দীর্ঘ ৩৭ বছর শিক্ষা দান করেও গত ছ’বছর ধরে পেনশন এবং অবসরকালীন অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাননি এক শিক্ষিকা। আবেদন-নিবেদন, আইন-আদালত করে শুধু হয়রানই হয়েছেন তিনি। হাজারো দৌড়ঝাঁপেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অকারণে তাঁকে কলকাতা হাইকোর্টে আসতে বাধ্য করানোয় এবং বারবার আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ওই শিক্ষিকাকে বিপন্ন করার দায়ে অবশেষে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতরের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করলেন বিচারপতি। জরিমানার টাকা পাবেন দীপালি দাস নামে ওই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকাই। সেই সঙ্গে দু’মাসের মধ্যে তাঁর সমস্ত প্রাপ্য মিটিয়ে দিতে হবে সরকারকে।
স্কুলশিক্ষা দফতরের জরিমানার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের ভূমিকার কঠোর সমালোচনাও করেছেন বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, এক জন শিক্ষিকা ৩৭ বছর একটি গ্রামীণ বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দিয়েছেন। অথচ স্কুলশিক্ষা দফতর সেই শিক্ষিকার অবসরের পরে ছ’বছরেরও বেশি সময় ধরে তাঁকে ‘প্রোভিশনাল পেনশন’-ও দেয়নি। এটা শুধু লজ্জার নয়, অত্যন্ত বেদনার বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার করঞ্জলি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে অবসর নেন দীপালিদেবী। ওই আবেদনকারিণীর আইনজীবী এক্রামুল বারি বলেন, অবসরের আগেই স্কুলশিক্ষা দফতর ওই শিক্ষিকাকে জানিয়ে দিয়েছিল, তাঁকে বেতন হিসেবে বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও হয়। মামলা চলাকালীনই অবসর নেন তাঁর মক্কেল। অবসরকালীন প্রাপ্য আদায়ের জন্য তার পরেই শুরু হয় তাঁর ছোটাছুটি। স্কুলের পরিচালন কমিটি ও জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে বারবার আবেদন-নিবেদন করেন ওই শিক্ষিকা। কিন্তু সবই ব্যর্থ হয়। গ্র্যাচুইটি, পেনশন বা অবসরকালীন অন্য কোনও সুযোগ-সুবিধাই পাননি তিনি।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, যদি বেতন বেশি দেওয়া হয়েও থাকে, সেটা ওই শিক্ষিকার ভুল নয়। ভুলটা রাজ্যের শিক্ষা দফতরের। অথচ অবসরের পরে এক শিক্ষিকাকে শিক্ষা দফতরের ভুলের দায় বহন করতে হচ্ছে। তা ছাড়া বেতন বেশি দেওয়া হয়ে থাকলেও অবসরকালীন প্রাপ্য থেকে কোনও মতেই সেটা কেটে নেওয়া যায় না। বিচারপতি দু’মাসের মধ্যে দীপালিদেবীর যাবতীয় প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে বলেন, ওই শিক্ষিকার অবসরের দিন থেকে তাঁর প্রাপ্য গ্র্যাচুইটির উপরে ১০ শতাংশ সুদও দিতে হবে। আর বকেয়া পেনশনের উপরে সুদ দিতে হবে নয় শতাংশ হারে।
বিভিন্ন বিচারপতি এর আগেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবসরকালীন প্রাপ্য নিয়ে সরকারকে বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন এবং পেনশন-গ্র্যাচুইটি দিতে গড়িমসি করার মনোভাব অত্যন্ত লজ্জার বলে উল্লেখ করেছেন। রাজ্যে সরকার বদল হলেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হয়রানির ছবিটা আদৌ বদলায়নি। অবসরকালীন প্রাপ্য আদায় করার জন্য এখনও সেই হাইকোর্টেরই দ্বারস্থ হতে হচ্ছে তাঁদের। |