ফের উদ্যোগ নিল জেলা প্রশাসন এবং রোখা গেল আরও একটি নাবালিকা বিয়ে।
কিন্তু জেলা কর্তাদের উপস্থিতি, পুলিশের ঘন ঘন আনাগোনা, গ্রামবাসীদের কৌতূহলী চোখসব মিলিয়ে এ বারের মতো শাহজাদপুরের বছর পনেরোর মমতা হাজরাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে না হলেও প্রশ্ন থেকে গেল, মমতার বিয়ে থমকে গেল ক’দিনের জন্য!
কেন? কারণ, মুর্শিদাবাদের আনাচে কানাচে কখনও প্রশাসন কখনও বা সমাজসেবী সংগঠন ঝাঁপিয়ে পনে নাবালিকার অকাল-বিয়ে রুখলেও পরিস্থিতি থিতিয়ে গেলে, আড়ম্বরটুকু ছেঁটে ফেলে সে বিয়ে যে নিশ্চুপে হয়ে যাচ্ছে নির্দিষ্ট পাত্রের সঙ্গেই, এমন খবরও রয়েছে।
শাহজাদপুরের পাঁচকুঠী এমনই একটি গ্রাম। গত ১১ জুন সেখানে প্রশাসনের উদ্যোগে থমকে গিয়েছিল মায়ারানি মণ্ডল নামে বছর চোদ্দোর এক বালিকার হিয়ে। প্রশাসনের কর্তাদের কাছে মেয়েটির বাবা-মা লিখিত মুচলেখা দিয়েছিলেন। আঠারো বছর না হলে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার ‘সাহস’ দেখাবেন না তাঁরা। সেই সঙ্গে মায়ারানিরহ পড়াশোনা যাতে থমকে না যায় সে ব্যাপারেও ‘কথা’ দিয়েছিলেন তাঁরা। কার্যক্ষেত্রে অবশ্য তা হয়নি।
মমতা হাজরা।
ছবি: গৌতম প্রামাণিক। |
দিন তিনেকের মধ্যেই লালবাগের পাত্রপক্ষ উজিয়ে এসে পাত্রীকে লালবাগ নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন। খবরটা যে জেলা প্রশাসনের কাছে যায়নি এমন নয়। কিন্তু নতুন করে আর উদ্যোগ নেননি জেলা-কর্তারা।
এ ক্ষেত্রে কী হবে? লোকপুর গ্রামে বসে মমতার বাবা কৃষিজীবী বাবু হাজরা প্রশাসনের কাছে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আপাতত মেয়ের বিয়ে দেওয়া হবে না বলে। পাত্রপক্ষকেও তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। আজ বুধবারই তার বিয়ের দিন ছিল। সেই মতো আয়োজনও ‘সম্পূর্ণ’ হয়ে গিয়েছিল বলে পাত্রী পক্ষের তরফে ‘আফসোসের’ সুরে জানানো হয়েছে।
বহরমপুরের বিডিও কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল বলেন, “প্রথম খবরটা দেয় চাইল্ড লাইন কর্তৃপক্ষ। আমরা গিয়ে দেখি খবরটা সত্যি। তারপরেই বাড়ির লোকজনকে বুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ রাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং পুলিশকে নজর রাখতেও বলা হয়েছে।” এর আগে গত ২০ জুন বহরমপুর থানার ভাকুড়ি-২ পঞ্চায়েতের কয়া গ্রামের এক নাবালিকার বিয়ে রুখে ছিল প্রশাসন। কালীতলাদিয়ার হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রীর বিয়ের আয়োজন করা হয় বহরমপুরের একটি মন্দিরে। কিন্তু আগাম খবর পেয়ে পুলিশ ও প্রশাসন ওই মন্দির চত্বরে অপেক্ষা করতে থাকে। পরে সেখান থেকে পাত্র-পাত্রীপক্ষদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বহরমপুর থানায়।
বিয়েতে আপত্তি ছিল মমতারও। কিন্তু তার বাবা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিয়ে না করলে হাত-পা বেঁধে ‘জলে ভাসিয়ে’ দেওয়া হবে।হ্যাঁ, এমনই হুমকি দিয়েছিলেন যে বাবা, তিনি কী বাস্তবিকই মেয়ের বিয়ে রুখে স্বস্তিতে? বাবু হাজরা বলেন, “আমার ছয় মেয়ে। তার মধ্যে চার মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আমি পরের জমিতে দিনমজুর খেটে সংসার চালাই। তাই ভাল পাত্র পেয়ে আর হাতছাড়া করতে চাইনি।” কিন্তু তিনি কতদিন কথা রাখবেন তা নিয়ে গ্রামের অনেকরই প্রশ্ন রয়েছে।
বিয়েতে তার আপত্তির কতা বড় দিদি বন্দনাকে জানিয়েছিল মমতা। বন্দনা বলেন, “বাবা-মা জোর করে ওর বিয়ে দিচ্ছে বলে ফোন করে জানিয়েছিল বোন। শুনেই আমি এক পরিচিত দিদি, আইসিডিএস কর্মীকে জানাই।” তিনিই উদ্যোগ নিয়ে বিষয়টা চাইল্ড লাইন কর্তৃপক্ষের কানে তুলে দিয়েছিলেন।
মমতা বলে, “চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরে পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয়েছে বাড়ির চাপে। স্বনির্ভর হওয়ার জন্য হাতে-কলমে কিছু শিখতে চাইলেও আমাকে বাধা দেওয়া হয়। এমনকী আমাকে না জানিয়েই বাবা-মা আমার বিয়ে ঠিক করে। কিন্তু আমি এখনই বিয়ে করতে চাই না।”
মেয়ের কথা কি শুনতে পাচ্ছেন বাবা-মা? |