নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
মাস দেড়েক আগে দুর্গাপুর থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল বছর চোদ্দোর মেয়েটি। কয়েক বার ফোন এসেছে। থানা-পুলিশ হয়েছে। কিন্তু খোঁজ মেলেনি। প্রশ্ন উঠছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।
দুর্গাপুর প্রজেক্টস নিউ গার্লস হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীর নাম খুশি ভুঁইমালি। দুর্গাপুর স্টেশন লাগোয়া কল্পতরুনগর কলোনিতে রেললাইনের ধারে টালির চালের দুই কামরার ঘরে বাবা-মা, যমজ বোন ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকত সে। গত ১২ মে ডিপিএল ‘এ জোন’-এ টিউশন পড়তে গিয়ে সে নিখোঁজ হয়ে যায়।
খুশির বাবা শ্যামল ভুঁইমালি ভ্যানরিকশা চালিয়ে বাড়ি-বাড়ি গ্যাস সিলিন্ডার দেন। অনুষ্ঠান বাড়ির রান্নাও করেন। বড় মেয়ে বিবাহিত। হাসি-খুশি দুই যমজ বোন একই স্কুলে পড়ে। ছেলে ছোট, ডুমুরতলা প্রাথমিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। খুশির মা পূর্ণিমাদেবী জানান, সন্ধ্যায় মেয়ে না ফেরায় প্রাইভেট টিউটরকে ফোন করে তাঁরা শোনেন, মেয়ে সে দিন পড়তেই যায়নি। পরের দিন, ১৩ মে স্থানীয় কোকওভেন থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়।
শ্যামলবাবু জানান, ওই দিনই এক মোবাইল থেকে তাঁর মোবাইলে ফোন আসে। পুরুষকণ্ঠ জানায়, মেয়ে ভাল আছে। তাঁরা খুশির সঙ্গে কথা বলার জন্য জোরাজুরি করলে তাকে ফোন দিয়ে লোকটি বলে, ‘বলো, ভাল আছি।’ খুশিও তেমনই বলে। ফোন কেটে যায়। এর পরে বারবার ওই নম্বরে ফোন করা হলেও তা বন্ধ ছিল। ২১ মে ফের ফোন করে পুরুষকন্ঠ বলে, ‘থানা-পুলিশ করবেন না। ফল ভাল হবে না।’ শ্যামলবাবুর কথায়, “আমি বলি, মেয়েকে নিয়ে আসুন। কোথায় আছে জানান। ‘এখনও সময় হয়নি’ বলে ফোন কেটে দেওয়া হয়।”
৮ জুন খুশি নিজেই ফোন করে। শ্যামলবাবুকে জানায়, সে লুকিয়ে ফোন করছে। তার উপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলছে। লোকজনের কাছে সে শুনেছে, দমদমের চিড়িয়া মোড়ের কাছে ২২ নম্বর বাড়িতে রয়েছে। শ্যামলবাবু বলেন, “পরের দিনই আমরা সেখানে যাই। কিন্তু ঠিকানা খুঁজে পাইনি। কলকাতার কাশীপুর থানা কিছু বলতে পারেনি।” একই নম্বর থেকে বারবার ফোন আসার কথা শুনে কোকওভেন থানা মোবাইলের সার্ভিস প্রোভাইডারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। জানা যায়, মোবাইলটির ‘সিম’ পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া থানার কনকপুরের কোনও এক শেখ নবাবউদ্দিনের। শ্যামলবাবুর আক্ষেপ, “ওখানেও গেলাম। কিন্তু পাঁশকুড়া থানা বলল, পুরো ঠিকানা না বললে অত বড় এলাকায় খোঁজ পাওয়া সম্ভব নয়। পুলিশ একটু আন্তরিক হলে হয়তো কিছু সূত্র বেরিয়ে আসত।”
পাঁশকুড়া থানার ওসি মদনমোহন রায় অবশ্য দাবি করেন, “এমন ঘটনার কথা আমি জানি না। কেউ আসেওনি।” কোকওভেন থানার বক্তব্য, সংশ্লিষ্ট সব থানাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। দুর্গাপুরের এডিসিপি (পূর্ব) শুভঙ্কর সিংহ সরকার বলেন, “শ্যামলবাবুকে দেখা করতে বলেছি। বিস্তারিত শুনব। তার পরে যা করণীয়, তা করা হবে।” |