‘গ্যাং’ নেই তবু বদনাম, ক্ষুব্ধ ওয়াসেপুর
পত্তি উঠেছিল ‘ফায়ার’ নিয়ে। ‘গঙ্গাজল’ নিয়ে। ‘বম্বে’, ‘সরকার’, ‘ডার্টি পিকচার’ নিয়েও।
শুক্রবার মুক্তি পেয়েই তালিকায় ঢুকে পড়ল অনুরাগ কাশ্যপের ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’।
‘বম্বে’, ‘সরকার’, ‘গঙ্গাজল’ কিছু লোকের চক্ষুশূল হয়েছিল খল-চরিত্রে তাদের নেতার ছায়া পড়ায়। ‘ফায়ার’-এ অপরাধী ছিল সমকাম। এ বার আপত্তির কারণ নিছকই জায়গার নাম।
ওয়াসেপুরের বাসিন্দারা বলছেন, কয়লা-পাচার নিয়ে খুন-ধর্ষণ-বদলা ছিল এক দিন ঠিকই, কিন্তু সে সব এখন অতীত। সে সব দিনের গল্প এখন বলাই চলে, কিন্তু সত্যিকারের নাম টেনে কেন ফের বদনাম করা?
ধানবাদ স্টেশনকে বাঁয়ে রেখে সোজা গয়া সেতু পেরিয়ে গুলিমোড় থেকে ডাইনে বাঁক নিলেই ওয়াসেপুর মহল্লা শুরু। মূলত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা। লাখ দুই মানুষের বাস। কোনও সিনেমা হল নেই। পুলিশও মোতায়েন নেই। কিন্তু সকাল থেকেই থমথমে গোটা মহল্লা। ধানবাদ শহরে দু’টি হল-এর বাইরে ব্যাজ পরে বিক্ষুব্ধদের ‘মৌন প্রতিবাদ’ আর পুলিশ। ভিতরে পর্দায় পুলিশের কলার চেপে ধরে ‘ইয়ে ওয়াসেপুর হ্যায়। ইহাঁ কবুতর ভি এক পঙ্খ সে উড়তা হ্যায়। দুসরেসে আপনি ইজ্জত বচাতা হ্যায়।’ এ রকম আরও ধমক-চমক!
পোস্টারে কালি মাখাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।
শুক্রবার ধানবাদে একটি প্রেক্ষাগৃহের সামনে। ছবি: চন্দন পাল
ওয়াসেপুরের বাতাসে কান পাতলেই শোনা যায় সেই সব ‘সত্যি গল্প’। এক দিকে সাবির আলম, অন্য দিকে ফইম খানের দলবল। ধানবাদের কয়লা মাফিয়া সিংহ পরিবারের হয়ে সময়ে কাজ করত দু’জনেই। পরে বেরিয়ে গিয়ে আলাদা দল গড়ে তোলে। ওয়াসেপুরেই কাছাকাছি দু’জনের বাড়ি। আজও এলাকায় অন্তত দু’ডজন অনাথকে খুঁজে পাওয়া যাবে যাদের বাবা-দাদা এদের শিকার। সাবির আর ফইম দু’জনেই পরে জেলে যায়। ওয়াসেপুর এখন ‘শান্ত’ বলছেন অনেকেই।
ধানবাদের পূজা হলে প্রথম শো দেখে বেরিয়ে এসে ওয়াসেপুরের সাজিদ আনোয়ার, শাহিদ রেজাদের প্রতিক্রিয়া, “নতুন কী? সেই তো খুন-জখম! কিন্তু ওয়াসেপুর নামটা ব্যবহার না করলেই ভাল হত।” মহল্লার বাসিন্দা জাফর আলির প্রশ্ন, “২৫ বছর আগের ঘটনা তুলে এনে বদনামের ভাগী করার কী মানে?” ওয়াসেপুর একতা মঞ্চের সভাপতি জাভেদ খানের আশঙ্কা, এর ফলে বাইরে পড়তে গিয়ে এলাকার ছেলেদের টিটকিরির মুখে পড়তে হবে। বিয়ে ভেঙে যাবে।
‘শোলে’তে অমর হয়ে গিয়েছে চম্বলের রামগড়। ‘ব্যান্ডিট কুইন’ থেকে ‘পান সিং তোমর’ একের পর এক ছবিতে ফিরে এসেছে বাগী অধ্যুষিত বেহড়। ‘সত্য’, ‘কোম্পানি’, ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বই’, ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’তে বারবার ফিরেছে ‘অন্ধকার’ মুম্বই। কিন্তু ওয়াসেপুর তা শুনতে রাজি নয়। কংগ্রেসের ধানবাদ জেলা সম্পাদক পারভেজ আখতার বলেন, “সিনেমায় ওয়াসেপুর নাম ব্যবহারের প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা সেন্সর বোর্ড এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অম্বিকা সোনির কাছে চিঠি পাঠিয়েছি।” রাঁচি হাইকোর্টে রিট পিটিশনও দাখিল হয়েছে।
ছবির অন্যতম গল্পকার সৈয়দ জিশান কাদরির বাড়ি মিলবে এলাকার ইমামবাড়ার পাশ দিয়ে কিছুটা হেঁটে গেলেই। পাশের বাড়িটি শ্রমিক নেতা আরিফ মহম্মদ খানের। তাঁর কথায়, “সিনেমা দেখিনি। টিভিতে ঝলক দেখছি। ওয়াসেপুর নামটা না থাকলে গণ্ডগোল বাধত না।” জিশানের বন্ধু, ভোজপুরী গায়ক রাজু সিংহ অনুরাগীর পারিবারিক মিষ্টির দোকান ৭০ বছরের পুরনো। তাঁর মতে, “৩০ বছর আগের গল্পের সঙ্গে আজকের মিল নেই। ওয়াসেপুর নামটা বাদ দিলে পারত।”
গোলাপি রঙের দোতলা বাড়িটা এখন ভিতর থেকে তালাবন্ধ। অনেক ডাকাডাকির পরে উঁকি দেয় তেরো-চোদ্দো বছরের একটি ছেলে। ‘ঘরমে কোই নেহি হ্যায়’ বলেই ফের মিলিয়ে যায় সে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.