জীবনে বহু মামলা তিনি লড়েছেন। কখনও জিতেছেন। কখনও হেরেছেন। কিন্তু মামলা জেতার পরে এ ভাবে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাদী ও বিবাদী পক্ষের কাছে কখনও কোনও আর্জি জানাননি তিনি। শুক্রবার সিঙ্গুর মামলা জেতার পর সেটাই করলেন টাটাদের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল।
মামলা জিতে তিনি সিঙ্গুরের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছনোর আর্জি জানালেন টাটা মোটরস-কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য সরকার, দু’পক্ষের কাছেই।
মক্কেল টাটা মোটরসের কাছে সমরাদিত্য পালের আবেদন, টাটারা এ বার সিঙ্গুরে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্য একটা সময়োপযোগী শিল্প গড়ে তুলুক। রাজ্য সরকারের কাছে বিরোধী পক্ষের এই আইনজীবীর আবেদন, পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থে সমস্ত বিরোধ ভুলে টাটাদের সঙ্গে বসে নতুন কারখানা তৈরির কাজ শুরু করার পরিস্থিতি তৈরি করা হোক। |
সাধারণত সমরাদিত্যবাবু মামলা নিয়ে কখনও প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দেন না। এ দিন কিন্তু তিনি ছিলেন কিছুটা ব্যতিক্রমী। আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, “আইনি লড়াই থাক আইনের জায়গায়। এ দিনের রায়ে আমি খুশি। কিন্তু আরও খুশি হব, যদি সিঙ্গুরে একটা বড় শিল্প গড়ে ওঠে। সকলের কাছে সেই আবেদন জানাব। আমি ভারতীয় হলেও বাঙালি। সিঙ্গুরের জমিতে শিল্প হলে বাংলারই ভাল।” টাটাদের আইনজীবী বলছেন, “আমি চাই রাজ্য সরকার ও টাটা-কর্তৃপক্ষ নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসে একটা সিদ্ধান্ত নিক।”
সিঙ্গুর জমি অধিগ্রহণ মামলায় জয় কী ভাবে এল, তার ব্যাখ্যা দিয়ে সমরাদিত্যবাবু বলেন, সংবিধানের ২৫৪ ধারায় বলা আছে জমি অধিগ্রহণ যৌথ তালিকাভুক্ত। প্রয়োজনে রাজ্য সরকার আইনের সংশোধন করতে পারে। কিন্তু তা করতে গিয়ে যদি কেন্দ্রীয় আইনের বিরোধিতা করা হয় তা হলে রাজ্যের সংশোধন বাতিল হয়ে যাবে। কলকাতা হাইকোর্ট এই যুক্তিতেই রাজ্যের আইনকে খারিজ করে দিয়েছে।
সিঙ্গুর মামলায় শুনানি চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। সমরাদিত্য পাল একশো দিনের বেশি সওয়াল করেছেন। সরকারের পক্ষে অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র, শক্তিনাথ মুখোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ও দীর্ঘ সওয়াল করেছেন। অনুসারি শিল্পগুলির পক্ষে আইনজীবী ছিলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তবে অসুস্থ থাকায় এ দিন রায় ঘোষণার সময়ে হাজির থাকতে পারেননি অনিন্দ্যবাবু। |