কোন পরিস্থিতিতে বনকর্মীরা নকশালবাড়ি মেরি ভিউ চা বাগানের শ্রমিক মিলন রাউতিয়াকে (৪০) গুলি করে মারলেন তা খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশ দিল বন দফতর। বৃহস্পতিবার বিকালে মেরিভিউ চা বাগানের লোহাসিংহ ডিভিশনের ওই কর্মী বাড়ি লাগোয়া জঙ্গলে গরু খুঁজতে গিয়েছিলেন বলে পরিবারের লোকেদের দাবি। ওই দিন রাত ১২টা নাগাদ বন ও পুলিশের কর্মীরা কার্শিয়াং বন বিভাগের বাগডোগরা রেঞ্জের সংরক্ষিত জঙ্গল কদমা ব্লক থেকে ওই চা শ্রমিকের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার করেন। বন দফতরের অভিযোগ, ওই চা শ্রমিক জঙ্গলে কাঠ চুরি করতে গিয়ে বনকর্মীদের উপরে হামলার চেষ্টা করেন। বাধ্য হয়ে গুলি চালাতে হয়। বনকর্মীদের ছোঁড়া ছররা গুলি ওই শ্রমিকের মাথায় ও বুকে লাগে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় চা শ্রমিকের। কয়েক মাস আগেই ওই এলাকায় আরও এক ব্যক্তির বনকর্মীদের ছোঁড়া গুলিতে মৃত্যু হয়। কার্শিয়াঙের ডিএফও শৈলেশ আনন্দের বক্তব্য, “প্রকৃত ঘটনা কী সেটা তদন্তেই প্রমাণিত হবে। সেই জন্যই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে বাগডোগরা থানায় পৃথক ভাবে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে পুলিশের পক্ষ থেকেও তদন্ত শুরু হয়েছে। নিহতের স্ত্রী রেশমা রাউতিয়ার বক্তব্য, এলাকায় চিতাবাঘ অত্যাচার করছে। পরিবারের তিনটে গরুর মধ্যে একটা কয়েক মাস আগে চিতাবাঘ মেরে ফেলেছে। ঘটনার দিন সকালে আরও একটা গরু বেপাত্তা হয়ে যায়। গরু খুঁজতে অসুস্থ শরীরেও তাঁর স্বামী জঙ্গলে ঢুকেছিলেন। |
তাঁর প্রশ্ন, “গুলি না-করে স্বামীকে বনকর্মীরা তো গ্রেফতারও করতে পারতেন। এখন দুই ছেলে নিয়ে কী ভাবে সংসার চালাব?” বনকর্মীরা ওই চা শ্রমিককে ‘খুন’ করেছেন অভিযোগ করে শুক্রবার বাগডোগরা রেঞ্জ অফিস ঘেরাও করেন সিপিএম এবং আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সমর্থকেরা। ৩১ (সি) জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। অভিযুক্ত বনকর্মীদের গ্রেফতারও দাবি করেন তাঁরা। সকাল ১০টা থেকে টানা এক ঘণ্টা ঘেরাওয়ের পরে বাগডোগরা রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ অফিসার তপন দাস মৃতের পরিবারকে সৎকারের জন্য ২০ হাজার টাকা, পরিবারের একজনকে অস্থায়ী পদে চাকরি এবং ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি আয়ত্বে আসে। সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম ঘোষ জানান, চা শ্রমিককে খুনের ঘটনাটি তাঁরা বিধানসভায় উত্থাপন করার জন্য বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। জেলা বামফ্রন্টের একটি প্রতিনিধি দল যাতে মেরিভিউ চা বাগানে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যান সেই ব্যাপারেও আর্জি জানানো হয়েছে। গৌতমবাবু বলেন, “কাঠ চুরি করতে গিয়ে ওই চা শ্রমিকের গুলিবিদ্ধ হওয়ার অভিযোগ সাজানো। ওই চা শ্রমিককে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। বন প্রশাসন কতটা বেহাল হয়ে পড়েছে, এই ঘটনা তার প্রমাণ।” ওই চা বাগানের বাসিন্দা তথা আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা পেয়ারা বেক বলেন, “আমাদের এলাকার কিছু লোক কাঠ চুরির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও মিলনের বিরুদ্ধে কখনও এমন অভিযোগ ওঠেনি। বনকর্মীরা কাঠ চুরির ঘটনার সঙ্গে মিলনকে জড়িয়ে নিজেদের দোষ আড়াল করতে চাইছেন।” এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে লোহাসিং লাগোয়া জঙ্গলে ব্যাপক হারে কাঠ চুরি হচ্ছে। কারা কাছ চুরি করছেন, বনকর্মীদের কাছে সেই ব্যাপারে নির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের কোনও চেষ্টা করছেন না বনকর্মীরা। বরং প্রকাশ্যেই কিছু দুষ্কৃতীকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। আর নিরীহ লোকেরা জঙ্গলে ঢুকলে গুলি করা হচ্ছে। বাসিন্দাদের এই অভিযোগ নিয়ে বাগডোগরার রেঞ্জ অফিসার বলেন, “অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” এলাকার সিপিএম নেতা মাধব সরকার বলেন, “তদন্ত করে দোষী বনকর্মীদের শাস্তির ব্যবস্থা না-হলে লাগাতার আন্দোলনে নামা হবে।” |