‘মহেশরা সেই জানুয়ারি থেকেই ছক বেঁধে ষড়যন্ত্রটা শুরু করে’

প্র: শোনা যাচ্ছে লিয়েন্ডার টেনিস কর্তাদের জানিয়ে দিয়েছেন অলিম্পিকে যাবেন না?

ভেস: ঠিকই। মৌখিক জানিয়ে দিয়েছে।

প্র: এআইটিএ কিন্তু বলছে লিয়েন্ডারের নাম পাঠানো হয়ে গিয়েছে। ডেটলাইনও ওভার। এখন নাম তুললেও বদলানো যাবে না?
ভেস: নাম তুলে নেওয়ার একশোটা কারণ থাকতে পারে। যে কোনও প্লেয়ার যে কোনও সময় নাম তুলতে পারে।

প্র: গোটা ঘটনায় লিয়েন্ডারের প্রতিক্রিয়া কী?
ভেস: ও প্রচণ্ড আপসেট এটা ভেবে যে এক নম্বর ডাবলস প্লেয়ারকে তার পার্টনার বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হল না। বরঞ্চ যে মহেশ দেশকে শাসানি দিল, এআইটিএ-কে লাল চোখ দেখাল, তাকে বেছে নিতে দেওয়া হল। এমন দাঁড়াল যে এক নম্বর প্লেয়ারকে খেলতে হবে একজন জুনিয়রের সঙ্গে। লিয়েন্ডার জুনিয়রদের খুব পছন্দ করে। কিন্তু অলিম্পিকটা জুনিয়রদের প্রোমোট করার জায়গা নয়। তা ছাড়া সানিয়া যদি ২২ জুলাই গিয়ে বলে ও লি-এর সঙ্গে খেলবে না, তখন কী হবে? এআইটিএ তো মিক্সড ডাবলসের ব্যাপারে কোনও গ্যারান্টি দেয়নি।

প্র: যদি সানিয়া বা এআইটিএ লিখিত গ্যারান্টি দেয়, তা হলে কি লিয়েন্ডার পুনর্বিবেচনা করবে?
ভেস: একটা সুযোগ তখন খোলা থাকবে।

প্র: রিয়া পিল্লাই আর লারা দত্তের মধ্যে সম্পর্ক কেমন?
ভেস: ওদের সম্পর্ক ভাল।

প্র: তা হলে স্বামীদের মধ্যে এই নগ্ন ঝগড়াকে স্ত্রীরা থামাচ্ছেন না কেন?
ভেস: এটা ওদের আওতার বাইরে চলে গিয়েছে। যে পর্যায়ে বিদ্বেষ চলে গিয়েছে, তাতে দু’সপ্তাহ আগে মহেশ বলেছে লি হল মিথ্যেবাদী, প্রতারক এবং পিছন থেকে ছুরি মারা একটা লোক। এর পর আর কারওর কিছুই করার থাকে না।
বিষণ্ণ ভেস পেজ। বৃহস্পতিবার।—নিজস্ব চিত্র
প্র: শোনা যাচ্ছে প্রবল রাজনৈতিক চাপে এআইটিএ সিদ্ধান্ত বদলাল?
ভেস: এটা ভেবেই লিয়েন্ডার সবচেয়ে দুঃখিত। ও একটা নীতি মেনে এত কাল টেনিস খেলেছে। ও চিরকাল জেনে এসেছে পারফরম্যান্সই দল নির্বাচনের একমাত্র মাপকাঠি। আজ দেখতে হল রাজনীতি পারফরম্যান্সকেও হারিয়ে দিতে পারে।

প্র: ক্রীড়ামন্ত্রী অজয় মাকেনের ভূমিকা নিয়ে কী বলবেন?
ভেস: (কিছুক্ষণ চুপ) কী আর বলব? উনি এমন একজন যিনি শুরু থেকেই বলে যাচ্ছিলেন দুটো টিম পাঠানো হোক। এর থেকেই বুঝে নিন।

প্র: অনেকে বলছেন মিডিয়াও লিয়েন্ডারের বিরুদ্ধে গেছে...
ভেস: গেছেই তো। মিডিয়াকে মহেশরা ম্যানিপুলেট করেছে। টিভি চ্যানেলগুলোকে প্রচুর ভুল তথ্য খাইয়েছে।

