উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। অসমে কার্যত দুই ভাগ হয়ে যেতে বসেছে মাজুলি দ্বীপ। ভাঙছে একের পর এক বাঁধ। ভেসে গিয়েছে ষাট কোটি টাকা ব্যয়ে লাগানো জিও টিউব। প্রবল বর্ষণে গুয়াহাটিতেও বহু এলাকা জলে ভাসছে। বন্যায় অরুণাচলের অবস্থাও শোচনীয়। মেঘালয়েও বন্যা ও ধসের প্রকোপ শুরু হয়েছে। তিন রাজ্যেই মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে বহু এলাকা।
কাল রাতে দুটি বাঁধ ভেঙে শিবসাগরের দিখৌমুখে জল ঢুকে পড়ে। রাজ্যের তিনটি জাতীয় উদ্যান কাজিরাঙা, ডিব্রু শইখোয়া ও ওরাং জলমগ্ন। ডুবেছে লাউখোয়া-বুড়াচাপোড়ি ও পবিতরাও। সব থেকে শোচনীয় অবস্থা ধেমাজির। এখানে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামবাসীর সংখ্যা প্রায় লাখ ছুঁয়েছে। নামডাং ও বেডলং-এর মধ্যে ১০০ মিটার বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। ডিব্রুগড়ের রৌমারিয়ায় ৬০ কোটি টাকা খরচ করে বানানো জিও টিউব ভেসে গিয়েছে। রৌমারিয়ায় ১২০০ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মাজুলিতে ব্রহ্মপুত্র বিপদসীমার দুই মিটার উপরে দিয়ে বইছে। বন্ধ নৌকা চলাচল। শিবসাগরের দিখৌমুখে বন্যার জলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছে পল্লবী পাংগিং নামে তিন বছরের একটি শিশু। আজান পিরের দরগাও বিপজ্জনক অবস্থায়। ডিব্রুগড়ে,জলে ডুবে একটি হস্তিশাবক মারা গিয়েছে। তিনসুকিয়ার ডুমডুমায় ১৬০টি গ্রাম বানভাসি। উজানি অসমের অধিকাংশ এলাকায় স্কুলের পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। ডিমা হাসাও জেলার মহাদেব টিলায় ধস নেমে তিনটি পরিবারের দুইজন মহিলা মারা যান। জখম হন আরও পাঁচজন। শিলচরের সঙ্গে গুয়াহাটি ও ডিমা হাসাওয়ের যোগাযোগও বন্ধ। কাছাড় হাইলাকান্দি, করিমগঞ্জেও বন্যার প্রকোপ চলছে।
নাগাড়ে বৃষ্টির জেরে গুয়াহাটি মহানগরও জলমগ্ন। একশো মিটার দূরত্ব পার করতেও রিকশাচালকরা একশো টাকা হাঁকছেন। ফাটাশিল, অনিলনগর, তরুণনগর, লাচিতনগর, লালগণেশ, রাজগড়, জু রোড, বোড়া সার্ভিস-সহ শহরের নানা এলাকায় বাসিন্দারা গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। পরীক্ষার্থীদের অবস্থা করুণ। এ দিন ফের শহরের নুনমাটি ও ধীরেনপাড়ায় ধস নামে। তার মধ্যেই, শিলসাঁকো বিলে রাতভর টাকার সন্ধান করেছেন মানুষ। জলে ডুবে একজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসন এলাকাটি ঘিরে দিয়েছে।
অন্যদিকে, মেঘালয়ে গারো পাহাড়ের আসানাংগ্রে এলাকায় নির্মীয়মান ৫১ নম্বর জাতীয় সড়ক বৃষ্টি ও ধসে ভেঙে গিয়েছে। ফলে তুরা ও পাইকানের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। রবিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে গারো পাহাড়ের নানা অংশে ধস নামছে। শিলং ও গুয়াহাটি থেকে তুরা অভিমুখে আসা সব গাড়ি আসানাংগ্রেতে দাঁড়িয়ে পড়ে। গানোল নদী ফেঁপে উঠে গারোবান্ধা ভাসাচ্ছে। অরুণাচলের নমনি দিবাং উপত্যকা, আনিনি, চাংলাং, আনজাও কার্যত অগম্য। রোয়িং আসতে গেলে নামসাই ও তেজুর দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। বরদুমসা, বিজয়পুরে অবস্থার উন্নতি হয়নি। নামসাইতে নোয়া ডিহিং নদীর তোড়ে সেনাবাহিনীর দুটি মোটর বোট ও পূর্ত দফতরের তিনটি নৌকা ভেসে গিয়েছে। শিবরিমুখ, কামলাং, বেরেং, মরা কামলাং, তুতিং নদীও বিপদসীমা পার করেছে। |