বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
কলকাতায় বসেই সিডনি-টরন্টোয় চুটিয়ে টিউশন
শিক্ষক বসে নিজের বাড়িতে। দিব্য চলছে তাঁর কোচিং ক্লাস। সপ্তাহে এক দিন, দু’ দিন, তিন দিন। যেমনটা সাধারণত হয়ে থাকে। তফাত শুধু একটাই। পড়ুয়ারা ছড়িয়ে আছে দেশে-বিদেশে।
দিল্লিই-মুম্বই-বাঙ্গালোর-আমদাবাদ তো বটেই, কলকাতার বহু মাস্টারমশাইয়ের কাছে এখন নিয়মিত ‘টিউশন’ নিচ্ছে বার্মিংহাম-সিডনি-টরেন্টোর মতো বহু বিদেশি শহরের বহু ছেলে-মেয়ে। মাধ্যমটা হল সেই ইন্টারনেট। যা কি না দুনিয়াকে মুঠোয় এনে দিয়েছে। এবং দেশে-বিদেশে এই ‘ই-টিউশনের’ চাহিদা দিন দিন বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন বেশ কিছু ‘ই-মাস্টারমশাই।’
রেডিও মারফত সঙ্গীত বা রন্ধনশিক্ষার প্রচলন অনেক আগেই হয়েছিল। একটা সময়ে পঙ্কজ মল্লিক বা পরবর্তীকালে সুবিনয় রায়ের মতো প্রথিতযশা গায়ক প্রতি রবিবার সকালে রেডিওয় গান শেখাতেন। ‘পল্লিকথা’ নামে কৃষকদের জন্য একটা বেতার-অনুষ্ঠানও খুব জনপ্রিয় ছিল। তবে ‘একমুখী’ ওই শ্রুতি-মাধ্যমে শিক্ষাদানের কিছু সীমাবদ্ধতাও ছিল। কোথাও বুঝতে অসুবিধে হলে শিক্ষার্থী তৎক্ষণাৎ তা শিক্ষককে জানাতে পারতেন না। যোগাযোগের একটা ঘাটতি থেকেই যেত।
কিন্তু অনলাইন শিক্ষণ-ব্যবস্থায় থাকছে দ্বিমুখী শ্রবণক্ষমতা, সঙ্গে দৃশ্যায়নও (অডিও-ভিস্যুয়াল)। ‘স্কাইপি’ নামে এক প্রযুক্তির সাহায্যে শিক্ষক-পড়ুয়া পরস্পরকে দেখতে পান, সরাসরি কথাবার্তাও বলা যায়। দু’জনের কম্পিউটারের সঙ্গেই ‘ওয়েব-ক্যামেরা’ বসানো থাকে। এর সুবাদে অনলাইনে গান-বাজনা, রান্নাবান্না,
ব্যয়াম, সাজগোজের পাশাপাশি লেখাপড়ার কোচিংয়েরও আজ রমরমা। ভৌগোলিক দূরত্বকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে ‘প্রাইভেট টিউশন চালাচ্ছেন কলকাতারও বহু শিক্ষক। চাহিদা কেমন?
কলকাতার ‘ই-টিউটর’ সম্বিত দত্ত জানাচ্ছেন, প্রবাসী বাঙালি পরিবারে ছোটদের বাংলা শেখানোর বাজার বেশ ভাল। দেশের মধ্যে ‘সায়েন্স সাবজেক্টের’ চড়া বাজারের কথা শোনা গিয়েছে অঙ্কের শিক্ষক সঞ্জয় ভট্টাচার্যের মুখে। “বছর তিনেক ই-টিউশন করছি। নাইন থেকে টুয়েলভ ক্লাস পড়াই। প্রায় রোজই নতুন-নতুন ছাত্র পাচ্ছি।” দুর্গাপুরের সহেলি দাশগুপ্ত নিয়মিত অন-লাইনে কোচিং নেয় বেহালার এক মাস্টারমশাইয়ের কাছে। কী ভাবে খোঁজ পেলেন? সহেলি জানাচ্ছেন, “নেট সার্চ করে। আমার কয়েক জন বন্ধুও অনলাইন টিউশন নেয়।”
এই ভাবে ই-টিউশনের ছবিটা কলকাতা-সহ সারা দেশে ক্রমশ উজ্জ্বল হচ্ছে বলে দাবি ‘ই-টিউটর’ দেবস্মিতা লাহিড়ির। তবে দেবস্মিতা এ-ও জানাচ্ছেন, প্রযুক্তি-নির্ভর এই দূর-শিক্ষণ এখনও শহুরে পড়ুয়াদের
একটা সামান্য অংশেই সীমাবদ্ধ। লেক টাউনের বাসিন্দা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র অঙ্কুর মিত্রের বক্তব্যেও এর প্রতিধ্বনি। তাঁর মতে, “ই-টিউশন’ নিচ্ছেন যাঁরা, অধিকাংশই এটাকে বাড়তি প্রশিক্ষণ হিসেবে দেখেন।”
একই সঙ্গে স্কাইপি’র দৌলতে বাদ্যযন্ত্রের ক্লাসও ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। তবলাবাদক অভিজিৎ ঘোষ জানাচ্ছেন, মার্কিন মুলুকের লাস ভেগাস, কানাডা থেকে শুরু করে লন্ডন-সহ ইউরোপের নানা শহর, অস্ট্রেলিয়া,
দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজিরিয়া, লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশে, এমনকী ওয়েস্ট ইন্ডিজেও তাঁর অনেক ছাত্র রয়েছে। “কলকাতায় বসে যখন আমি বিদেশের কোনও ছাত্রকে তবলা শেখাই, নিজেকে বিশ্বমানে পৌঁছে দেওয়ার মতো অনুভূতি হয়। নিজের প্রতি আস্থা বেড়ে যায়” মন্তব্য অভিজিতের।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.