প্র: অনেকে বলছেন লিয়েন্ডারের ওপর যতই অন্যায় হয়ে থাক। সানিয়ার সঙ্গে জুড়ি বেঁধে খেলার সবচেয়ে উপযুক্ত হলেন মহেশ। সদ্য ওরা ফরাসি ওপেন জিতে উঠেছেন...
ভেস: মনে রাখবেন ফরাসি ওপেনটা ক্লে-তে হয়েছিল। তার আগে শেষ টুর্নামেন্টে ওরা জেতে ২০০৯-তে। আর এই সময়ের মধ্যে লিয়েন্ডার মিক্সড ডাবলসে চারটে গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছে। দুটোতে ফাইনালে পৌঁছেছে। রেকর্ডটা পাশাপাশি রাখাই আমার উত্তর।

প্র: ডেভিস কাপে এর পর কী হবে?
ভেস: এআইটিএ তো বলছে আস্তাবল সাফ করবে, সব পরিষ্কার করবে। কিন্তু আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না। লিয়েন্ডারের বারবার মনে হচ্ছে আবার যদি রাজনৈতিক চাপ আসে, কে বলতে পারে? যত বারই সেটা মনে হচ্ছে, লিয়েন্ডার একটা অনিশ্চয়তায় ভুগছে।

প্র: ২১ জুন ২০১২ কি লিয়েন্ডার পেজের টেনিস জীবনে একটা বড় টুর্নামেন্টে হারার মতোই শোকের দিন?
ভেস: এটা লিয়েন্ডারের খুব দুঃখের দিন। গোটা পেজ পরিবারের দুঃখের দিন। ভারতীয় টেনিস প্রেমিকদের দুঃখের দিন।

প্র: মহেশের সঙ্গে লিয়েন্ডারের সত্যিকারের সমস্যাটা কী?
ভেস: সমস্যাটা হল মহেশ ভারতীয় টেনিসের দখল নিতে চায়। ও তাই অনিল খন্নাকে চায় না, লিয়েন্ডারকেও না। দখল নেওয়ার পথে পথের কাঁটা মনে করে লিয়েন্ডারকে।

অনিল খন্না যা বললেন
... উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দু’টো টিম পাঠানোটাই সেরা বিকল্প। ভূপতি আর বোপন্নার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকে মনে করেছেন, দেশের সর্বোচ্চ স্বার্থে সে রকম কিছু সিদ্ধান্ত এখনই নেওয়া ঠিক নয়। লিয়েন্ডার এক জন গ্রেট চ্যাম্পিয়ন। আমরা আশা করব, ও হতাশাকে পিছনে ঠেলে দিয়ে অলিম্পিকে যাবে এবং চিরাচরিত লড়াই করে দেশকে পদক এনে দেবে। আমরা ওকে অনুরোধ করছি, এই তিক্ততার জন্য ওদের (ভূপতি-বোপান্না) যেন ক্ষমা করে দেয়...

প্র: দল নির্বাচন নিয়ে যা ঘটল, সেটা কি তা হলে পরিকল্পিত?

ভেস: সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। একেবারে জানুয়ারি মাস থেকে ছক বেঁধে ষড়যন্ত্রটা শুরু করে। সবচেয়ে আশ্চর্যের হল গত বার ফরাসি ওপেনে হারার পর মহেশই এসে লিয়েন্ডারকে বলে, আমাদের মনে হচ্ছে বিকল্প পার্টনারের দরকার হয়ে পড়েছে। আমাদের বয়স্ক পাগুলো আর দিচ্ছে না। এর পর অক্টোবর মাসে রোহন বোপান্না আসে লিয়েন্ডারের কাছে। এসে বলে ও অলিম্পিক খেলতে চায়। এমনকী ই-মেলও করে। লি তখন ওকে বলেছিল ডেভিস কাপ বা অলিম্পিকে খেলানোর গ্যারান্টি আমি দিতে পারব না। কারণ, ওখানে সিলেকশন কমিটি আছে। এর পর যায় মহেশের কাছে। তখনই ছকটা তৈরি হয় যে কী ভাবে লিয়েন্ডারকে সরানো যায়।

