নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দলের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই আগামী ৩ জুলাই সিঙ্গুরে জমিদখল অভিযানের কথা ঘোষণা করলেন প্রবীণ সিপিএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা। এবং তা-ও করলেন অন্য সংগঠনের মঞ্চ থেকে। ‘রবাহূত’ হিসেবে।
একইসঙ্গে অবশ্য রেজ্জা বলেছেন, “যাওয়ার আগে দলের সঙ্গে কথা বলব। তবে দল যা-ই বলুক, আমার যাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না।” তাঁর কথায়, “কবিগুরু বলেছেন, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে..। একজন কৃষক নেতা হিসাবে আমি সেখানে যেতেই পারি।” রেজ্জাকের দাবি, ‘সিঙ্গুরের দখল নাও’ (অকুপাই সিঙ্গুর) রাজ্যের এখন সবচেয়ে আলোচ্য বিষয়। সকলকে দখল অভিযানে সামিল হওয়ার আবেদন জানিয়ে রেজ্জাক বলেন, “আমরা সবাই মিলে ঝেঁটিয়ে সিঙ্গুর যাব।” তবে কী ভাবে যাবেন, তা রেজ্জাক গোপন রেখেছেন। সব জানিয়ে দিলে পুলিশ তাঁকে যদি পথে আটকায়!
সিপিআই (এমএল) লিবারেশন-সহ বিভিন্ন বামপন্থী দলের যুক্ত সংগঠন ‘সারা ভারত বাম সমন্বয় আয়োজিত ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ শীর্ষক এক কনভেশনে মঙ্গলবার রেজ্জাক বক্তৃতা করেন। সেখানেই তিনি ওই ঘোষণা করেন। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের পর সিপিএম বা কৃষকসভার তরফে এখনও পর্যন্ত সিঙ্গুর নিয়ে কোনও কর্মসূচির সমর্থন বা বিরোধিতা করা হয়নি। তিনি কি কৃষকসভার সঙ্গে কথা বলবেন? রেজ্জাকের জবাব, “আমি নিজেই তো কৃষক সভার নেতা! আবার কার সঙ্গে কথা বলব?” বিভিন্ন বাম ও নকশালপন্থী সংগঠনও রেজ্জাকের সঙ্গে ৩ জুলাইয়ের অভিযানে সামিল হওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এ ব্যাপারে কৃষকসভার রাজ্য সভাপতি তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মদন ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিশদ কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি। তাঁর কথায়, “কিছু বলার থাকলে রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলবেন।” অর্থাৎ, রেজ্জাক কত দূর যেতে পারেন, প্রথমে আলিমুদ্দিন তা দেখতে চায়।
গত বছর লিবারেশনের এক সভায় রেজ্জাককে বক্তা হিসাবে আমন্ত্রণ করা হয়। তিনি যাওয়ার আশ্বাস দিয়েও বিমানবাবুর সঙ্গে কথা বলে শেষ মুহূর্তে যাত্রা স্থগিত রেখেছিলেন। কিন্তু দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে স্থান না-পাওয়ায় রেজ্জাক আরও ‘বেপরোয়া’, তা তাঁর এ দিনের সভায় যোগদান থেকে স্পষ্ট। যে সভার প্রস্তাবে বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনের কড়া সমালোচনা হয়েছে এবং লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য থেকে আরম্ভ করে পাহাড়ের সিপিআরএমের নেতারা বামফ্রন্টকে তুলোধোনা করছেন, সেখানে রেজ্জাকের উপস্থিতি যথেষ্ট ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
আরও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ তাঁর ব্যাখ্যা আগের বার দলের আপত্তিতে আসতে পারেননি। তাই এ বার কারও কাছে অনুমোদন নেননি। তাঁর কথায়, “কলেজ স্ট্রিটে হাঁটছিলাম। শ্রোতা হিসাবে সভায় ঢুকে পড়লাম। ওঁরা বক্তৃতা করতে বললেন। তাই দু’কথা বললাম!” তবে তিনি যে ঝুঁকি নিয়ে সভায় এসেছেন, তা বক্তৃতার শুরুতেই রেজ্জাক স্পষ্ট করে দিয়ে বলেন, “স্রোতের বিপরীতে হাঁটতে গেলে ঝুঁকি নিতেই হবে! ঝুঁকি নিয়েই এই সভায় এসেছি।” সভায় গৃহীত প্রস্তাব ও বামফ্রন্টের সমালোচনাকে তিনি কী ভাবে দেখছেন? রেজ্জাকের জবাব, “কিছু সমালোচনা-সহ প্রস্তাবকে সমর্থন করি। আর বৃহৎ বাম ঐক্য চাই বলেই বসে থেকে সমালোচনা শুনেছি।” |