আগামী মাসের গোড়ায় ভারত-পাকিস্তান বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠকের আগে আবু হামজার গ্রেফতার নয়াদিল্লির হাতে বাড়তি অস্ত্র তুলে দিয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, মুম্বই হামলা নিয়ে হামজার কাছ থেকে পাওয়া বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে নিয়েই ৪ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ওই বৈঠকে বসতে পারবে ভারত। ফলে ইসলামাবাদের উপর চাপ অনেকটাই বাড়বে। অবশ্য নয়াদিল্লি ভালই জানে, হামজার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করতে না পারলেও এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে ইসলামাবাদ। এখন থেকেই ‘উপযুক্ত প্রমাণ’-এর প্রশ্ন তুলে সে চেষ্টা শুরুও করেছে তারা।
পাকিস্তান যা-ই করুক, সৈয়দ জাবিউদ্দিন ওরফে আবু হামজা ওরফে আবু জিন্দলের কাছ থেকে মুম্বই হামলা সম্পর্কে সব রকম তথ্য জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গোয়েন্দারা। মুম্বই পুলিশ তাকে হেফাজতে চেয়ে ইতিমধ্যেই তিস হাজারি আদালতে আর্জি জানিয়েছে। কাসভ এবং হামজাকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চায় তারা। তবে হামজাকে মুম্বই পুলিশের হাতে দেওয়ার ব্যাপারে মোটেই উৎসাহী নয় দিল্লি পুলিশ। আদালত হামজাকে ৫ জুলাই পর্যন্ত দিল্লি পুলিশের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সেই মেয়াদ বাড়িয়ে ২০ জুলাই পর্যন্ত বাড়াতে চায় দিল্লি পুলিশ।
তবে এই টানাপোড়েনের মধ্যে জেরার কাজ থেমে নেই। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ২৬টি নাম নিয়ে ঘুরে বেড়ানো আবু হামজা জেরায় জানিয়েছে, ২৬/১১-র হামলায় পাকিস্তানের সরকারি স্তর থেকেই মদত দেওয়া হয়েছিল। লস্করের শীর্ষ নেতা হাফিজ সইদ ওই ক’দিন কন্ট্রোল রুমে না থাকলেও ২৬/১১-র আগে এই হামলা নিয়ে যত বৈঠক হয়েছে, তার সব ক’টিতেই সে হাজির থাকত। করাচির কন্ট্রোল রুম থেকে হামজা ও লস্কর কম্যান্ডার জাকিউর রহমান লকভির পাশাপাশি দুই আইএসআই অফিসার মেজর সামির আলি ও মেজর ইকবাল নজর রাখছিল কাসভদের উপরে। হামজা জানিয়েছে, ২৬/১১-র ঘটনা ‘মনিটর’ করার জন্য করাচির কন্ট্রোল রুমে চারটি ফোন বসানো ছিল। কাসভদের হামলার জেরে মুম্বইয়ে আতঙ্ক যত বেড়েছে, করাচির কন্ট্রোল রুম তত খুশিতে ফেটে পড়েছে। তবে কাসভ ধরা পড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে লস্কর-কর্তাদের মধ্যে।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, মুম্বই হামলার পরে আইএসআই-এর সাহায্যে রিয়াসত আলির নামে ভুয়ো পাকিস্তানি পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়া হয় হামজাকে। ২৬/১১-র মতো ভারতে আরেকটি হামলার পরিকল্পনা তৈরি করতেই তাকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছিল। সেখানেই সে ধরা পড়ে।
বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, হামজার গ্রেফতারে আমেরিকারও পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে। রিয়াধের সঙ্গে এ ব্যাপারে গত ক’মাস ধরেই যোগাযোগ রাখছে ওয়াশিংটন। গত ১৩ জুন সে দেশে ভারতের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন কর্তারা এ ব্যাপারে ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। ওসামা বিন লাদেন-হত্যা পরবর্তী পর্যায়ে পাকিস্তানের সন্ত্রাস কারখানার বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যেই বারবার সরব হয়েছেন মার্কিন কর্তারা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়ানোর জন্য ‘বেশ কয়েকটি দেশ’ একযোগে ভারতকে সাহায্য করছে। এর মধ্যে যে সৌদি আরবও আছে। বিদেশ মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, গত দু’বছরে ভারত এবং সৌদির মধ্যে নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাস মোকাবিলা সংক্রান্ত বোঝাপড়া অনেকটাই বেড়েছে। অথচ, আগে এই সৌদির সঙ্গেই আইএসআই-এর যোগাযোগ যথেষ্ট মসৃণ ছিল। বেশ কয়েকটি কারণে সৌদি আরব নয়াদিল্লির পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। আমেরিকার চাপের পাশাপাশি ভারতের বিশাল শক্তিক্ষেত্রের দিকেও নজর রয়েছে তাদের। হামজা-প্রসঙ্গে এ দিন কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছেন মহারাষ্ট্রের শিক্ষা-প্রতিমন্ত্রী তথা এনসিপি নেত্রী ফৌজিয়া খান। তিনি বিধান পরিষদের সদস্য থাকাকালীন মন্ত্রালয়ের বিপরীতে বিধান পরিষদ সদস্যদের আবাসনে হামজাকে (তখন জাবিউদ্দিন) থাকার ব্যবস্থা করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। |