প্র: কিন্তু লিয়েন্ডারের সঙ্গে সবার লাগছে কেন? এমনকী শোনা যাচ্ছে সানিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক ভাল নয়?
ভেস: সমস্যা এক জনেরই। মহেশের। ও-ই লি-র প্রতিপত্তিকে হিংসে করে। ওর পারফরম্যান্সকে হিংসে করে। বাকিরা সেই ছকে বোড়ে মাত্র। বোপান্নার কিছু করণীয় নেই। মহেশের কোম্পানি ওর স্পনসরশিপ দেখে। সানিয়ার স্পনসরশিপ দেখে মহেশ। মার্কেটিং দ্যাখে।

প্র: কিন্তু প্রকাশ অমৃতরাজেরও তো লিয়েন্ডারের সঙ্গে লেগেছিল?
ভেস: প্রকাশের ঘটনাটা অন্য রকম। ডেভিস কাপের সময়। বৃহস্পতিবার রাতে পার্টিতে গিয়েছিল। সেখানে প্রকাশ এত মদ খায় যে বমি করতে শুরু করে। রাত্তির দুটোর সময় ওকে ঘরে এনে ঠিকঠাক করা হয়। পরের দিন শুক্রবার সকালে সিঙ্গলস খেলা ছিল। লি তখন ওকে বলে, তুমি কাল খেলবে না। রোববার ডাবলসে খেলবে। এতে বিজয় অমৃতরাজ প্রচণ্ড চটে যায়। তবে লিয়েন্ডার শৃঙ্খলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত থেকে সরেনি।

প্র: শোনা যাচ্ছে এক প্রাক্তন প্রবাদপ্রতিম ডেভিস কাপার দল নির্বাচন নিয়ে অজয় মাকেনের সঙ্গে মহেশের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি কি বিজয়?
ভেস: (কিছুটা ইতস্তত করে) ঠিক বলতে পারব না। এর মধ্যে ঢোকা ঠিক হবে না।

প্র: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কি কোথাও লিয়েন্ডার পেজের কেরিয়ারের একটা মিল পাওয়া যায়? সৌরভ টিম ইন্ডিয়ার রূপকার হয়েও স্বার্থপর অভিযোগে বারবার অভিযুক্ত হয়েছেন। বলা হয়েছে ব্যক্তিগত স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেন। ভারতীয় টেনিসে টিম প্লেয়ার হিসেবে পরিচিত লিয়েন্ডারের ভাগ্যেও তো তাই ঘটল?
ভেস: হতেই পারে দু’জনের ক্ষেত্রেই এটা একটা প্যারাডক্স। পারফরম্যান্স এক কথা বলে, পরিস্থিতি আর এক কথা বলে। কিন্তু লি-র বেলা এটা ঘটাচ্ছে একটা খুবই ছোট গোষ্ঠী। দেশের হয়ে একশোটা ডেভিস কাপ ম্যাচ খেলেছে লিয়েন্ডার। এটা নিয়ে চারটে এশিয়াড, ছ’টা অলিম্পিক হত। তার পাশে মহেশ কোথায়? কিন্তু আক্রোশ এমন একটা জিনিস যা অন্ধ। আমি আবার মনে করিয়ে দেব, ওই ছোট গোষ্ঠীটার বাইরে কিন্তু আজও লিয়েন্ডার ভালবাসা পায় এবং সবাই ওকে টিম প্লেয়ার বলেই মনে করে।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
• আমি যদি এআইটিএ হতাম, সম্পূর্ণ অন্য ভাবে ব্যাপারটা হ্যান্ডল করতাম। আমি টিম সিলেকশনের আগে মহেশ আর লিয়েন্ডারকে ডাকতাম। ডেকে বলতাম উইম্বলডনের বাইরে দারুণ সুন্দর সুন্দর সব পার্ক আছে। সেগুলো খালিও পড়ে থাকে। আমি তোমাদের চারটে বক্সিং গ্লাভস পাঠিয়ে দেব। ওগুলো লাগিয়ে যত ইচ্ছা মারপিট করো। কিন্তু ওটা করো অলিম্পিক শেষ হওয়ার পরের দিন। আমরা দরকার হলে আর কী কী লাগবে তারও ব্যবস্থা করে দেব। কিন্তু অলিম্পিকটা তোমাদের এক সঙ্গে খেলতেই হবে। তাতে কোনও শর্ত দেওয়া মানব না।
• আমার মনে হয় দুটো কাহিনি এক নয়। আমাকে বাদ দিয়েছিল কোচ, প্লেয়ার নয়। লি-র সঙ্গে গণ্ডগোল লেগেছে প্লেয়ারদের। দুটো কাহিনি এক রকম নয়।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.