বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের তালিকায় যাতে মানস অরণ্যের নাম ওঠে সে জন্য এতদিনে ইউনেস্কোর কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে আবেদন জানাল ভুটান। মানস নদীর দুই পারে একদিকে ভারতের অসম অন্য দিকে ভুটান জুড়ে এই বিশাল অরণ্য। ভুটানের দিকের অংশটি রয়্যাল মানস জাতীয় উদ্যান হিসাবেই পরিচিত।
গত বছর ‘বিপন্ন’ তালিকা থেকে ঐতিহ্যক্ষেত্রের মূল তালিকায় ফিরে এসেছে মানস। ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মানসের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে পরামর্শ দিয়েছিলেন, মানস নদীর দুই পারে অবস্থিত মানস অরণ্য যেহেতু একই অরণ্যের দু’টি অংশ এবং পশুদের চারণভূমি দুই তীর ধরেই বিস্তৃত, তাই সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সীমান্তের দুই পাশের অরণ্যকেই ইউনেস্কোর আওতায় আনা উচিত। বেশ কয়েক বছর ধরেই ভারতের বিশেষজ্ঞরা এই দাবি তুলছিলেন। কিন্তু ভুটান রাজি হচ্ছিল না। সম্প্রতি মানস জাতীয় উদ্যানে বাঘ সুমারির পরে বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি করে অনুভূত হয়। অবশেষে, দুই দফায় অসমের বনকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে ভুটান সরকার ‘রয়্যাল মানস’ নিয়ে বিশদ রিপোর্ট প্রস্তুত করে ইউনেস্কোর কাছে পাঠিয়েছে। |
ইউনেস্কোর তালিকায় আজও মানসের পরিচয় ‘অভয়ারণ্য’ হিসাবেই। এ ছাড়া, মানসের এলাকা ইউনেস্কোর তালিকায় ৩৯ হাজার হেক্টর হিসাবে উল্লেখ করা থাকলেও বৃহত্তর মানসের পরিধি এখন ৫০ হাজার হেক্টর ছাড়িয়েছে। বন দফতর সূত্রে খবর, মানস কর্তৃপক্ষ দু’টি দাবির স্বপক্ষে যা প্রমাণ দাখিল করেছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা তাতে খুশি নন। তবে আশার কথা, ভারত-ভুটান মিলিয়ে বৃহত্তর মানসকে ঐতিহ্যক্ষেত্রের আওতায় আনার উদ্যোগে এতদিনে ভুটানের সম্মতি মিলল।
ভুটানের আবেদনে বলা হয়েছে ১০৫৭ বর্গ কিলোমিটারের রয়্যাল মানস জাতীয় উদ্যান প্রাণী ও উদ্ভিদ সম্পদে সমৃদ্ধ। এখানকার অরণ্যে, বাঘ, চিতাবাঘ, মেঘলা চিতাবাঘ-সহ ৮টি ক্যাট প্রজাতির দেখা মেলে, যা বিশ্বে বিরল। ভুটান বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, এখানকার প্রতি ২৫ বর্গ কিলোমিটারে একটি রয়্যাল বেঙ্গল রয়েছে। ক্যামেরা সুমারিতে মানস অরণ্যের দুই পাড় মিলিয়ে ১৪টি বাঘ মিলেছিল। অসমের বনকর্তা ও প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই দেশ মিলিয়ে একটি সমগ্র অরণ্য বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের তালিকায় ঢুকলে সেখানকার প্রাণী সংরক্ষণ, সুমারি-সহ সব ক্ষেত্রেই অনেক সুবিধা মিলবে।
রবিবার থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গে বিশ্ব ঐতিহ্য (হেরিটেজ) কমিটির ৩৬ তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। সেখানে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা ও রাজস্থানের পাহাড়ি কেল্লাগুলিকেও বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রে ঢোকানোর জন্য জোর সওয়াল করবে ভারত। এই সঙ্গেই অসমের মানস জাতীয় উদ্যানের নাম বদল ও এলাকা বৃদ্ধির ব্যাপারটি নিয়েও অধিবেশনে আলোচনা হবে। |