সম্পাদকীয় ২...
বল গুরুঙ্গের কোর্টে
গোর্খা আঞ্চলিক প্রশাসনের (জিটিএ) নির্বাচনের দিন ঘোষিত হইয়াছে। গোর্খা পার্বত্য পরিষদের প্রয়াণের পর পার্বত্য দার্জিলিঙে দীর্ঘ কাল ধরিয়া জনপ্রতিনিধিত্বহীন যে প্রশাসন চলিতেছে, তাহার অবসান ঘটাইয়া সেখানে প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনপ্রণালী কায়েম করাই এই ঘোষণার লক্ষ্য। কেননা গণতন্ত্রে জেলাশাসক, মহকুমাশাসক কিংবা বিডিওদের শাসন নয়, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শাসনই বহাল হওয়া উচিত। আসন্ন নির্বাচনে পার্বত্য দার্জিলিঙের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা অংশগ্রহণ করিবে, ইহা প্রত্যাশা করা অন্যায় নয়। কেননা সুবাস ঘিসিং ও তাঁহার নেতৃত্বাধীন জিএনএলএফ-এর ‘অপশাসন’-এর অবসান ঘটাইয়া বিমল গুরুঙ্গের মোর্চাই নূতন করিয়া গোর্খা স্বশাসনের রূপরেখা রচনার আন্দোলন করিয়াছিল।
মোর্চা নেতৃত্ব অবশ্য পার্বত্য দার্জিলিঙের তিনটি মহকুমা ছাড়াও তরাই ও ডুয়ার্সের ৩৯৬টি গোর্খা-অধ্যুষিত মৌজা বা গ্রামকেও স্বশাসনের এলাকা জিটিএ-র অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাইয়াছিলেন। সে দাবির প্রেক্ষিতে গোর্খা-গরিষ্ঠতার মৌজাগুলি শনাক্ত করিতে রাজ্য সরকার যে কমিটি গড়িয়া দেয়, তাহা মাত্র পাঁচটি মৌজার অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করে। তাহাতে পার্বত্য দার্জিলিঙে যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়, মোর্চা নেতৃত্ব যে রূপ হুমকি দিতে থাকেন, তাহা প্রশমিত করিতে ওই সুপারিশের যাথার্থ্য পরীক্ষা করিতে আবার একটি কমিটি গড়া হইয়াছে। তাহার পরে-পরেই জিটিএ-তে নির্বাচনের নির্ঘণ্টও প্রকাশিত। বিমল গুরুঙ্গ অবশ্য দিল্লি পাড়ি দিয়াছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহিত তাঁহার আলোচনা আছে। তিনি যে শেষ মুহূর্ত অবধি দরকষাকষি করিয়া জিটিএ-র এলাকা ও এক্তিয়ার যথাসম্ভব বাড়াইয়া লইতে চাহিবেন, ইহা অস্বাভাবিক নয়, অন্যায়ও নয়। জনজাতীয় আত্মশাসনের আন্দোলন এ ভাবেই জনজাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সহিত দরকষাকষি করিয়া থাকে। নির্বাচন বয়কটের হুমকি কিংবা পাহাড়ে অচলাবস্থা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ভীতিপ্রদর্শনও আন্দোলনের কৌশলেরই অঙ্গ। রাজ্যের প্রশাসন ও জনসাধারণ এ সবে অভ্যস্ত। কিন্তু গোল বাধিতে পারে মোর্চা নেতৃত্ব নির্বাচন হইতে সরিয়া দাঁড়াইলে।
পার্বত্য দার্জিলিঙে বিমল গুরুঙ্গের মোর্চা সর্বাধিক শক্তিশালী সংগঠন হইলেও একমাত্র সংগঠন নয়। গোর্খা লিগ ও কংগ্রেস ছাড়াও সাবেক বামপন্থীদের সংগঠন ক্রমশ নিজেদের সংহত করিতেছে। সুবাস ঘিসিংয়ের জিএনএলএফ-ও আবার ভাসিয়া ওঠার চেষ্টায়। তা ছাড়া গুরুঙ্গের একগুঁয়েমিতে বিরক্ত অন্য মোর্চা নেতারাও রহিয়াছেন। সর্বোপরি আছেন পাহাড়ের মানুষ, ধারাবাহিক আন্দোলন ও অচলাবস্থায় যাঁহাদের রুজি-রুটিতে টান পড়ে, যাঁহারা ক্লান্ত, বীতশ্রদ্ধ, যাঁহারা পাহাড়ে উন্নয়ন চান, বিনিয়োগ চান, নিদেনপক্ষে পানীয় জল, বিদ্যুৎ, প্রাথমিক চিকিৎসা, রাস্তাঘাটের পরিকাঠামো চান, আর চান সমতল হইতে রাশি-রাশি পর্যটক। জনসাধারণের এই চাহিদার বিপরীত পথে হাঁটিতে যাওয়া মোর্চা নেতৃত্বের পক্ষে বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তরাই-ডুয়ার্সের সমস্যা মীমাংসা করার সময় পরেও পাওয়া যাইবে। সেখানে বহুসংখ্যক গোর্খা যেমন ছড়াইয়া-ছিটাইয়া আছেন, তেমনই বাস করেন সমতলের আদিবাসী ও বাগিচা-শ্রমিকদের অসংখ্য পরিবারও। বল এখন বিমল গুরুঙ্গ তথা মোর্চা নেতৃত্বের কোর্টে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.