স্বপ্নের নারীকে আর যাই হোক, শাশুড়ি বলে ভাবতে কিঞ্চিৎ কষ্টই হয় ভক্তদের। কিন্তু ঘটনাটা সত্যি। ‘ড্রিম গার্ল’ এ বার শাশুড়িই হচ্ছেন বটে!
সোমবারই মুম্বইয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘সঙ্গীত’ হয়ে গেল। শুক্রবার হেমা-তনয়া এষার বিয়ে। কিন্তু সত্তর দশকের নস্টালজিয়া যাদের তাড়া করে ফেরে, সেই ভক্তহৃদয় বেদনায় ভারাক্রান্ত। হেমা মালিনীও কিনা ‘শাশুড়ি’! ‘বসন্তী’ও কিনা বৃদ্ধ হলেন!
সত্তর-আশির দশকে স্কুল পালিয়ে কত জন যে বড় পর্দায় একবার ছুঁতে চেয়েছেন স্বপ্নের পরীকে! কত বার যে নিঃশব্দে প্রেম নিবেদন করেছেন! ওই ডাগর চোখ আর মুক্তো ঝরা হাসির কাছে কত শত মন বন্দি হতে চেয়েছে! সেই হেমারও কন্যা-বিদায়ের পালা! |
‘সঙ্গীত’-এ ভরত-এষা। —নিজস্ব চিত্র। |
কাল ‘মেহন্দি।’ শুক্রবার বিয়ে। আর শনিবার ভোজসভা। তাই নিয়েই তোলপাড় গোটা মুম্বই। বচ্চন-পুত্রের বিয়ের পর মুম্বইয়ে এটাই নাকি সবথেকে বড় আয়োজন। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ, ধর্মগুরু রবিশঙ্কর, ঠাকরে-পুত্র উদ্ধব নব দম্পতিকে আশীর্বাদ করতে আসবেন। বীরু-বসন্তীর মেয়ের বিয়ে, ফলে থাকবেন ‘জয়’ অমিতাভ বচ্চনও। ধর্মেন্দ্রর প্রথম পক্ষের ছেলে সানি দেওল আসছেন। থাকছেন অভয় দেওলও। শুধু বিদেশে শু্যটিং থাকায় আসতে পারবেন না ববি।
তবে ধর্মেন্দ্র-হেমা মানে তো শুধু বলিউড নয়, রাজনীতির অলিন্দেও তাঁদের পদচারণা। রাজ্যসভায় হেমার মেয়াদ সবে শেষ হয়েছে। তিনি বিজেপির সক্রিয় সদস্য। ধর্মেন্দ্রও ২০০৪ সালে বিজেপির টিকিটেই বিকানের-এর সাংসদ ছিলেন। ফলে এষার বিয়ে নিয়ে উচ্ছ্বাস বিজেপি শিবিরেও। লালকৃষ্ণ আডবাণী আর তাঁর মেয়ে প্রতিভার উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। বিয়েতে কখন কোন শাড়ি পরা হবে, তাই নিয়ে দিল্লির পৃথ্বীরাজ রোডের বাড়িতে রীতিমতো তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
এ দিকে দলের সভাপতি নিতিন গডকড়ীর ছেলের বিয়ে হয়েছে সদ্য।
২ জুলাই দিল্লিতে সেই উপলক্ষে বড় আয়োজন। বিজেপি শিবিরে তাই একই হপ্তায় দু’-দু’টি হেভিওয়েট বিয়েবাড়ি। বিজেপির আর এক নেত্রী সায়না মুম্বইয়ের ফ্যাশন ডিজাইনার। তিনি গত কাল এষার ‘সঙ্গীত’ থেকে আজ নাগপুরে ছুটেছেন গডকড়ীর বাড়িতে। দু’টি বিয়ের ফ্যাশনের সম্ভারও সাজিয়ে ফেলেছেন।
বরাবরই কৃষ্ণের ভক্ত হেমা। তাই শুক্রবার এষার বিয়ে হবে মুম্বইয়ের ইস্কন মন্দিরে। দক্ষিণী রীতি মেনে কন্যাদান করবেন এষার মামা। এমনিতে আর সব দিক হেমা নিজেই সামলাচ্ছেন। আমন্ত্রিতদের নিজেই ফোন করছেন। পাশে রয়েছেন অসুস্থ ধর্মেন্দ্র। এষার হবু বর আবার সিন্ধি। নামী স্বর্ণব্যবসায়ী ভরত তাখতানি। ছোটবেলা থেকেই দু’জনের প্রেম। গত কাল সঙ্গীতে দু’জনেই নাচলেন জমিয়ে। লাল আর কমলার উপরে জরির কাজ করা ঘাগরা-চোলিতে এষা আর নীল ভেলভটের উপরে জরি বোনা শেরওয়ানিতে ভরত। নাচের তালে পা মেলালেন অভয় দেওলও। সঙ্গে বলিউড ব্রিগেড রিতেশ-জেনেলিয়া, রণবীর সিংহ, সোহেল খান, রাইমা-রিয়া, অভিষেক কপূর, অনু মালিক, নাসিরুদ্দিন শাহ...। কিন্তু সব্বার নজর ঘুরিয়ে ‘শো-স্টপার’ এক জনই, হেমা। নাচে-গানে অনন্যা। ‘বীর-জারা’ বা ‘বাগবান’-এর শাশুড়ি-গোত্রীয় চরিত্র করেও যিনি অনায়াসে জিতে নেন দর্শকের হৃদয়! ফিকে হয়ে যায় নায়িকাদের গ্ল্যামারও। |
বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেই ফেললেন, “রাজ্যসভায় রেখা আসবেন ভেবে বেশ মজেছিলাম। সামনে থেকে দেখে একটু মোহভঙ্গই হল। অথচ হেমা মালিনী এত দিন আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন, আজও ড্রিম-গার্লই থেকে গিয়েছেন!” কী সেই জাদু? “কথায় কথায় জিভ কেটে অনাবিল হাসি, অমায়িক ব্যবহার! রাজনৈতিক সহকর্মী হয়েও মনটা আনচান করে ওঠে,” লুকোচ্ছেন না বিজেপি নেতারা। হেমাকে শাশুড়ি বলে মানতে মন একটু উসখুসই করছে যেন!
কিন্তু শাশুড়িই হোন আর যাই-ই হোন, হেমার আবেদন তো একই রকম অটুট! এষা যতই ‘ধুম’ মচান না কেন, লোকের মুখে তিনি ‘হেমার মেয়ে’ই! আর সেই “হেমার বয়স বাড়ে না।” ডিজাইনার সায়না বলছিলেন, “শাশুড়ি হোন বা দিদা, ড্রিম-গার্ল ছিলেন! ড্রিম-গার্লই থাকবেন!” |