
জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগরে তাঁর কাছে আশীর্বাদ বলেই মনে করছেন বাগদার রামনগর গ্রামের বাসিন্দা স্বপন দাস। সরকারি কাজের প্রচারে হাটে-বাজারে ঢাক বাজিয়ে এখন অর্তের মুখ দেখছেন তিনি। বাপ-ঠাকুরদার কাছে ঢাক বাজানোর তালিম নিয়েছেন। এতদিন পুজোর সময় ছাড়া অন্য সময় ঢাকের বায়না জুটত না। বাধ্য হয়ে ঢাকের কাঠি তুলে রেখে খেতমজুরের কাজে নেমে পড়তে হত তাঁকে। সেই অবস্থায় হঠাৎই কপালে জুটে যায় এমন সুযোগ। সরকারের নানা প্রকল্প মানুষকে জানাতে, চেনাতে ঢাক বাজিয়ে প্রচার করা হবে। আর দেরি করেননি স্বপন।
ঢাক বাজিয়ে প্রচার স্বপন দাসের। ছবি: পার্থসারথি নন্দী।
সরকারি ওই কাজে তাঁর আর্থিক অবস্থারও কিছুটা হাল ফিরেছে। স্বপনবাবুর কথায়, “পারিবারিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। সরকারের কাছ থেকে এমন কাজ পাওয়ায় অবস্থা কিছুটা ভাল হয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বপনবাবু মাসে ১০ দিন হাটে-বাজারে ঢাক বাজিয়ে সরকারি প্রকল্পের প্রচার করছেন। এর জন্য প্রতিদিন তাঁকে ২০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। আর হাট-বাজারকে বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ, সেখানে বহু মানুষের উপস্থিতি। সরকারি এমন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ঢাকের আওয়াজ শুনে ভিড় করছে মানুষ। অনেক প্রবীণ মানুষ এর সঙ্গে তাঁদের পুরনো স্মৃতি ফিরে পাচ্ছেন। এমনই একজন গোপাল মাঝি। বয়স আশি পেরিয়েছে। বললেন, “ছোটবেলায় বাড়ি ছিলে বাংলাদেশের ফরিদপুরে। দেখতাম, কোনও কিছুর প্রচার করতে ঢ্যাঁড়া পেটানো হত। সেই আওয়াজ শুনে ছুটে যেতাম সেদিকে। সেদিন দেখি এখানেও ঢাক বাজিয়ে সরকারি কাজের প্রচার হচ্ছে। পুরনো সেই স্মৃতি ফিরে আসছে।”
আর স্বপনবাবু কি করেন? না, শুধু ঢাক বাজানোই তাঁর কাজ নয়। ঢাকের আওয়াজ শুনে লোকজন জড়ো হলে তাঁদের হাতে প্রশাসনের দেওয়া লিফলেট তুলে দেন তিনি। জনতাকে সরকারি নানা প্রকল্পের কথা জানান। বাগদার বিডিও খোকনচন্দ্র বালা বলেন, “জেলার মধ্যে বাগদা ব্লকেই এই ব্যবস্থা প্রথম চালু করা হয়েছে। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ আরও বেশি করে আমাদের কাছে আসছেন বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার জন্য।”
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, গ্রামের বহু মানুষ জাতিগত শংসাপত্র কী ভাবে পাওয়া যায়, কোথায় পাওয়া যায় তা জানতেন না। এই ব্যবস্থায় তাঁদের সেই সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। ভবানী সরকার, মিলন সাহা, জয়ন্তী দাসের মতো খেত মজুররা জানালেন, পেটের তাগিদে সারাদিন মাঠে কাজ করতে হয়। সন্ধ্যায় কাজ থেকে ফিরে বাজারে যাই। সরকারি দফতরে যাওয়া খুব বেশি হয় না। ফলে সরকারি নানা প্রকল্প নিয়ে অনেক কিছুই জানতে পারি না। তা ছাড়া টাকাপয়সাও খরচ হয়। এখন বাজারে গেলে সব জানতে পারছি। তার উপর ঢাকের বাদ্যি, ভালই লাগছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.