|
|
|
|
বর্ষায় জিটিএ ভোট |
১০০ দিনের টাকায় ধস সরাবে ‘টিম’ |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
ধসে বন্ধ রাস্তায় পাথরের চাঁই সরাবে কে তা নিয়ে দার্জিলিং পাহাড়ে নানা দফতরের ‘ঠেলাঠেলি’ নতুন কিছু নয়। কিন্তু আসন্ন ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) ভোটের সময়ে এমন ‘চাপান-উতোরের’ জেরে যাতে প্রচার-প্রস্তুতিতে বিঘ্ন না ঘটে তা নিশ্চিত করতে ১০০ দিনের কাজকে হাতিয়ার করেছে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, চলতি বর্ষায় পাহাড়ে ধসে পড়া পাথর, বোল্ডার ভেঙে সরানোর জন্য ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ খরচ করা হবে।
দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেছেন, “পাহাড়ের রাস্তাগুলি কোনও একটি সুনির্দিষ্ট দফতরের হাতে নেই। আগের গোর্খা পার্বত্য পরিষদ, পূর্ত দফতর, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের আওতায় রয়েছে একাধিক রাস্তা। গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতেও অনেক রাস্তা রয়েছে। কোথাও ধসে পাথরের চাঁই নেমে রাস্তা বন্ধ হলে, তা কে সরাবে তা নিয়ে অনেক সময়ে বিতর্ক দেখা দেয়। তাতে সাধারণ মানুষের হয়রানি বাড়ে। এ বারের বর্ষায় তেমন ভোগান্তির মুখে পাহাড়বাসী যাতে না পড়েন, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। সে জন্যই ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা ধস সরানোর কাজেও খরচ করা হবে।” |
|
বৃষ্টি-ভেজা দার্জিলিং। ছবি: রবিন রাই। |
প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, এই সিদ্ধান্তের ফলে দুর্যোগের মরসুমে কিছু স্থানীয় কর্মসংস্থানও হবে। প্রশাসন সূত্রের খবর, পাহাড়ের তিন মহকুমার ৮টি ব্লকে একটি করে ‘টিম’ গড়া হয়েছে। এক-একটি ‘টিম’-এ কমপক্ষে ১০ জন ও সর্বাধিক ২০ জন শ্রমিককে রাখা হয়েছে। কোথাও ধসের ফলে নেমে আসা বোল্ডারে রাস্তা বন্ধ হয়ে থাকলেও তা সরাতে দেরি হচ্ছে খবর পেলেই ওই ‘টিম’ পাঠাবে জেলা প্রশাসন। চটজলদি পাথর ভেঙে, ঠেলে সরিয়ে রাস্তা ধস মুক্ত করবেন শ্রমিকেরা। দুর্গম অঞ্চলে শ্রমিকদের নিয়ে ধসে বিধ্বস্ত এলাকা পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য জেলা প্রশাসনই গাড়ি দেবে। ঘটনা হল, বর্ষায় নানা সমস্যা থাকলেও জুলাইয়ের মধ্যেই জিটিএ ভোট করাতে চাইছে রাজ্য সরকার। এখনও পর্যন্ত গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পক্ষ থেকেও ভোটের বিরোধিতা করা হয়নি। সরকারি সূত্রের খবর, শ্যামল সেন কমিটির সুপারিশ নিয়ে আপত্তি থাকলেও মোর্চা নেতাদের বড় অংশ দ্রুত ভোট মেটানোর পক্ষে। মোর্চার ওই শিবির চাইছে, জিটিএ গঠনের পরে ৫ বছর তা চালিয়ে পাহাড়ের উন্নয়নের পাশাপাশি, তরাই-ডুয়ার্সের আরও বেশি সংখ্যক মৌজাকে আওতায় আনার দাবিতে নানা ভাবে আন্দোলন চালাতে। মোর্চার অন্দরের এই খবর রয়েছে প্রশাসনের কাছেও। তাই বর্ষাকালীন ধসের কথা মাথায় রেখে নির্বাচনের সময় রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ‘টিম’ তৈরির কাজ সেরে ফেলেছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পাহাড়বাসীও। কালিম্পঙের হোটেল ব্যবসায়ী ফুনু শেরপা, দার্জিলিঙের হরদাসহাট্টার ট্রেকার চালক রিকি ছেত্রীর মতো অনেকেই জানান, ফি বছর রাস্তায় ধস নামলে পাথর সরাবে কে তা নিয়ে ‘ঠেলাঠেলি’তে এক-দু’দিন চলে যায়। ফুনু শেরপা বলেন, “যাতায়াতের সুবিধা তো হবেই। তা ছাড়া, ১০০ দিনের কাজে ধস সরানো হলে এলাকার অদক্ষ শ্রমিকেরাও বর্ষার সময়ে কাজ পাবেন।” |
|
|
|
|
|