ভাঙা গ্রিসের বিরুদ্ধে আজ
ধ্বংসের মেজাজে জার্মানি
বিপক্ষকে দৌড় করিয়ে হতোদ্যম করে দাও। তার পর সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে তাকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলো।
আক্ষরিক অর্থে এটাই গ্রিসের বিরুদ্ধে কাল জার্মান-মানসিকতা। স্ট্র্যাটেজিও।
সেই জার্মানি। যারা ছিয়ানব্বইয়ের পর ইউরো জেতেনি। সাম্প্রতিক বড় সাফল্য? শেষ বিশ্বকাপে তিন নম্বরের সান্ত্বনা। ‘জোয়াকিম লো ব্রিগেড’-এর এখনও চলছে পরীক্ষা। আর পরীক্ষার আসন্ন হার্ডল পর্তুগিজ কোচ ফের্নান্দো সান্তোসের গ্রিস। দু’হাজার চার ইউরোয় যারা ফুটবল বিশ্বকে হতচকিত করেছে। এ বারের কোয়ালিফায়ারে ১০ ম্যাচে যারা মাত্র পাঁচটা গোল খেয়েছে।
যদিও ঘটনা হচ্ছে, পরিসংখ্যানের পাহাড় বানিয়েও কোয়ার্টার ফাইনালে গ্রিসকে এগিয়ে রাখার সুযোগ নেই। কারণ, তাদের প্রতিপক্ষ ফুটবলের মহাশক্তিধর। আরও বড় কারণ, গ্রুপ লিগে চেক প্রজাতন্ত্রের পরে দু’নম্বরে শেষ করে নকআউটের টিকিট পেয়েছে। সর্বোপরি চোট আর কার্ড সমস্যায় থাকা টিমটাকে দেখে তাদের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।
জার্মানির আগের ম্যাচগুলোয় ঠিকঠাক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে সে। এ বার দেখার
গ্রিসের জালে বল ঢুকিয়ে এই ম্যাচেও রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখে কি না নেলি।
জোড়া হলুদ কার্ডে ক্ষত-বিক্ষত গ্রিস। গোলের জন্য যাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, সেই কারাগৌনিস এই ম্যাচে নেই। কাল হয়তো নেতাহীনতার রক্তাল্পতায় ভুগবে তারা। টিমের ‘হৃৎপিন্ড’ জোসে হলিবাসেরও এক অবস্থা। দু’বার হলুদ কার্ড দেখে ফেলায় তাঁকেও কাল জার্সি দেওয়া যাচ্ছে না। তেকাঠির নীচেও অবস্থা নড়বড়ে। এক নম্বর গোলকিপার কোস্টাস চালিকাসের জখম হ্যামস্ট্রিংয়ে উন্নতির লক্ষণ নেই। কিন্তু মজাটা হচ্ছে, এত কিছুর পরও জার্মানিকে তাদের হেলেনিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সিরিয়াস দেখাচ্ছে। এমনকী কোচ জোয়াকিম লো-ও বলছেন, “দক্ষতার কথাই যদি ভাবি, গ্রিস কিন্তু আমার চোখে একটা চ্যাম্পিয়ন দল। এটাই আমার প্রথম আর শেষ কথা।”
কিন্তু কেন?
বৃহস্পতিবার, সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তার ব্যাখ্যায় বসেছিলেন জার্মানির মিডফিল্ডার সামি খেদিরা। “এখানে অনেক টিমকে নিয়েই আলোচনা কম হয়েছে। ডেনমার্ক যেমন। কিন্তু সহজ কাজ কঠিন হলে কেমন লাগে, তার স্বাদ ডেনরা আগের ম্যাচে আমাদের দিয়েছে। তাই যতই গ্রিস টিমটায় নিজেদের সমস্যা থাক, ওদের গুরুত্ব দিতে হবে। ওরা খুবই সুসংহত। তারকাদের নিয়ে নাচানাচিটা কম করে। সব সময় টিম হিসাবে খেলে। ট্যাকটিক্যালিও শক্তিশালী। আক্রমণে ভাল ধার আছে। এই টুর্নামেন্টের কথাই ধরুন। ক’টা গোলের সুযোগ পেয়েছে? বেশি হলে চারটে। সেখান থেকেই তিনটে গোল করে দিয়েছে। যেটা ওদের দক্ষতাকেই সার্টিফিকেট দিচ্ছে। তাই আমাদের মাথা অসম্ভব ঠান্ডা রাখতে হবে। ধৈর্য ধরে রাখাটাও জরুরি। বলের দখল যতটা সম্ভব নিজেদের মধ্যে রাখা চাই। সেইসঙ্গে ওদের দৌড় করাতে হবে। যাতে একটা সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এবং সেই সুযোগে ম্যাচটা আমাদের বের করে নিতে হবে।”

