নিন্দুকেরা বলেন, সারা দিন আয়নায় নিজেকে দেখা তাঁর সবচেয়ে প্রিয় কাজ।
নিন্দুকেরা বলেন, হাফটাইমে বাকি ফুটবলাররা যখন এনার্জি ড্রিঙ্ক খান, তিনি তখন চুলের যত্ন নিতে ব্যস্ত থাকেন।
নিন্দুকেরা বলেন, আত্মরতিই শেষ পর্যন্ত তাঁকে ডোবাবে।
তিনি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ডস স্যান্টোস আভেইরো নিজেও তো এক বার বলেছিলেন, “লোকে আমাকে হিংসে করে কারণ আমি ধনী, আমাকে ভাল দেখতে, আর আমি দারুণ ফুটবলার। এ ছাড়া আর কী ব্যাখ্যা হতে পারে?”
এ বারের ইউরোর প্রথম দিকে এই ব্যাখ্যা শুনলে নিন্দুকেরা হাসতেন। দারুণ ফুটবলার? তা হলে মাঠে এত অসহায় লাগছে কেন? তা হলে এত সহজ সুযোগ হাতছাড়া করছে কেন? এ রকম ছন্নছাড়া ভাবে সারা মাঠ দৌড়চ্ছে কেন? ব্রাজিলের বিরুদ্ধে লিওনেল মেসির হ্যাটট্রিক নিন্দুকদের হাসি আরও চওড়া করে দিয়েছিল। ডেনমার্ক-পর্তুগাল ম্যাচে রোনাল্ডোর পরপর গোল ফস্কানোর জেরে স্লোগান উঠল তাঁর চরম প্রতিপক্ষের নামে। নিন্দুকেরা হাসছিলেন, আর রোনাল্ডো-ভক্তরা হাহাকার করছিলেন। কোথায় সেই ঔদ্ধত্য? কোথায় সিআর সেভেনের সেই ট্রেডমার্ক চোখ টেপা?
তারপর এল স্বপ্নের প্রত্যাবর্তন। প্রথমেই নিন্দুকদের একহাত নেওয়া থেকে যার শুরু। “গত বছর ঠিক এই সময় মেসি কী করছিল জানেন? কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে নিজের টিমের সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছিল।” এর পরপরই নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ভক্তদের মন ভরিয়ে দেওয়া পারফরম্যান্স। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৬০ গোল করা মরসুমের ফর্মের ঝলক। ২৮ মিনিটে দলকে সমতায় ফেরানোতেই যার শেষ নয়। ৭৪ মিনিটে জয়সুচক গোলটাও রোনাল্ডোরই। চেক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে তো আরও বেশি করে ঝলসে উঠলেন। দু’বার তাঁর শট গোলপোস্টে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসার পর ৭৯ মিনিটে ডিফেন্ডারের পিছন থেকে অবিশ্বাস্য হেড থেকে গোল, যা দেখে উত্তেজনায় উঠে দাঁড়িয়েছিলেন গ্যালারিতে বসা দুই পর্তুগিজ কিংবদন্তি লুই ফিগো এবং ইউসেবিও।
শেষ আটের লড়াইয়ে দুই দলের মধ্যে তফাত যে রোনাল্ডোই তৈরি করে দিতে পারেন, তা নিয়ে দ্বিমত থাকার কথা নয়। ছিলও না। চেক কোচ মিখাল বিলেক তো স্বীকার করেই নিচ্ছেন, “রোনাল্ডোর সঙ্গে টক্কর দেওয়ার জন্য প্রচুর খেটেছিলাম। কিন্তু ও বুঝিয়ে দিল, সর্বোচ্চ মানের ফুটবল আদতে কী। বড় মঞ্চে কী ভাবে খেলতে হয়, সেটা রোনাল্ডো দেখিয়ে দিল।” রোনাল্ডো বনাম মেসি লড়াইয়ে তাঁর ভোট যে তাঁর সতীর্থের দিকেই, সেটা খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছেন পর্তুগিজ মিডফিল্ডার জোয়াও মোতিনহো। “সব দিক দিয়ে দেখতে রোনাল্ডো কমপ্লিট ফুটবলার। মেসিও তাই, কিন্তু আমার পছন্দ রোনাল্ডো। ও সত্যিকারের নেতা।”
প্রায় একার ক্ষমতায় দেশকে শেষ চারে তুলেছেন রোনাল্ডো। কিন্তু তাঁর গলায় নেই এক ফোঁটা আত্মতুষ্টি। বরং বলছেন, সামনের লড়াই আরও কঠিন। এবং দল সেই চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি। “দল দুর্দান্ত খেলছে। আমি বলব ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা এখন ৫০-৫০। পরের ম্যাচটা কঠিন, কিন্তু আমাদের দল যথেষ্ট পরিণত। আমরা প্রস্তুত,” বলছেন আত্মবিশ্বাসী পর্তুগিজ তারকা। এ-ও পরিষ্কার, তাঁর চাঁদমারি এখন ইউরো কাপ। |