|
|
|
|
‘দ্বিচারিতা’য় অভিযুক্ত তৃণমূল |
পূর্বে কাল নিয়োগ-পরীক্ষা প্রাথমিকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
বাম-আমলে যে নীতির বিরোধিতা করে পূর্ব মেদিনীপুরে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া বারংবার ভণ্ডুল করে দিয়েছিল তৃণমূল, দিনের পর দিন তাণ্ডব চালিয়েছিল প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের অফিসের সামনে, শাসকের আসনে বসে তারাই এ বার বাম-আমলের নীতি মেনেই পরীক্ষা নিচ্ছে! মাঝখান থেকে প্রায় দু’-আড়াই বছর নষ্ট হয়েছে চাকরি-প্রার্থী হাজার-হাজার তরুণ-তরুণীর। অনন্ত মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন তাঁরা। তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাই সরাসরিই ‘দ্বিচারিতা’র অভিযোগ তুলেছে বামপন্থী সংগঠনগুলি। তবে, কোনও অবস্থাতেই তৃণমূলের মতো ‘নেতিবাচক’, ‘ধ্বংসাত্মক’ কিছু করে পরীক্ষা-প্রক্রিয়া যে তারা ভণ্ডুল করতে চায় না, তা-ও পরিষ্কার জানিয়েছে বাম-সংগঠনগুলি। আগামিকাল, রবিবারই জেলার ৮৩টি কেন্দ্রে ওই নিয়োগ-পরীক্ষা হবে। বাম-আমলে বাছাই করা ৪৪ হাজার তরুণ-তরুণীই পরীক্ষায় বসবেন। প্রায় আড়াই বছর ধরে আটকে থাকা নিয়োগ-পরীক্ষা নিয়ে আর যেন কোনও গণ্ডগোল না হয়, সেটাই প্রার্থনা ওই তরুণ-তরুণীদের।
পূর্ব মেদিনীপুরে প্রাথমিকে শিক্ষক-নিয়োগের প্রথম বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল ২০০৯-এর অগস্টে। সেই সময় জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে ক্ষমতায় ছিল বামেরাই। জেলায় প্রাথমিক শিক্ষকের ৩ হাজার ৯২৪টি শূন্যপদে নিযুক্তির জন্য তখন প্রায় সওয়া দু’লক্ষ আবেদন জমা পড়ে। সেই আবেদনগুলি স্ক্রুটিনির পরে প্রায় ৪৫ হাজার ‘বাছাই’ আবেদনকারীকে পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়েছিল। অন্য কোনও জেলাতেই এই বাছাই-পদ্ধতির বিরোধিতা না করলেও নন্দীগ্রাম-পরবর্তী পূর্ব মেদিনীপুরে শক্তি-মত্ততায় সব আবেদনকারীকেই পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবিতে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে তৃণমূল। ২০০৯-এ নির্ধারিত জেলা বিদ্যালয়-সংসদের ভোট না-হওয়ায় সংসদ ‘অবৈধ’ হয়ে পড়েছে এবং শিক্ষক-নিয়োগে তাদের কোনও এক্তিয়ার থাকতে পারে না বলে যুক্তি-জোগাড়ের চেষ্টায় নামে তৎকালীন প্রধান বিরোধীদল তৃণমূল। ২০০৯-এর ডিসেম্বর থেকে এই সব দাবি-আপত্তিতেই সংসদ অফিসের সামনে টানা অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করে তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত ‘শিক্ষা বাঁচাও কমিটি’। বাম-প্রভাবিত সংসদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ওঙ্কারপ্রসাদ রায়কে সংসদ অফিসে ঢুকতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি দিনের পর দিন। সংসদ অফিসের সামনে তৃণমূলের লোকজন সে-সময়ে কার্যত তাণ্ডবই চালিয়েছে। তিন-তিন বার পরীক্ষার দিনক্ষণ ঘোষণা করেও তৃণমূলের জঙ্গি আন্দোলন ও হুমকির জেরে তা স্থগিত করে দিতে বাধ্য হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ।
সেই সময় তৃণমূলের শিক্ষাসেলের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যিনি, সেই গোপাল সাহুই এখন তৃণমূল প্রভাবিত জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান। ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই রাতারাতি নিয়োগ-প্রক্রিয়া নিয়ে ভূমিকা বদলে ফেলেছেন গোপালবাবু এবং তৃণমূলের নেতারা। গোপালবাবু এখন বলছেন, “আমরা নীতিগত ভাবে সকল আবেদনকারীকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার পক্ষে। কিন্তু পূর্বতন রাজ্য সরকার এই নিয়ম চালু করে অন্য জেলায় ইতিমধ্যেই শিক্ষক নিয়োগ করেছে। ফলে ওই নিয়মেই এ বার পরীক্ষা নিতে হবে আমাদের।” বোধোদয়ে এত দেরি হল কেন, তার জবাব অবশ্য দেওয়ার জায়গায় নেই গোপালবাবুরা।
সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক নুরুল হক তাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরাসরি ‘দ্বিচারিতা’র অভিযোগ তুলে বলেন, “তৃণমূল অন্যায় ভাবে সে-সময়ে পরীক্ষায় বাধা দিয়েছিল। এর ফলে মূল্যবান দু’-আড়াই বছর নষ্ট হল কয়েক হাজার পরীক্ষার্থীর।” নুরুলবাবুর আরও অভিযোগ, “সংসদের ৪০ জন সদস্যের মধ্যে ৭ জন নির্বাচিত বামপন্থী শিক্ষক প্রতিনিধি রয়েছেন। তা সত্ত্বেও এ বার নতুন নিয়োগ-কমিটিতে আমাদের এক জনকেও রাখা হয়নি। ওরাই দলতন্ত্র চালাচ্ছে।” তৃণমূলের ভোলবদল নিয়ে কটাক্ষ সত্ত্বেও সুষ্ঠু ভাবে নিয়োগ-পরীক্ষার পক্ষেই বাম-সংগঠনগুলি। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক পরিতোষ পট্টনায়েকের বক্তব্য, “ধাপ্পা দিয়ে দু’বছরেরও বেশি সময় শিক্ষক নিয়োগ আটকে দিয়েছিল তৃণমূল। আমরা চাই এ বার অন্তত পরীক্ষা হোক। তবে, তৃণমূলের ন্যক্কারজনক এই ভূমিকা নিয়ে আমরা প্রচারও করব।” সিপিআইয়ের শিক্ষক সংগঠন বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক নারায়ণ বেরার বক্তব্য, “যে ভাবে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিয়ে তৃণমূল পরীক্ষা পরিচালনা করছে, তাতে অনিয়মের আশঙ্কাও থাকছে।” |
|
|
|
|
|