বি জে পি’র একমাত্র উপায়...(৭/৬) প্রকাশিত আমার নিবন্ধের প্রেক্ষিতে তথাগত রায়ের পত্রটি (১৩/৬) পড়লাম। জনসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার সময়ে শ্যামাপ্রসাদ যে গোলওয়ালকরের সার্বিক সমর্থন পাননি তা জেনেছি গোলওয়ালকরের লেখা পড়েই। ওই নিবন্ধে আছে যে, ১৯৫১, ২১ অক্টোবর জনসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হলেও এবং তাতে আর এস এস প্রচারকদের ভূমিকা থাকলেও ২৯ অক্টোবর সঙ্ঘের ইংরেজি মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’-এ সরসঙ্ঘচালক গোলওয়ালকর লেখেন, ‘ইন দ্য কামিং জেনারেল ইলেকশনস দ্য আরএসএস উইল নট ব্যাক দ্য হিন্দু মহাসভা অর এনি আদার পলিটিক্যাল পার্টি ইন পার্টিকুলার। ইন দ্য ড্রামা অফ ইলেকশনস উই শ্যাল বি মেয়ার স্পেকটেটরস। দ্য স্বয়ং সেবক আর ফ্রি টু ডু অ্যাজ দে প্লিজ।’
দ্বিতীয়ত, শ্রীরায় বংশীলাল সোনির কাছে ‘শুনেছেন’ যে, কলকাতায় ১৯৫০-এ গোলওয়ালকর শ্যামাপ্রসাদকে সাহায্যের অঙ্গীকার করেন। বস্তুত শ্যামাপ্রসাদ ১৯৪৯-’৫০-এ একাধিক বার নাগপুরেই ‘শ্রীগুরুজি’র সঙ্গে বৈঠক করেন। গোলওয়ালকর লিখেছেন, ‘ওয়ান অব মাই ওল্ড কলিগস হু হ্যাড ডেভেলপড এ লাইকিং ফর পলিটিক্যাল ওয়ার্ক টু আ ডিগ্রি আনকমন অ্যান্ড আনডিজায়ারেবল ফর আ স্বয়ংসেবক অফ দ্য আর এস এস, শ্রীবসন্ত রাও ওক, ওয়াজ ইন ক্লোজ কনট্যাক্ট উইথ হিম ফর আ লং টাইম অ্যান্ড হিজ অ্যাসোসিয়েশন সিমস টু হ্যাভ প্রমটেড ড. মুখোপাধ্যায় টু সিক মাই কো-অপারেশন অ্যান্ড হেল্প ইন দ্য ম্যাটার। ন্যাচারালি আই হ্যাড টু ওয়ার্ন হিম দ্যাট দ্য আর এস এস কুড নট বি ড্রন ইন টু পলিটিক্স, দ্যাট আই কুড নট প্লে সেকেন্ড ফিডল টু এনি পলিটিক্যাল অর আদার পার্টি...’ (অর্গানাইজার, ২৫ জুন, ১৯৫৬)। তথাপি আর এস এস প্রচারকদের তিনি জনসঙ্ঘ গঠনে অনুমতি দেন। অর্থাৎ তিনি সমর্থনও করেননি, বিরোধিতাও করেননি।
তৃতীয়ত, শ্রীরায় লিখেছেন, ‘শ্যামাপ্রসাদ তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, হিন্দু মহাসভার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন। ...শ্যামাপ্রসাদ একটা পার্টি খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন’। এটি ভুল। শ্যামাপ্রসাদ যখন পার্টি খুঁজছিলেন, এবং সঙ্ঘ প্রচারকরা সাহায্যে এগিয়ে আসেন, সেটি ১৯৫১ সাল। নেহরু-লিয়াকত চুক্তির বিরোধিতায় তিনি ১৯৫০-এর ৬ এপ্রিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। হিন্দু মহাসভার সঙ্গে তাঁর ‘সম্পর্কচ্ছেদ’ হয় ১৯৪৮, গাঁধী হত্যার পরেই। শ্যামাপ্রসাদ মহাসভার দরজা সমস্ত সম্প্রদায়ের জন্য খোলা রাখতে চেয়েছিলেন, গাঁধী হত্যারও কঠোর নিন্দা করেছিলেন। তা থেকেই সংঘাত শুরু। হিন্দুত্ববাদীরা কখনওই তাঁকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৫৪ থেকে মূলত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের পরামর্শে আরএসএস ও জনসঙ্ঘ গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিদ্যার্থী পরিষদ ১৯৪০-এর দশকে তৈরি হলেও সঙ্ঘ পরিবার গড়ে ওঠে ১৯৫৫-তে ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ এবং ১৯৬৪-তে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ প্রতিষ্ঠার সূত্রে।
চতুর্থত, শ্রীরায় লিখেছেন, ‘কে আর মালকানি দলের ম্যানিফেস্টো রচনা করেননি। রচনা করেন বলরাজ মাধোক (‘মাধব’ আমি লিখিনি, ওটি মুদ্রণপ্রমাদ)। বস্তুত মালকানি প্রথম ম্যানিফেস্টোটি লেখেন। শ্যামাপ্রসাদ তার মুখবন্ধও লেখেন। ‘প্রিন্সিপালস ফর এ নিউ পলিটিক্যাল পার্টি’ নামে পুস্তিকাটি দিল্লির বিজয় পুস্তক ভাণ্ডার, ১৯৫১ সালে প্রকাশ করে। মাধোক মূলত সাংগঠনিক দিকটি দেখতেন। আরএসএস-এর বিক্ষিপ্ত সহযোগিতায় হতাশ শ্যামাপ্রসাদ প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে জনসঙ্ঘ গড়েন। ১৯৫১-র ২৩ এপ্রিল। ২৭ মে মাধোক পঞ্জাব ও দিল্লির জনসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। অবশেষে ২১ অক্টোবর ‘ভারতীয় জনসঙ্ঘ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। শ্যামাপ্রসাদ হন সভাপতি। যদিও তিনি কোনও দিনই আরএসএস-এর সদস্যপদ গ্রহণ করেননি। এখানেই ‘দ্বৈত সদস্যপদ’ প্রশ্নে শ্যামাপ্রসাদের প্রাসঙ্গিকতা।
পঞ্চমত, তরুণ তুর্কিরা যে ‘গুরুজি’র সঙ্গে তর্কে মেতেছিলেন, তা সেই সময়ের ‘অর্গানাইজার’-এ চোখ বোলালেই বোঝা যায়। মালকানি (ছদ্মনাম কমল), মাধোক বা পরমেশ্বরণ সরাসরি আরএসএসের রাজনীতি-বিমুুখতার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। তাকে ‘তর্ক’ না-বলে ‘মতভেদ’ বললে আপত্তি নেই।
ষষ্ঠত, ‘গোলওয়ালকর আরএসএসের দ্বারা রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন’এমন বাক্য আমি মোটেই লিখিনি। আমি লিখেছি, “‘সামাজিক’ হিন্দুত্বের ধারণা আঁকড়ে তিনি ‘রাজনৈতিক’ ভারতকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। তাই দলীয় অবস্থান তাঁর চিন্তায় বিশেষ গুরুত্ব পায়নি।” গোলওয়ালকরের রচনা পাঠ করে এটি আমার গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত। শ্রীরায় একমত না-ই হতে পারেন।
আর, দীনদয়াল উপাধ্যায়কে হত্যা করা হয়েছিল, সরকার তা কখনও স্বীকার করেনি।
উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা-৭৮ |