সন্ধে থেকে সর্বজিৎ, গভীর রাতে সুরজিৎ
‘বোঝার ভুল’, পাক জেল থেকে মুক্তি ঘিরে নাটক
পাক সংবাদমাধ্যমের ভুল নাকি পাক সরকারের আচমকা ভোল বদল?
এত দিন মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে বারবার ফিরে এসেছেন পাকিস্তানের জেলে বন্দি ‘ভারতীয় চর’ সর্বজিৎ সিংহ। এ দিন মুক্তির দরজা থেকে ফিরতে হল তাঁকে।
বাইশ বছর ধরে বন্দিদশা কাটানোর পরে সর্বজিতের মুক্তির খবর সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছিল মঙ্গলবার সন্ধেয়। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক ধন্যবাদজ্ঞাপক প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছিল। সর্বজিতের বাড়ির সামনে উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল পঞ্জাবের ভিখিউইন্দি গ্রাম।
কিন্তু মঙ্গলবারই গভীর রাতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির মুখপাত্র ফরহাতুল্লা বাবর বিবৃতি দিয়ে জানালেন, বোঝার ক্ষেত্রে একটা বড় ভুল হয়ে গিয়েছে। সর্বজিৎ সিংহের মুক্তি নিয়ে কোনও কথা হয়নি, প্রেসিডেন্টও তাকে ক্ষমা করেননি। সর্বজিৎ নয়, পাক জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন সুরজিৎ সিংহ নামে এক ভারতীয় বন্দি।
কে এই সুরজিৎ? জারদারির স্ত্রী, প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পরামর্শে এই বন্দির মৃত্যুদণ্ড মকুব করে ক্ষমা প্রদর্শন করেছিলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট গুলাম ইশাক খান। সেটা ১৯৮৯ সালের কথা। যাবজ্জীবন দণ্ডের আসামি সুরজিত তিন দশকের বেশি কারাবাস করে ফেলেছেন। ফলে তাঁকে আর আটকে রাখা ‘বেআইনি’। তাই এ দিন তাঁকেই মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বলে জারদারির মুখপাত্র দাবি করেন। এই মুক্তি পরোয়ানায় জারদারির কোনও ভূমিকাই নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।কিন্তু তার আগে সারা সন্ধে ধরে সর্বজিতের মুক্তির খবরে উদ্বেল হয়ে ওঠে সীমান্তের এ পার। সর্বজিতের পরিবারে খুশির বাঁধ ভাঙে, পঞ্জাবের সমস্ত রাজনৈতিক দল তাদের সন্তোষ প্রকাশ করে। জারদারিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এস এম কৃষ্ণও। কূটনীতির অলিন্দে তখন জল্পনা, যে সর্বজিতের মুক্তি এত বার আটকে গিয়েছে, আজ তা গ্রাহ্য হল কেন? একাংশ বলতে থাকেন, সম্প্রতি ভারত সফরে এসে ভারতের বন্দি পাক বিজ্ঞানী খলিল চিস্তির মুক্তির আবেদন জানিয়েছিলেন জারদারি। কূটনীতিকদের মতে, এ বছর ৯ এপ্রিল চিস্তিকে মুক্তি দেওয়ার সঙ্গে সর্বজিৎকে নিয়ে সিদ্ধান্তের সম্পর্ক থাকতে পারে। আবার বিদেশ মন্ত্রকের একাংশের মত ছিল, লস্কর-ই-তইবা জঙ্গি আবু হামজার গ্রেফতারি নিয়ে বিপাকে পড়েছে পাকিস্তান। নজর অন্য দিকে ঘোরাতেই এই পদক্ষেপ করেছে তারা। এই সব কিছুর পর রাতে পাক সরকারের ভ্রম সংশোধনী ঘোষণা এক নতুন প্রহসনের জন্ম দিল বলে মনে করা হচ্ছে।