এক নজরে দুই প্রতিপক্ষ
• গ্রিস কখনও হারাতে পারেনি জার্মানিকে। আগের আট ম্যাচে জার্মানি জিতেছে ৫টি। ড্র ৩টি।
• জার্মানি জিতেছে টানা ১৪টি ম্যাচ। তাদের জাতীয় রেকর্ড।
• গ্রিস তাদের শেষ ৮ ম্যাচে একটি করে গোল করেছে। জিতেছে তার মধ্যে মাত্র ২ টি।
• বড় টুর্নামেন্টে এটাই গ্রিসের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনাল। প্রথম বার ২০০৪ ইউরোয় তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
• এই নিয়ে পঞ্চম বার ইউরোর শেষ আটে জার্মানি। ওই ৫ বারই তারা ফাইনালে পৌঁছেছে।
• জার্মানির কোনও চোট সমস্যা নেই। ফিরছেন বোয়াতেং।
• গ্রিক শিবিরে আবার নেই-নেই হাওয়া। কার্ড সমস্যায় নেই কারাগৌনিস এবং হোলেবাস। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে বাইরে গোলকিপার চাল্কিয়াস।

বলা হচ্ছে, দু’বছর আগে বিশ্বকাপে যে খেলাটা জার্মানি খেলেছিল এ বার এখনও সেই ছন্দের ধারে-কাছে নেই। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও সত্যি, গোমেজ-মুলারদের এ বার অনেক বেশি পরিণত দেখাচ্ছে। আগের সেই চমকটা না থাকলেও ম্যাচ জেতার সন্ধিক্ষণে ঠিক কাজটা করে বেরিয়ে যাচ্ছে। “আমরা এখন অনেক বেশি মাথা ঠান্ডা রাখি। আগে যেটা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে সমস্যা হত। অনেক বেশি বুদ্ধি খাটিয়েও খেলি। আর গত বিশ্বকাপের সঙ্গে তুলনা করলে একটা কথাই বলতে হবে। এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্যটা থাকে পুরো নব্বই মিনিট মনঃসংযোগটা অটুট রাখা,” বলেছেন লো-র বিশ্বস্ত মিডিও।
এমনিতে নির্বাসন ওঠায় কাল লো-র প্রথম এগারোয় জেরম বোয়েটাংয়ের থাকা এক রকম নিশ্চিত। গ্রিসকে ওড়ালে শেষ চারের যুদ্ধে জার্মানির সামনে পড়ছে ইংল্যান্ড বা ইতালি। সেমিফাইনালে স্পেনকে নিশ্চয়ই চাননি? খেদিরাকে প্রশ্ন করা হলে চটজলদি জবাব, “কী হলে কী হবে যারা ভাবেন, সেই দলে আমাকে প্লিজ রাখবেন না। এখন গ্রিস ছাড়া অন্য কারও কথা ভাবছি না। কারণ ফুটবলে অঘটন ঘটাটাও স্বাভাবিক ঘটনা। সেটা আটকাতে হবে। তাই কাল অসম্ভব সাবধানী থাকব আমরা।”
অনুশীলনে জার্মানির দুই ভরসা মুলার ও বোয়াটেং।
আগের ম্যাচে গোল করা রাইটব্যাক লার্স বেন্ডারের জায়গায় বোয়েটাং। কোয়ার্টারে একটাই পরিবর্তন হতে যাচ্ছে জার্মানির প্রথম এগারোয়। আর গ্রিসে কারাগৌনিসের সম্ভাব্য বিকল্প মনে করা হচ্ছে পারমার দিকে পা বাড়িয়ে থাকা প্লে-মেকার সটিরিস নিনিসকে। অথবা তুলনায় বেশি অভিজ্ঞ গিওর্গাস ফোটাকিস। শোনা যাচ্ছে গিওরগিস মাকোসের নামও। গ্রিস কোচ অবশ্য তাঁর প্রথম এগারো নিয়ে মুখ বন্ধ রেখেছেন। কিন্তু সরব তাঁর টিমের মিডফিল্ডার কোস্টাস কাটসৌরানিস, “আমাদের শিবিরে এখন আত্মবলিদানের পরিবেশ। জেনে রাখবেন, জার্মানির বিরুদ্ধে নিজেদের ক্ষমতার শেষ বিন্দুটাও আমরা কাল দিতে যাচ্ছি।”
আর তাঁদের নির্বাসিত ক্যাপ্টেন কারাগৌনিস কী বলছেন? তিনি মানছেন ডাচদের মতো প্রতিভা তাঁদের নেই। নেই স্পেনের মতো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার ক্ষমতা। ইতালির ফুটবল সংস্কৃতির গর্বও তাদের সম্পদ নয়। জার্মান-যান্ত্রিকতাকেও তাঁরা নিজেদের খেলায় আনতে পারেন না। বলছেন, “আমাদের একটা জিনিসই সম্পদ। লড়াই। এই লড়াই দিয়েই বাজিমাত করি। কালও সেটা করব।”

নজর থাকবে যাঁদের দিকে

গোমেজ

ওজিল

সোয়াইনস্টাইগার

সামারাস

গেকাস

সালপিঙ্গিডিস




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.