জেদের কাছে শেষতক হার মেনেছিল অভাব।
পড়াশোনার স্বপ্নপূরণ করতে বিয়ে ভেস্তে দিয়েছিল হবিবা। তখন সবে নবম শ্রেণি। ভেবেছিল, আরও মন দিয়ে পড়বে। কলেজে যাবে। তা ‘ভাল পাত্র’ পেলে কোন বাবা আর ছাড়েন? মেয়ের বিয়ের তাই তোড়জোড়শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু মেয়ের জেদের কাছে এক দিন হার মানতে হয়েছিল তাঁকে। বিয়েতে অনড় মেয়ে। ব্রত একটাই, আরও পড়ব, কলেজে যাব। পড়াশোনার খরচ চলবে কী করে? অনটনে প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল রঘুনাথগঞ্জের বৈদরা গ্রামের হবিবা খাতুনের পড়াশোনা। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে পীক্ষাটা দিয়েছিল মেয়েটা। এ বছর আল-আমিন মিশন থেকে উচ্চমাধ্যমিকে হবিবা ৫৬.২% নম্বর পেয়েছেন। কিন্তু আরও পড়ার টাকা কোথায়? হবিবা বলে, “আমার ইচ্ছে আরবি নিয়ে অনার্স পড়ব। ২০১০-এ মাধ্যমিক পাশের পরে রাজ্য সরকার
হবিবা খাতুন। |
দাঁড়িয়েছিল। আল-আমিন মিশনে ভর্তি হই। কিন্তু এখন তো আর থই পাচ্ছি না!” হবিবা ও তার বছর দুয়েকের বড় দিদি ফতেয়া খাতুনের উচ্চশিক্ষার জন্য তৎকালীন রাজ্য সরকার আল-আমিন মিশনে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেয়। আল আমিন মিশন থেকেই এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে ফতেয়া পেয়েছে ৫৪.৮%। হবিবার বাবা মুসা মোল্লা দিনমজুর। তিনি বলেন, “যা আয় করি, তাতে সংসার চলে না। অবসর সময়ে বিড়ি বেঁধে নিজেদের পড়াশোনা চালিয়েছে। মেয়েরা ছুটিতে বাড়ি এসে বিড়ি বাঁধার কাজ করত। কিন্তু কলেজে পড়ার এত টাকা কোথায় পাব?” ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ে হবিবার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলেন বাবা-মা। অভাবের সংসারে দু’বেলা খাওয়াই জোটে না ঠিকমতো। লেখাপড়া তো অনেক দূরের কথা। সটান থানায় গিয়ে বাবার নামে অভিযোগ করেছিল হাবিবা। বলেছিল, আরও অনেক দূর পড়তে চায় সে। কলেজে যেতে চায়। মেয়ের জেদের কাছে হার মানে অভাব। ২০০৯-এর ডিসেম্বরের ওই ঘটনার পরে নাইথ সামশেরিয়া হাইমাদ্রাসা কর্তৃপক্ষও ওই ছাত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছে। স্কুল শিক্ষিকা কবিতা বিশ্বাস বলেন, “ওরা দু’জনেই পড়তে চায়। কিন্তু কলেজে পড়ার টাকা যোগানো ওই পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। সরকার পাশে না দাঁড়ালে ওরা কোথায় যাবে?” হবিবা বলে, “শিক্ষিকা হওয়া আর হবে না বোধহয়। ভেবেছিলাম পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াব। কলেজে পড়তে পারব কী, কে জানে!” |