নিজস্ব সংবাদদাতা • জামুড়িয়া |
১০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে একটি বৈধ ও অন্য একটি অবৈধ খোলামুখ খনি। এই দুই খনিতে আগুন লেগে ধোঁয়া বেরনোর ঘটনায় মঙ্গলবার আতঙ্ক ছড়াল জামুড়িয়ায় বেলবাঁধ খনি এলাকায়।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ আচমকা ইসিএলের কুনুস্তরিয়া এরিয়ায় ওই খনি থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে সংলগ্ন ধসল, বাহাদুরপুর, হিজলগড় এলাকাতেও। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ইসিএলের কর্মীরা এসে বৈধ খনিটির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও পাশের অবৈধ খনিটির আগুন নেভাতে রাত ৯টার পর ঘটনাস্থলে আসেন তাঁরা। আসানসোলের এডিসিপি ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশের একটি বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।
ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের বক্তব্য, ওই এলাকায় অবৈধ কয়লা খননকারীরা কয়লা কেটে ভূগর্ভ ফাঁপা করে দিয়েছিল। তা রুখতেই খোলামুখ খনি করেছিল ইসিএল। |
বর্ধমানের জামুড়িয়ায় অবৈধ খনিতে আগুন। মঙ্গলবার ওমপ্রকাশ সিংহের তোলা ছবি। |
তিনি বলেন, “কিন্তু তাতেও যে পুরোপুরি সুরাহা হয়নি, তা এখন বোঝা যাচ্ছে।” তিনি জানান, অবৈধ খনিগুলিতে পড়ে থাকা কয়লা গরম হয়েই এই ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁদের অনুমান। তাঁর মতে, মাটির ফাঁপা জায়গাগুলি দিয়েই আগুনের রেশ ওই খনি দু’টির মুখ পর্যন্ত ছড়িয়েছিল। তিনি বলেন, “এখন যাতে ওই খনিমুখগুলি বন্ধ করা যায়, প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে ইসিএল তার চেষ্টা করবে।”
এই ব্যাপারে তৃণমূলের জামুড়িয়া ব্লক ২ সভাপতি তাপস চক্রবর্তীর অভিযোগ, সিপিএমের মদতে ওই এলাকায় লাগাতার অবৈধ খনন চলেছে। এখনও পুলিশের একাংশ ও সিআইএফের একাংশের প্রত্যক্ষ মদতে তা চলছে। তাঁর কথায়, “আমরা বার চারেক ওই এলাকায় কয়লার গাড়ি আটকে পুলিশে খবর দিয়েছি। পুলিশ গাড়ি আটক করলেও কার্যক্ষেত্রে যে তা বন্ধ হয়নি, তা এবার বোঝা যাচ্ছে।” এডিসিপি ভাস্কর মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “পুলিশের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ অনেক দিনের পুরনো। অবৈধ কয়লাখননের খবর পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি।”
পক্ষান্তরে, অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সিপিএমের অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক মনোজ দত্তের পাল্টা দাবি, মিথ্যা অভিযোগ না এনে তৃণমূল নেতৃত্বের প্রকৃত দুষ্কৃতীদের খুঁজে বের করতে বলা উচিত পুলিশকে। তাঁর যুক্তি, কয়লা খনন না হলে ফাঁকা জায়গায় জল জমে যেত। আগুন লাগার প্রশ্নই উঠত না।
তৃণমূলের যুব নেতা উদিত সিংহ ও আইএনটিউসি অনুমোদিত কোলিয়ারি মজদুর ইউনিয়নের কুনুস্তরিয়া এরিয়ার সম্পাদক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি , খোলামুখ খনির কর্তৃপক্ষের একাংশই ওই অবৈধ কয়লা খননে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। ওই দু’টি খনির ১০০ মিটারের মধ্যে তিনটি ইটভাটা চলে। তিনি জানান, ওই ইটভাটাগুলির মাটি কাটার কাজে মদত দেওয়ার অভিযোগে খোলামুখ খনির ম্যানেজার অমিতাভ দাসের বিরুদ্ধে তাঁরা দিন চারেক আগে ইসিএলের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তার ভিত্তিতে অমিতাভবাবুকে সাসপেন্ড করে ইসিএল। এতেই পরিষ্কার, বিভিন্ন ইটভাটায় অবৈধ কয়লাখনন-সহ বিভিন্ন অবৈধ কাজে ইসিএল কর্তৃপক্ষের একাংশের মদত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ইসিএলের তরফে নীলাদ্রিবাবু বলেন, “ম্যানেজারের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের জন্য তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।” |