ঘুম ভাঙল বোমার আওয়াজে। গ্রামবাসীরা দেখলেন, পরের পর বোমা পড়ছে মাঠে। মাঠের দু’ধারে যুযুধান দুই দল। এলাকায় চকচকে মাস্কেট হাতে এলাকায় কিছু লোকের দাপাদাপি। বোমার ঘায়ে আহত হলেন এক মহিলা-সহ দু’জন।
শুক্রবার ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত এ ভাবেই দুই রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে রইল সিউড়ি ২ ব্লকের ইন্দ্রগাছা গ্রাম। সিপিএম-তৃণমূল একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছে। বীরভূমের পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “এ দিন এলাকায় মাস্কেট ও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে কয়েক জনকে দেখা গিয়েছে বলে শুনেছি। বোমাবাজিও হয়েছে। বেআইনি অস্ত্র কী ভাবে ও কোথা থেকে এল তার তদন্তের পাশাপাশি অস্ত্র উদ্ধারের জন্য অভিযান চালানো হবে।” এলাকার মানুষেরও দাবি, মাস্কেট কোথা থেকে দুষ্কৃতীদের হাতে এল, তা পুলিশ খুঁজে বের করুক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইন্দ্রগাছা গ্রামের পশ্চিম মালপাড়ায় বাড়ির অংশ রাস্তার উপরে নিয়ে বেড়া দেওয়াকে কেন্দ্র করে কিছু দিন ধরে অশান্তি চলছে। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, স্থানীয় তৃণমূল কর্মী আনন্দ মাল, বলিপদ মালদের মতবিরোধ হয় দলেরই সহদেব মালের সঙ্গে। বলিপদ বেআইনি ভাবে রাস্তায় বেড়া দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। প্রতিবাদ করেন সহদেব। |
তাঁকে সমর্থন করেন এলাকার সিপিএম সমর্থক বিকাশ মাহারা, নিত্য মাল, কপি মালেরা। এ দিন এই বিবাদের জেরেই দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। বোমার ঘায়ে জখম হন কপিবাবুর মেয়ে সুমিত্রা। তিনি ও আর এক আহত বাসিন্দা সিউড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরে পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
সিউড়ি ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি নুরুল ইসলামের দাবি, “ওই জায়গা ঘেরাকে কেন্দ্র করে গ্রামে একটু অশান্তি চলছিল। তবে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এ দিন ভোরে সিপিএম সমর্থকেরা আমাদের কর্মী বলিপদর বাড়িতে চড়াও হয়। তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে মারধরের পাশাপাশি মোটরবাইক ও বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। খবর ছড়িয়ে পড়তেই আমাদের দলীয় সমর্থকেরা বলিপদবাবুদের উদ্ধার করতে নেমে পড়েন এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।” তাঁর আরও অভিযোগ, “সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তাই অস্ত্র-বোমা বের করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সিপিএমের দুষ্কৃতীরা।” |
অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিএমের সিউড়ি জোনাল কমিটির সম্পাদক দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, “এই ঘটনায় সিপিএম জড়িত নয়। এটা তৃণমূলেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। অহেতুক আমাদের এক সমর্থকের বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর, লুঠপাট, মারধর করেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।” এলাকা দখল করতে তৃণমূলই সন্ত্রাস ছড়িয়ে সিপিএমের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে বলেও দেবাশিসবাবুর অভিযোগ।
রাজনৈতিক এই চাপান-উতোরের মধ্যে আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “১০ জনকে আটক করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।”
|
শুক্রবার তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি। |