নিউ আলিপুর
সময় পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি ‘সৌন্দর্যায়ন’, পার্কে বন্ধ খেলাধুলো
পুর-প্রকল্পে ‘সৌন্দর্যায়ন’-এর কাজ চলছে। তাই শহরের একটি ছোট্ট পার্কে খেলাধুলো দীর্ঘদিন বন্ধ। কাজ শেষ করে ফের খেলা শুরু হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি থেকে বিধায়কও চাপান-উতোরে জড়িয়ে পড়েছেন।
ঘটনাস্থল নিউ আলিপুরের ‘ও’ ব্লক লাগোয়া দাত্তু ফাদকর পার্ক। ঘাস-ওঠা ন্যাড়া পার্কে ঘাস গজিয়ে সবুজ করা হবে বলে মাসখানেকে খেলা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন পুর-কর্তৃপক্ষ। সেই মাঠে ঘাস বেড়ে এখন জঙ্গলের চেহারা নিচ্ছে। পার্কের চারধারের গ্রিলে নীল-সাদা রঙের পোঁচেও ধুলো। কিন্তু ওই পার্কে রোজকার ক্রিকেট-ফুটবল থেকে শুরু করে সান্ধ্য বায়ুসেবন-সবই থমকে কয়েক মাস ধরে।
পার্কে একটি ক্রিকেট কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার পুলক দাস। তাঁর দাবি, “ফেব্রুয়ারিতে এক মাসের জন্য খেলা বন্ধ রাখতে বলেছিলেন পুরকর্তারা। জুন শেষ হতে চলল, এখনও মাঠে ঢুকতে পারিনি।” নেট প্র্যাকটিস শুরুর চেষ্টা করেও পুরসভার ঠিকাদার-বাহিনীর কাছে কার্যত ঘাড়ধাক্কা খেতে হয়েছে বলে অভিযোগ পুলকবাবুদের। কবে শেষ হবে পার্কের কাজ? কবে ফের শুরু করা যাবে খেলাধুলো? তথ্য জানার অধিকার আইনে এ বার প্রশাসনের কাছে তা জানতে চেয়েছেন পুলকবাবুরা।
পার্ক বন্ধ। অগত্যা রাস্তাতেই ব্যাট-বলের লড়াই।
৮১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জুঁই বিশ্বাস অবশ্য বলছেন, “পার্কের সবুজের যত্নের জন্য বর্ষার অপেক্ষা চলছে। তার পরে ঘাস ছাঁটলে খেলাধুলোর সমস্যা থাকবে না। সন্ধ্যায় লোকে মাঠে বসে হাওয়া খেতে পারবেন।” পার্কে খেলা বন্ধ থাকা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্থানীয় বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “পার্কে খেলা বন্ধ হতে দেব না। বিষয়টি নিয়ে কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলব।”
জুঁইদেবীর বক্তব্য, পার্কে ক্রিকেট কোচিং বা খেলাধুলো নিয়ে তাঁদের আপত্তি নেই। কিছু লোক অহেতুক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। জুঁইদেবীর আত্মীয়, যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর। পার্কে আলো বসানো থেকে শুরু করে উন্নয়নমূলক নানা কাজের হোতা ছিলেন তিনি। তিনিও বলছেন, “পার্কে যা হচ্ছে, তা সবুজ বাঁচানোর স্বার্থেই।”
বছরখানেক আগে ওই পার্কেই বয়স্কদের বেড়ানোর জন্য সিমেন্টের ‘পাথওয়ে’ নির্মাণের অভিযোগে সরব হয়েছিলেন স্থানীয়েরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে ক্রীড়ামন্ত্রী, মেয়রকে চিঠি লিখে স্থানীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, পার্ক লাগোয়া একটি অংশ বেসরকারি সংস্থার হাতে দিয়ে ছোটদের এবং বয়স্কদের সময় কাটানোর জায়গা করা হয়েছে। শুধু কোচিং সেন্টারের জায়গাটি খেলাধুলোর জন্য ছাড়তে কীসের অসুবিধা?
সেই বিজ্ঞপ্তি।
নিউ আলিপুর থানা সূত্রে খবর, এক বছর আগে কাউন্সিলরের ‘ঘনিষ্ঠ’ কয়েক জনের বিরুদ্ধে পার্কে খোঁড়াখুঁড়ির অভিযোগ ওঠে। পুর-উদ্যোগে কাজ হচ্ছে বলে তাঁরা দাবি করলেও নথি দেখাতে পারেননি। কোচিং সেন্টারের এক কর্মীকে ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ হামলাকারীরা মারধর করে বলেও অভিযোগ। মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানাচ্ছেন, “পুর-প্রকল্পে পার্কে ঘাস গজানো ও সুদৃশ্য পাঁচিল গড়া হচ্ছে। আর কোনও পরিকল্পনা নেই।”
কী বলছেন এলাকাবাসীরা? ‘ও’ ব্লকের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বন্দনা রায় বা প্রাক্তন রঞ্জি ক্রিকেটার ভাস্কর গুপ্তেরা কেউই চান না খেলাধুলো বন্ধ হোক। আবার দু’জনেই সবুজায়নকে স্বাগত জানাচ্ছেন। বন্দনাদেবীর কথায়, “ঘাস উঠে মাঠ থেকে ধুলো উড়ত বলে কষ্ট হত। খেলাও চলত রাত ১১টা পর্যন্ত। আমরা চাই, সবুজ থাকুক। কিন্তু খেলার সময় বেঁধে দেওয়া হোক।” ভাস্করবাবুর মত, “পার্কে সুন্দর ঘাস গজানো হোক।” কিন্তু তাঁর প্রশ্ন, “মাঠের এক ধারে কোচিং সেন্টারের পিচে নেট প্র্যাকটিস চললে কী অসুবিধে?”
পার্ক বন্ধ। তা-ই আপাতত রাস্তার ধারেই চুটিয়ে ব্যাট-বল চালাচ্ছে টালিগঞ্জ থেকে আসা ক্লাস ফোরের অরূপ বা পাড়ার ছেলে ক্লাস সিক্সের রোহিত-রোহনরা। কাজ শেষ হতে এখনও মাস দুয়েকের ধাক্কা বলে পুরসভা সূত্রে খবর।

ছবি: প্রদীপ আদক
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.