গত কয়েক বছর ধরে সর্বজিৎ নিজে এবং ভারতে তাঁর পরিবারের তরফে বারংবার পাক রাষ্ট্রের কাছে তাঁর প্রাণভিক্ষার আবেদন করা হয়েছে। পাক সুপ্রিম কোর্টে সর্বজিতের আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ার পরে একমাত্র পাক প্রেসিডেন্টই পারতেন ক্ষমা প্রদর্শন করতে। মনে করা হচ্ছিল, ভারত-পাক বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠকের প্রাক্কালে সেটাই করলেন আসিফ আলি জারদারি। বাইশ বছর পরে বাবা বাড়ি ফিরছেন ভেবে সর্বজিতের মেয়ে স্বপ্নদীপ-পুনমরা বলে উঠেছিলেন, “এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।”
তখনও জানেন মুক্তি পাচ্ছেন সর্বজিৎ। উচ্ছ্বসিত স্ত্রী সুখপ্রীত ও মেয়ে পুনম। মঙ্গলবার সন্ধেয়। ছবি: পিটিআই।
১৯৯০ থেকে ২০১২ বাইশ বছর ধরে পাকিস্তানের কোট লাখপত জেলে রয়েছেন সর্বজিৎ। এই বাইশ বছর ধরে তাঁকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে তাঁর পরিবার। ২০০৫-এ পাক সুপ্রিম কোর্ট সর্বজিতের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পর থেকে এক-এক বার করে ফাঁসির দিন ঠিক হয়েছে। শেষ মুহূর্তে কোনও রকমে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপে স্থগিত করা হয়েছে তা। তবে এ দিনের নাটক সম্ভবত আগের সব ক’টি পর্বকে ছাপিয়ে গেল।
জারদারির মুখপাত্র ফরহাতুল্লা দাবি করছেন, গোটাটাই একটা ‘বিভ্রান্তি’ (কনফিউশন) মাত্র। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ যে ভাবে এগোল, তাতে একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে অনিবার্য ভাবে। প্রথমত, কীসের ভিত্তিতে পাক সংবাদমাধ্যম সর্বজিতের মুক্তির কথা জানাল? পাক আইনমন্ত্রী ফারুক
নায়েকই বা তবে কার মুক্তির কথা বলেছিলেন, সর্বজিত নাকি সুরজিৎ? দ্বিতীয়ত, যদি বিষয়টা নিছক ‘বিভ্রম’ হয়ে থাকে, তাহলে তার সংশোধনী দিতে এত দেরি হল কেন? তৃতীয়ত, সরকারি স্তরে কোনও বার্তা বিনিময় ছাড়াই কি তা হলে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক প্রতিক্রিয়া জানাল? কেন জানাল?
চতুর্থ এবং সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটা আগামী কিছু দিন ভারত-পাক কূটনীতিকে তাড়া করবে, সেটা হল সর্বজিতের নাম উঠে আসাটা সত্যিই কি স্রেফ একটা ‘ভুল’? নাকি তড়িঘড়ি নিজের অবস্থান বদলাল পাক সরকার?
কিন্তু ভোল বদলই হোক বা মুদ্রণ ‘প্রমাদ’ রক্তমাংসের জীবনে তার অভিঘাতটা কেমন? বাইশ বছর ধরে আশা-নিরাশা আর জীবন-মৃত্যুর দড়িতে ঝুলতে থাকা ৪৯ বছর বয়সী একটা মানুষ আর তার পরিবারের কাছে বিষয়টা কী দাঁড়াল? আজ সন্ধেবেলাতেই পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদল বলছিলেন, “দলবীরদের লড়াই দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে!” সারা সন্ধে পড়শিদের মধ্যে লাড্ডু বিলোনো সেই পরিবারটাই রাতের অন্ধকারে কোনও মতে দু’টো শব্দ বলতে পেরেছে! “নিষ্ঠুর তামাশা!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.