সাড়ে পাঁচ দশক আগে অধিগৃহীত জমি পুনর্দখলে নামল উপজাতি জমি-মালিকদের উত্তরপুরুষরা। দীর্ঘ মামলায় ঝুলে থাকা ২১৮ একর জমিতে লাঙল দিল তারা। এ ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের নয়, প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ডের। এ বার জমি অধিগ্রহণ-বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে সামিল হল রাঁচির আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা নাগরি।
সরকারি সূত্রের খবর, ১৮৯৪-এর জমি অধিগ্রহণ আইনে ১৯৫৭-৫৮ সালে, তৎকালীন অবিভক্ত বিহার প্রশাসন নাগরি এলাকায় ২১৮ একর জমি অধিগ্রহণ করে। কিন্তু গোল বাধে অধিগ্রহণের গোড়া থেকেই। আদিবাসীদের জমির অধিকার সুনিশ্চিতকরণের জন্য ইংরেজ আমলে তৈরি রক্ষাকবচ, ছোটনাগপুর টেনেন্সি অ্যাক্ট (সিএনটি অ্যাক্ট) কার্যকর করার দাবি ওঠে তখনই। যার জেরে জমির ক্ষতিপূরণের টাকা নিতে অস্বীকার করেন উচ্ছেদ হওয়া অধিকাংশ কৃষক।
উল্লেখ্য, ওই সময় জমির দাম ধার্য হয়েছিল একর প্রতি ৮০০ টাকা। সেই টাকার সিংহভাগ এখনও জমা রয়েছে সরকারি তোষাখানাতেই। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালতে গড়ায়। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ২০১২ সালে ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টের রায় কৃষকদের বিরুদ্ধে যায়। উচ্ছেদ হওয়া কৃষকদের তরফে আবেদন করা হয় সুপ্রিম কোর্টে। আগামী ২৮ জুন বিষয়টি শীর্ষ আদালতে ওঠার কথা বলে জানান উচ্ছেদ-বিরোধী আন্দোলনের নেতা তথা নির্দল বিধায়ক বন্ধু তিরকে। আদিবাসী জনজাতির এই আন্দোলনে সামিল রাজ্য সিপিএমও। জোটবদ্ধ হয়েছে বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনও।
সিএনটির পক্ষে এত দিন জোর সওয়াল করলেও নাগরি প্রসঙ্গে ওই আইন নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি রাজ্যের ভূমি-রাজস্ব মন্ত্রী তথা ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা নেতা মথুরাপ্রসাদ মাহাতো। বলেন, “ওই বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। তাদের নির্দেশ মতোই কাজ করব।”
সরকারি সূত্রের খবর, মামলার দীর্ঘসূত্রিতায় ঝুলে থাকা নাগরির ওই জমি নিয়ে এতদিন রাজ্য সরকার বিশেষ এগোয়নি। কিন্তু সম্প্রতি ওই জমি বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। স্থির হয়, তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য ওই জমি ব্যবহার করা হবে। অধিগৃহীত ২১৮ একর জমির মধ্যে ৭৬ একরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম), ৭৫ একরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইআইটি) এবং ৬৭ একরে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ স্টাডি অ্যান্ড রিসার্চ ইন ল (এনইউএসআরএল) গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই সিদ্ধান্তেই আগুনে ঘি পড়ে। শুরু হয় উচ্ছেদ-বিরোধী আন্দোলন। উচ্ছেদ হওয়া প্রায় দু’শো কৃষক পরিবার গত রবিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে নিরাপত্তারক্ষীর ঘেরাটোপে থাকা অধিগ্ৃহীত ২১৮ একরে চাষাবাদ শুরু করে। লাঙল দিয়ে জমি চষেও ফেলা হয়েছে। ঘটনাস্থলে থাকলেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল পুলিশ। ফলে ওই জমিতে লাঙল চালাতে কোনও বাধার মুখে পড়তে হয়নি কৃষকদের। আজ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক গোপীকান্ত বক্সি রাখঢাক না-করেই বলেন, “দলগত ভাবে আমরা নাগরির উচ্ছেদ হওয়া আদিবাসী কৃষকদের আন্দোলনের পক্ষে। সমস্ত আইন অগ্রাহ্য করে ওই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ছোটনাগপুর টেনেন্সি আইনও মানা হয়নি।” তবে নাগরির সঙ্গে সিঙ্গুরকে একাসনে বসাতে রাজি নন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। তাঁর কথায়, “সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন আর নাগরির চাষিদের উচ্ছেদ-বিরোধী আন্দোলন কোনও অবস্থাতেই এক নয়। নাগরির আন্দোলনের প্রধান অস্ত্র আদিবাসীদের জমির অধিকার রক্ষার আইন, সিএনটি অ্যাক্ট। দলগত ভাবে রাজ্য সিপিএম সিএনটি আইন কার্যকর করার পক্ষে।” একই দাবি উচ্ছেদ-বিরোধী নেতা তথা নির্দল বিধায়ক বন্ধু তিরকেরও। |