পাশে স্কুল, স্বপ্ন বুনছেন রুস্তমেরা
বাজ পড়ে শরীরের একটা অংশ অকেজো হয়ে গিয়েছিল নওসের আলির। মাঠেঘাটে কাজ করার ক্ষমতা হারানোয় সংসার চালানোই দায়ে হয়ে ওঠে হুগলির গড় মান্দারনের এই দিনমজুরের। ছোটছেলে রুস্তমের পড়াশোনায় খুব আগ্রহ। কিন্তু তাকে পড়ানোর সামর্থ্য ছিল না নওসেরের। মুশকিল আসান হয়ে দেখা দিলেন গ্রামের পুরনো বাসিন্দা রবিয়েল হোসেন। চার বছর আগে রুস্তমকে মেমারির মামুন ন্যাশানাল স্কুলে নিয়ে আসেন প্রধান শিক্ষক রবিয়েল। বিনা খরচে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪২০ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে রুস্তম।
শুধু রুস্তম নয়, তার মতো এমন অনেক পড়ুয়ারই মুশকিল আসান মেমারির এই স্কুল। বিনা খরচে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছেন এমন অনেকে, যাদের এক সময়ে পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে তৈরি এই স্কুল তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
ছবি: উদিত সিংহ।
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মেমারির এই স্কুলটি। শতকরা ৬৫-৭০ ভাগ ছাত্রই দুঃস্থ পরিবার থেকে আসা। স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক কাজী মহম্মদ ইয়াসিন জানান, নানা ধর্মের পড়ুয়ারা তাঁদের স্কুলে পড়াশোনা করে। তবে হস্টেলে থাকার সুযোগ পায় শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছেলেরাই। অবস্থাপন্ন ঘর থেকে আসা পড়ুয়াদের থেকে মাসে আড়াই-তিন হাজার টাকা করে বেতন নেওয়া হয়। আর তা দিয়েই দুঃস্থ ছাত্রদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত হয়। ৬-৭টি বেসরকারি সংস্থা তাঁদের আর্থিক সাহায্য করে বলে জানান পরিচালন সমিতির সম্পাদক। রাজ্য সরকারের সংখ্যলঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের থেকেও সাহায্য মেলে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মহম্মদ ইয়াসিন জানান, উচ্চ মাধ্যমিকে এ বার ছিল তাঁদের স্কুলের দ্বিতীয় বছর। ২৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সকলেই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। গত বারও একই সংখ্যক পরীক্ষার্থীর সকলেই প্রথম বিভাগ পেয়েছিল। স্কুলের মাধ্যমিকের ফলও যথেষ্ট ভাল। ২০০৯ সালে থেকে ২০১২ পর্যন্ত মোট পরীক্ষার্থীর সকলেই প্রথম বিভাগে পাশ করেছে।
এ বার মাধ্যমিকে স্কুলের ছাত্র সিরাজুল হক পেয়েছে ৬৫১। তার বাড়ি বীরভূমের মুরারইয়ের কাশেমনগরে। বাবা মেরসাদ মুন্সি তাঁত বুনে যা রোজগার হয় তাতে বাড়ির সকলের দু’বেলা দু’মুঠো জোটানোই মুশকিল। ছেলে মাধ্যমিক পাশ করার পরে তাই স্কুলে এসে কেঁদে ফেলেন মেরসাদ। জলপাইগুড়ি থেকে আবু সিদ্দিকিকে মেমারির এই স্কুলে দিয়ে গিয়েছিলেন তার বাবা, পেশায় মসজিদের ইমাম আমিনুর ইসলাম। পায়ে সমস্যা থাকায় আবু স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে পারে না। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে সে পেয়েছে ৩৯৯। স্কুলের হস্টেলে বসে নানা রকম ছবিও আঁকে সে। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে কম্পিউটর ডিজাইনার হতে চাওয়া এই ছাত্র এ বার জয়েন্ট এন্ট্রাসেও ভাল ফল করেছে। আবু সিদ্দিকি বলে, “স্কুল পাশে না থাকলে কোনও স্বপ্নই দেখা সম্ভব হত না।” রুস্তমও বলে, “এই স্কুলে পড়ার সুযোগ না পেলে কিছুতেই এত দূর আসতে পারতাম না।” এত দূর হয়তো আসা হত না মুর্শিদাবাদের লালগোলার শেখ মিজান আলি, বাঁকুড়ার সোনামুখীর সাইফুদ্দিন-সহ আরও অনেকেরই। প্রধান শিক্ষক রবিয়েল হোসেন বলেন, “আমাদের এখানে শিক্ষকেরাও ছাত্রদের সঙ্গে থাকেন। তাই সর্বক্ষণ ওদের ঘষামাজা করার সুযোগ পাই। তা ছাড়া, গরিব ঘর থেকে আসা ছেলেরা জানে, এই সুযোগ তার কাছে মস্ত পাওনা। তাই তারাও নিজেদের নিংড়ে দেয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.