উত্তর কলকাতা
বিকল্পের খোঁজ
মরসুমি জট
হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল বিকল্প জায়গার ব্যবস্থা করার। তিন বছরেও তা সম্ভব হয়নি। ফলে বাজার বসছে একই জায়গায়। সমস্যায় ভুগছেন যাত্রী ও বাসিন্দারা। সমস্যায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। তাঁদের আশঙ্কা, যে কোনও সময়ে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাতে পারে। এই অবস্থা শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন শিয়ালদহ আদালত চত্বরের মরসুমি লিচুর বাজারের।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল সাফাই) দেবব্রত মজুমদার বলেন, “আদালত লিচু ব্যবসায়ীদের জন্য একটি স্বতন্ত্র জায়গা চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পুরসভা এখনও ব্যবস্থা করতে পারেনি। তাই হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে পুরনো জায়গায় ব্যবসা করার অনুমতি পুরসভা দিতে পারছে না। লিচু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
পুরসভা সূত্রের খবর, প্রতি বছর মে থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন শিয়ালদহ আদালত চত্বরে রাতে লিচুর পাইকারি বাজার বসে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে এখানে লিচু আসে। এখান থেকেই কলকাতা-সহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন বাজারে তা যায়। রাত ১১টা থেকে পরের দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত বাজার চলে। এই চত্বর পরিষ্কারের জন্য লিচু ব্যবসায়ীরা ২০০৬ পর্যন্ত পুরসভাকে অর্থও দিত।
আদালত চত্বরে এই বাজারের সমস্যা কী?
অভিযোগ, আদালত চত্বর ও আশপাশের এলাকায় প্রচুর লিচু পাতা পড়ে থাকে। বৃষ্টি পড়লে চলাফেরা করা মুশকিল হয়ে পড়ে। কাদা হয়। শিয়ালদহ স্টেশন থাকায় যাত্রীদের চলাচলে অসুবিধা হয়। যাত্রী এবং এলাকার বাসিন্দাদের থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরেই পুর-কর্তৃপক্ষ এই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এর পরেই ২০০৬-এ শিয়ালদহ (সিজন্যাল) লিচি ফ্রুট সেলার্স অ্যাসোসিয়েশন কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধে মামলা করে। কলকাতা হাইকোর্ট ২০০৯-এ পুরসভাকে লিচু বাজারের জন্য একটি স্বতন্ত্র জায়গার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেয়।
পুরসভা মৌলালির কাছে রামলীলা পার্কে এই পাইকারি লিচুর বাজার সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পুরসভা মনে করে ছিল, উদ্যানের মধ্যে থাকলে পাতা ছড়ানোর আশঙ্কা কমবে। নাগরিকদের অসুবিধা হবে না। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধায় সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হয়নি। এর পরে পুরসভার অনুমতি ছাড়াই আগের জায়গাই প্রতি বছর লিচুর বাজার বসছে।
শিয়ালদহ (সিজন্যাল) লিচি ফ্রুট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক আসিফ রাজা মুন্না বলেন, “আদালতের নির্দেশ মেনেই পুরসভার স্বতন্ত্র জায়গার ব্যবস্থা করার কথা। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সেই জায়গা পাওয়া যায়নি। তাই এখানেই বসছি। যে কোনও সময়েই এই বাজার উঠে যেতে পারে। চত্বর পরিষ্কার করার জন্য ২০০৬-এও পুরসভাকে তিন লক্ষ সত্তর হাজার টাকা দিয়েছি। পুরকর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
পুরসভার জঞ্জাল সাফাই দফতরের এক আধিকারিক জানান, এই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিলে পরোক্ষ ভাবে তাঁদের এখানে ব্যবসা চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। আইনত তা করা যাবে না। এখন এই বাজারের যাবতীয় ময়লা ব্যবসায়ীরাই কাছের ভ্যাটে ফেলে দেন বলে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের অরুণকুমার দাস বলেন, “রামলীলা পার্কে এই বাজার স্থানান্তিরত করলে পার্কের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া ছাড়াও সারা রাত গাড়ি যাতায়াত করবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অসুবিধা হবে। লিচু পাতা থেকেও এলাকা নোংরাও হবে। সেই কারণেই স্থানীয় বাসিন্দারা আপত্তি জানিয়েছেন।”
শিয়ালদহ কোর্ট চত্বরে রাতের লিচু বাজার প্রসঙ্গে পাঁচ নম্বর বরোর চেয়ারপার্সন অপরাজিতা দাশগুপ্ত বলেন, “জায়গার অভাবেই বাজারটি স্থানান্তরিত করা যায়নি। বছরের দেড় থেকে দু’মাস এখানে এই বাজার বসে। ব্যবসায়ীদের হঠাৎ করে উচ্ছেদও করা যায় না। সমাধান খুঁজতে পুরকর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.