মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না পারলেও বিহারের জন্য ‘প্যাকেজ’ আদায় করে নিলেন নীতীশ কুমার। যাকে ভিন্ শিবিরের লোক হয়েও রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করার ‘প্রতিদান’ হিসেবেই দেখছেন দিল্লির রাজনীতির কারবারিরা।
রাজ্যের সড়ক পরিবহণের উন্নতি নিয়ে আজ কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী সি পি জোশীর সঙ্গে বৈঠক করেন নীতীশ। সেই বৈঠকে বিহারের জন্য একাধিক প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছেন তিনি। যোজনা আয়তন স্থির করতে আগামিকাল যোজনা কমিশনের সঙ্গে নীতীশের বৈঠক। প্রণববাবুকে সমর্থন করার প্রতিদানে যোজনা আয়তনেও ভাল রকম বৃদ্ধির আশা করছে বিহার।
এ দিনের বৈঠকে পটনা ও হাজিপুরের মধ্যে গঙ্গার উপর দু’হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নতুন সেতু নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়। রাজ্যের পক্ষ থেকে সেতুটি সরকারি-বেসরকারি অংশদারিত্বে বানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। জোশী সেই প্রস্তাব মেনে নেন। এই প্রকল্পটি ছাড়াও নেপাল সীমান্ত সংলগ্ন সড়কের মেরামতি, পটনা-মুজফফ্রপুর ও ভাগলপুর বাইপাস চওড়া করার কাজেও সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে কেন্দ্র। |
দিল্লির রাজনীতিকদের অনেকের মতে, রাষ্ট্রপতি পদে প্রণবকে যে মমতা সমর্থন জানাতে অস্বীকার করলেন, তার অন্যতম কারণ রাজ্যকে আর্থিক সাহায্যের প্রশ্নে কেন্দ্রের নেতিবাচক মনোভাব। তৃণমূল নেতাদের ক্ষোভ, রাজ্যের আর্থিক দুর্দশা কাটাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ করেনি প্রণবের মন্ত্রক। অথচ, এনডিএ-র শরিক হয়েও রাষ্ট্রপতি পদে ইউপিএ-র প্রার্থীকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আজ দিল্লিতে কার্যত বাজিমাত করলেন নীতীশ। সড়ক সংক্রান্ত দাবি তো মেটানো হয়েছেই, আগামী দিনে রাজ্যের অন্য সমস্যাগুলিও সহানুভূতির সঙ্গে দেখার আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্র। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “নীতীশ যে ভাবে প্রণববাবুর সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন, তাতে কেন্দ্রের কিছু দায়বদ্ধতা থাকে বিহারের প্রতি।” সেই মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটেছে সি পি জোশীর বৈঠকে।
নীতীশ এক দিকে প্রণবকে সমর্থন করছেন। আবার অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদীর প্রার্থী হওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে এনডিএ শিবিরে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। কংগ্রেসের পক্ষে সেটাও ভাল খবর। তবে অরুণ জেটলির মতো বিজেপি নেতাদের মতে, নীতীশ যে মোদীর বিরোধিতা করবেন, তা অজানা নন। কিন্তু কেন তিনি এনডিএ-সমর্থিত প্রার্থীকে ছেড়ে ইউপিএ-র প্রার্থীকে সমর্থন করতে গেলেন, তা এখনও বোধগম্য নয়।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পর্বের মধ্যেই নীতীশ যে ভাবে প্রধানমন্ত্রিত্বের বিষয়ে সরব হয়েছেন, সেটাকে মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। এর মধ্যে ভবিষ্যতে নীতীশের এনডিএ ছেড়ে চলে যাওয়ারও ইঙ্গিত দেখছেন তাঁরা। লালকৃষ্ণ আডবাণী, জেটলিরা নানা ভাবে নীতীশকে বোঝান, ভবিষ্যতের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি যা-ই হোক না কেন আপাতত বিজেপি এবং জেডিইউ হাতে হাত মিলিয়ে বিহারকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছে। সেই সময়ে এমন বার্তা দেওয়া উচিত নয় যে এনডিএ-তে ভাঙন ধরেছে। বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী রীতিমতো বিবৃতি জারি করে দল ও এনডিএ-র ‘বন্ধু’দের আহ্বান জানিয়েছেন, এনডিএ-র শরিকদের মধ্যে ভিন্ন মত থাকলেও একে অপরের অবস্থানকে সম্মান জানানো উচিত। এনডিএ সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে প্রকাশ্যে মত জানানো থেকে তাঁরা যেন বিরত থাকেন। মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী করার পক্ষে বিজেপি নেতা বলবীর পুঞ্জ প্রকাশ্যে সওয়াল করলে জেডিইউ নেতা শরদ যাদব গডকড়ীর কাছে নালিশ করেন। গডকড়ীর বিবৃতি তারই নিরিখে বলে মনে করা হচ্ছে। নীতীশ কুমার আজ দিল্লিতে ‘যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণা করলেও এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, ধর্মনিরপেক্ষ প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নে নিজের অবস্থান থেকে তিনি সরছেন না। |