নিজস্ব সংবাদদাতা • লাউদোহা |
ইসিএল জমি অধিগ্রহণ করেছে। কিন্তু নিয়ম মেনে প্রতি দুই একর পিছু জমির মালিক বা পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়া হয়নি। এমন অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার ইসিএলের ঝাঁঝড়া এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজারের (জিএম) কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখালেন শ’দুয়েক বাসিন্দা। কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় যান চলাচলও বন্ধ করে দেন তাঁরা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। জিএম অবোধকিশোর মিশ্র জানান, ওই জমির ব্যাপারে কিছু আইনি সমস্যা রয়েছে। বাসিন্দাদের দাবির কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
ইসিএল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় দু’দশক আগে ভূমি সংস্কার আইন অনুযায়ী উখড়া জমিনদারি এস্টেটের (পরবর্তী কালে যা উখড়া ফার্মিং কর্পোরেশন নামে পরিচিত হয়) জমি খাস করতে উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকার। মেসার্স উখড়া ফার্মিং কর্পোরেশন এর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করে। |
জিএম অফিসে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র। |
হাইকোর্ট তখন স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। ফলে তা বিচারাধীন বিষয় হয়ে পড়ে। এর পরেই উখড়া ফার্মিং কর্পোরেশন তাদের জমি বিক্রি করতে উদ্যোগী হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে সেই জমি কেনেন। ১৯৯৬ সালের ৫ অক্টোবর ভূগর্ভে কয়লা আছে জানিয়ে ‘কোল রিয়ারিং এরিয়া’ আইনে ওই জমি ফের কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করে ইসিএল। এর পরেই জমির পরিবর্তে চাকরির দাবি জানাতে শুরু করেন জমির মালিকেরা।
ইসিএল সূত্রে জানা যায়, প্রতি দু’একর জমি পিছু জমিদাতা পরিবারের এক জনকে চাকরি বা জমির পরিমাণ তার থেকে কম হলে জমিদাতা পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রয়েছে। এ দিন বিক্ষোভকারী জমি মালিকের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৯৪ জন। তাঁদের মোট জমির পরিমাণ প্রায় ৩১৬ একর। তাঁদের দাবি, বারবার চাকরির দাবি জানানো হলেও ইসিএল কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করছেন না। এ দিন তাই বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। সামনের রাস্তায় যান চলাচলও কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না করা হলে আন্দোলনে নামা হবে বলে জানান ‘ঝাঁঝড়া-উখড়া-সরপি ল্যান্ড লুজার্স কমিটি’র সভাপতি লক্ষ্মণ নন্দী।
ইসিএল সূত্রে জানানো হয়, প্রথম দিকে ৫-৬ জন চাকরি পেয়েছেন। বাকি জমিদাতা পরিবারগুলি নিয়ম মেনে চাকরি পাক, কর্তৃপক্ষও তা চান। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায়। দেখা গিয়েছে, জমি মালিকেরা জমি কিনেছেন ইসিএল ওই জমি অধিগ্রহণ করার পরে। অনেকে আবার তা তৃতীয় পক্ষকে বিক্রি করেছেন। এ দিকে, বিষয়টি আবার আদালতে বিচারাধীন। সব মিলিয়ে সমস্যা রীতিমতো জটিল হয়ে গিয়েছে। ইসিএল সূত্রে জানা যায়, জমিদাতারা জমি না ছাড়ায় ইসিএল সেই জমির দখল পাচ্ছে না। ফলে খনির সম্প্রসারণ কাজও ব্যাহত হচ্ছে। আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে সংস্থার। বিক্ষোভকারীরা জিএমের কাছে অভিযোগ করেন, একই পরিস্থিতিতে জমি কিনে শোনপুর বাজারি এরিয়ায় জমিদাতা পরিবার পিছু চাকরি দেওয়ার উদ্যোগ শুরু করেছে ইসিএল। সেখানে ঝাঁঝড়া এরিয়ার ক্ষেত্রে কেন দ্বিচারিতা করা হচ্ছে? জিএম বলেন, “শোনপুর বাজারি প্রকল্পে কী ভাবে জমিদাতাদের চাকরি দেওয়ার উদ্যোগ হচ্ছে, এখানকার সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিক তা দেখতে যাবেন।” |