নিজস্ব সংবাদদাতা • শ্রীরামপুর |
হুগলি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে ৬ জন নতুন মুখকে জায়গা দিল সিপিএম। তাঁদের মধ্যে অন্তত চার জন ‘ডাকাবুকো’ নেতা বলেই নিজের নিজের এলাকায় পরিচিত। গত বিধানসভা নির্বাচনে হুগলিতে সিপিএমের শোচনীয় ফল হয়। দুর্বল সংগঠনকে চাঙ্গা করে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জেলায় দলকে ঘুরে দাঁড় করাতেই একাধিক ‘নতুন মুখ’ সামিল করা হল বলে মনে করছেন দলের একাংশ।
মঙ্গলবার শ্রীরামপুরে দলীয় কার্যালয়ে নতুন সম্পাদকমণ্ডলীর তালিকা চূড়ান্ত হয়। উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য এবং রবীন দেব। সাংগঠনিক ভাবে এই তিন রাজ্যনেতা হুগলি জেলার দায়িত্বে রয়েছেন। দল থেকে বহিস্কৃত অনিল বসু স্বভাবতই জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে থেকে ছিটকে গিয়েছেন। ওষুধ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রাক্তন জেলা সভাপধিপতি অসিত পাত্রেরও ঠাঁই হয়নি নতুন সম্পাদকমণ্ডলীতে। বয়সের কারণে আগেই জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব ছেড়েছেন বিনোদ দাস।
বৈঠকের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে দলের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “নতুন-পুরনো মিশিয়ে ১৬ জনের সম্পাদকমণ্ডলী গঠন করা হয়েছে। |
রাজ্য জুড়ে প্রতিকূল পরিবেশে পার্টি এবং বামপন্থীদের কাজ করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অনুকুল উপাদান খুঁজে বের করে আগামী দিনে লড়াই করার জন্য এই সম্পাদকমণ্ডলী, জেলা কমিটি, দলের বিভিন্ন স্তরের কমিটিগুলি এবং পার্টিকর্মীরা দায়িত্ব পালন করবেন।” সুদর্শনবাবু জানান, নতুন যাঁদের সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন, বিনয় দত্ত, স্নেহাশিস রায়, দুলাল ভৌমিক, রামকৃষ্ণ রায়চৌধুরী, দেবব্রত ঘোষ এবং পরিতোষ ঘোষ।
সিপিএম নেতৃত্ব দলের সব স্তরের কর্মীকে জোটবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের ডাক দিলেও, বহিস্কৃত নেতা অনিল বসুর ছায়া থেকে দল কতটা বেরিয়ে আসতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে দলের অন্দরেই। গোটা জেলার মতোই দীর্ঘদিনের ‘লালদুর্গ’ আরামবাগ মহকুমাতেও সিপিএম এখন যথেষ্ঠই কোণঠাসা। ‘তৃণমূলের অত্যাচারে’ দলের বহু নেতা-কর্মী ঘরছাড়া বলে সিপিএমের অভিযোগ। তার উপর, অনিল বসুকে দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। গোঘাটের প্রভাবশালী নেতা অভয় ঘোষ জেলহাজতে। সিপিএম সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে প্রাক্তন বিধায়ক বিনয় দত্ত এবং অপর এক অভিজ্ঞ নেতা মোজাম্মেল হোসেনের উপর নির্ভর আরামবাগ মহকুমায় ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে দল। মোজাম্মেল আগেও ছিলেন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে। এ বার ফের তাঁকে সামিল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আনা হয়েছে বিনয়বাবুকেও। একই কারণে, তারকেশ্বর জোনাল কমিটির সদস্য স্নেহাশিস রায়কে জায়গা দেওয়া হয়েছে সম্পাদকমণ্ডলীতে। দলীয় সমীকরণে তিন জনেই কোনও না কোনও সময়ে অনিল বসুর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত ছিলেন দলে।
দুলাল ভৌমিকের নামেও হরিপালে এক সময়ে ‘বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত’। তাঁকেও আনা হল জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে। জেলায় একমাত্র পাণ্ডুয়া বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে সিপিএমের হাতে। সেখানকার জোনাল কমিটির সম্পাদক রামকৃষ্ণ রায়চৌধুরীকেও সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়া হয়েছে।
দল সিঙ্গুরে আন্দোলনে নামবে বলে সিপিএম সূত্রে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, দলের নেতাকর্মীরা ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক নিরপেক্ষে সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বিমানবাবু বলেন, “সিঙ্গুর নিয়ে জেলা কমিটি আন্দোলন করবে।” সুদর্শনবাবু বলেন, “চলতি জোট সরকারের একগুঁয়েমির ফলে সিঙ্গুরের জমি নিয়ে আদালতে জট পাকিয়ে উঠেছে। তার ইতিবাচক সমাধান বের করে কৃষকদের কষ্ট দূর করা এবং ওখানে শিল্পস্থাপন করে সকলের স্বপ্ন সফল করতে হবে। সরকারকে বলছি সকলের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। বিরোধীদের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তা গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। সিঙ্গুর নিয়ে আন্দোলনের রূপরেখা স্থির করতে আমরা আলোচনায় বসব।” সুদর্শনবাবুর মন্তব্য, “বর্তমান সরকারের আইন-কানুন সম্পর্কে কাণ্ডজ্ঞানহীনতা, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। আশা করি, সংকীর্ণ রাজনীতির বাইরে এসে সরকার সিঙ্গুর তথা রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। তা যদি ওঁরা না নেন, তা হলে সাধারণ মানুষকেই সঠিক রাস্তা বেছে নিতে হবে।” |