রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে শাসক জোটের দুই শরিকের ‘চাপের রাজনীতি’ দেখা গেল মঙ্গলবার।
কোনও অঘটন না-ঘটলে ইউপিএ প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের রাষ্ট্রপতি পদে জয় নিশ্চিত। তা-ও মঙ্গলবার মহাকরণে প্রণব-প্রতিপক্ষ পূর্ণ সাংমাকে ‘সময় দিলেন’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংমাকে মমতা বা তৃণমূল নেতারা কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি। কিন্তু কংগ্রেসকে প্রয়োজনীয় ‘বার্তা’ দিয়ে রেখেছেন।
আবার এ দিনই দিল্লিতে প্রণববাবুর সঙ্গে দেখা করে ‘শুভেচ্ছা’ জানিয়েছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিমল গুরঙ্গ। এবং জল্পনা উস্কে দিয়েছেন, মোর্চার বিধায়করা প্রণববাবুর পক্ষে ভোট দিতে পারেন। ‘গোর্খা টেরিটোরিয়াল এরিয়া’ (জিটিএ) নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে আলোচনা করতে দিল্লি গিয়েছেন সপার্ষদ গুরঙ্গ। তার মধ্যে প্রণববাবুর সঙ্গে দেখা করা এবং প্রণববাবুরও তাঁদের ‘সময় দেওয়া’ তৃণমূলকে পাল্টা ‘চাপ’ দেওয়া বলেই মনে করা হচ্ছে। জিটিএ নিয়ে মমতা-গুরঙ্গ সম্পর্কে যখন কিঞ্চিৎ ‘চিড়’, তখন মোর্চার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে কংগ্রেস মমতাকে কিছুটা চাপে রাখতে চায়। |
মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎকে সাংমা ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করলেও তাঁকে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত দলনেত্রী জানাননি বলেই জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। তিনি বলেন, “সাংমা তৃণমূলের সমর্থন চেয়েছেন। দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে। আমরা দলে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত জানাব।” তবে তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, প্রণববাবুর বিরোধিতা করলেও মমতার পক্ষে সাংমাকে ভোট দেওয়া রাজনৈতিক দিক দিয়ে ঠিক হবে না। কারণ, সাংমাকে বিজেপি প্রকাশ্যেই সমর্থন জানিয়েছে। এ রাজ্যে মুসলিম ভোটের কথা মাথায় রাখলে মমতার পক্ষে ভোটদানে বিরত থাকাই সবচেয়ে ‘নিরাপদ’ হবে।
মমতা-সাংমার প্রায় ২৫ মিনিট বৈঠক হয়। এর পর মুকুলবাবু ও তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সুব্রত বক্সীকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিকদের সাংমা বলেন, “আমি মমতার সমর্থন চাইতেই এসেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী ও অন্য নেতাদের ধন্যবাদ আমাকে সময় দেওয়ার জন্য। আমাদের মধ্যে সাম্প্রতিক রাজনীতির নানা বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে।” রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মমতা তাঁকে সমর্থন করবেন বলে সাংমা ‘আশাবাদী’। তা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “চূড়ান্ত কথা এখনও হয়নি। ওঁদের দলে বৈঠকের পর আমাকে জানাবেন।”
অন্য দিকে, গুরঙ্গদের সঙ্গে বৈঠকের পরে প্রণববাবুর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, মোর্চার বিধায়কদের ভোট তাঁর পক্ষেই যাচ্ছে। ইউপিএ-র সঙ্গে মমতার দূরত্ব বৃদ্ধির সময় মোর্চার সমর্থনকে ‘গুরুত্ব’ই দিতে চাইছে কংগ্রেস। মোর্চার মাত্র চার জন (এক জন নির্দল মোর্চা-সমর্থিত) বিধায়ক থাকলেও তাঁদের ভোটকে সিপিএমের সমর্থনের মতোই ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রণব-শিবিরের বক্তব্য, মমতা যখন বিরোধিতা চালিয়ে যাচ্ছেন, তখন প্রণববাবুর নিজের রাজ্যে অন্যান্য দলের সমর্থন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তা তাদের ভোট সংখ্যা যতই কম হোক না কেন। এ দিন দেশের ‘ভাবী রাষ্ট্রপতি’-কে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর কথা বললেও তাঁরা প্রণববাবুকে ভোট দেবেন কি না, সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি গুরুঙ্গ। তাঁর বক্তব্য, “এটা ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎকার। প্রণববাবুও ভোটের কথা বলেননি। আমরাও ওই প্রসঙ্গে যাইনি।” তা হলে তাঁরা কাকে সমর্থন করবেন? তা-ও খোলসা করতে রাজি হননি গুরুঙ্গ। তাঁর বক্তব্য, এ বিষয়ে দলের মধ্যে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হবে। বিজেপি সাংমাকে সমর্থন জানিয়েছে। মোর্চার সমর্থনেই দার্জিলিং থেকে সাংসদ বিজেপি-র যশোবন্ত সিংহ। সোমবার দিল্লিতে যশোবন্তের সঙ্গে বৈঠক করেছেন গুরুঙ্গরা। তা বলে তাঁরা বিজেপি-র রাস্তাতেই হাঁটবেন, তা মানতে চাননি গুরুঙ্গরা। মোর্চা নেতাদের দাবি, বিজেপি-কে তাঁরা ‘বিষয়ভিত্তিক’ সমর্থন দিচ্ছেন। বিজেপি-র দিক থেকেও তাঁদের উপর সাংমাকে সমর্থনের কোনও ‘চাপ’ নেই। |