কেলেঘাই-কপালেশ্বরী সংস্কার প্রকল্প
জমি অধিগ্রহণে সমস্যা হবে না, মত সেচমন্ত্রীর
শুরু হয়েছে দুই মেদিনীপুরবাসীর বহু কাঙ্খিত কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাগুই অববাহিকা নিকাশি প্রকল্পের কাজ। কাজ শুরু হতেই জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারি সংস্থার লোকজনের থেকে জোর করে টাকা আদায়েরও। এ সবের মধ্যেই মঙ্গলবার প্রকল্পের কাজ দেখতে সবংয়ে এলেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। কপালেশ্বরী নদীর তীরে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী ঘোষণা করলেন, “যাঁরা জমি দিচ্ছেন, প্রত্যেকেই ন্যায্য মূল্য পাবেন। কারও এক টাকাও ক্ষতি হবে না।” ১৯৬৮ সালে একবার কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদী সংস্কারের তোড়জোড় হয়েছিল। তখনও জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় যাঁদের জমি নেওয়া হয়েছিল, তাঁরা দামের ২০ শতাংশ অর্থও পাননি। মানসবাবুর প্রতিশ্রুতি, “যে সব মানুষ ১৯৬৮ সালে জমি দিয়েছেন তাঁরাও সেই টাকা পাবেন। যাতে দ্রুত টাকা দেওয়া যায়, সে জন্য দুই মেদিনীপুরের জেলাশাসককে যাবতীয় নথি তৈরি করতে বলা হয়েছে।”
সবংয়ের কাঁটাখালিতে চলছে কেলেঘাই নদী সংস্কার।
সম্প্রতি এই প্রকল্পের কাজ ঘিরে গোলমাল বাধে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ময়না ব্লকের বাকচায়। কয়েকদিন কাজ বন্ধও ছিল। অভিযোগ, শাসক তৃণমূলের মদতপুষ্ট স্থানীয় কিছু লোক ভয় দেখিয়ে ঠিকাদার সংস্থার লোকজনের কাছে টাকা দাবি করে। পরে প্রশাসনের তরফে নিরাপত্তার আশ্বাসে ফের কাজ শুরু হয়। এ দিন অবশ্য এ সব নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সেচমন্ত্রী। জমি অধিগ্রহণ না করেই কেন কাজ শুরু করে দেওয়া হল সে প্রসঙ্গও এড়িয়ে গিয়েছেন। শুধু বলেন, “জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল। তাই বিলম্ব হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না। মানুষ বন্যা থেকে বাঁচতেই জমি দিতে আগ্রহী হবেন।” আত্মবিশ্বাসী মন্ত্রীর কথা সমর্থন করছেন সবংবাসীর একাংশও। পরিমল চাউলিয়া, রামপদ সাউরা বলেন, “জমি থেকে কী লাভ। বন্যার জন্য তো বছরে একবার ফসল হয়। ফি বছর বাড়ি ভাঙে। তাই নদী সংস্কারের জন্য জমি বা বাড়ি যাই দিতে হোক আপত্তি নেই।”
সবংবাসীর এই ধারণাকে মূলধন করেই প্রত্যয়ী সেচমন্ত্রী। দফতরের ডেপুটি সেক্রেটারি দেবাশিস সেনগুপ্তকে নিয়ে নিজের নির্বাচনী এলাকায় কাজ দেখতে দেখতে মন্ত্রী জানালেন, ২১৪৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকার জল বয়ে যায় কেলেঘাই-কপালেশ্বরী নদী দিয়ে। কিন্তু সংস্কার না হওয়ায় ৬৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ফি বছর বন্যার কবলে পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং, নারায়ণগড়, পিংলা, পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না, ভগবানপুর-১, পটাশপুর-১ ব্লকের বহু মানুষ। প্রথমেই গোটা এলাকায় নদী সংস্কার সম্ভব নয়। প্রথম ধাপে ১৬৭৫ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১৯৬৮ সালেই অনেকটা অধিগৃহীত হয়েছিল। মন্ত্রী বলেন, “এখন পর্যন্ত ৬০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। ১৮৫টি যন্ত্রে মাটি কাটার কাজ চলছে। মানুষ খুশি।”
জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার মধ্যেই জোরকদমে চলছে কেলেঘাই-কপালেশ্বরী-বাগুই বেসিন
প্রকল্পের সংস্কার কাজ। মঙ্গলবার সবংয়ে তা পরিদর্শন করলেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া।
বর্তমানে সতির খাল, বেনেদিঘি খাল-সহ একাধিক খাল মিলিয়ে ৪০ কিলোমিটার সংস্কার করা হবে। এর বাইরে ২৩ কিলোমিটার কেলেঘাই, ২২ কিলোমিটার কপালেশ্বরী, চণ্ডীয়া ও বাঘাই নদী ৮ কিলোমিটার করে ১৬ কিলোমিটার সংস্কার করা হবে। এর পুরোটাই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় পড়বে। সামনেই বর্ষা থাকায় আপাতত কাজ চালানোর জন্য নদীর মাঝের ৩৫-৪০ মিটার সংস্কার করা হচ্ছে। পরের বছর সেই নদীকে চওড়ায় ১৩০ মিটার পর্যন্ত বাড়ানো হবে। কোথাও তা ৫ মিটার আবার কোথাও সাড়ে ৪ মিটার গর্ত করা হবে। পরিস্থিতির চাহিদা মেনেই তা করা হবে বলে মন্ত্রী জানান। তবে আগামী বছরেই প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করা যাবে বলে মন্ত্রীর দাবি।
নদীকে ঘিরে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। কাঁটাপাহাড়িতে একটি সাড়ে ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু ও ভুয়াতে ১০ কোটি চাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হবে বলেও মন্ত্রী জানান। তাঁর কথায়, “কাঁটাপাহাড়িতে সেতুর জন্য পূর্ত দফতর টাকা মঞ্জুর করেছে। আর ভুয়াতে ব্যাকওয়ার্ড রিজিওন গ্রান্ট ফান্ডের টাকায় সেতু হবে।” এ ছাড়াও সুবর্ণরেখা ব্যারাজ প্রকল্প, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান ও বাঁকুড়ার দ্বারকেশ্বর-গন্ধেশ্বরী জল প্রকল্প রূপায়ণেও সেচ দফতর সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।

ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.