রিবেরির হাত ধরে ফরাসি বিপ্লব
ফ্রান্স- ২ (মেনেজ, কাবায়ে)
ইউক্রেন-০
ম্যাচ রিপোর্টটা লিখতে বসে দু’বছর আগের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। দক্ষিণ আফ্রিকায় ফুটবল বিশ্বকাপ চলছে। প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে গিয়েছে দোমেনেকের ফ্রান্স। অনেককেই তখন বলতে শুনেছিলাম, লরা ব্লাঁ-র সাধ্য নেই এই ফ্রান্সকে আবার টেনে তোলার। বিতর্ক, ঝামেলা টিমটা ঝাঁঝরা। নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে।
আজ সেই সমালোচকদের মুখগুলো দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। ব্লাঁ যে অবস্থায় ফরাসি ফুটবলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, খুব বেশি লোকের পক্ষে সেটা সম্ভব হবে না। লোকে তো সম্মানই আর করত না টিমটাকে। কিন্তু এই ইউরোতে দেখুন। জিদান নেই, গালাস নেই, অঁরি নেই। তবু টিমটা আবার দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এই ফ্রান্স নক আউট পর্বে যাবেই।
আর এ বার থেকে ফ্রান্সকে সম্মানও করতে হবে বাকি টিমদের। দোমেনেকের জমানায় যে সম্মানটা আর ছিল না। কেন করতে হবে? শুক্রবার রাতে ফ্রান্সের দু’টো গোলকেই ধরুন। আমি লেখক বা সাহিত্যিক নই। কিন্তু মেনেজ যে গোলটা করল, তার সঙ্গে তিনটে শব্দ জুড়তেই হচ্ছে। ‘ক্ল্যাসিক কাউন্টার অ্যাটাক।’ নিজের মার্কারকে এক ঝটকায় ছিটকে দিয়ে রিবেরির বল নিয়ে ঢুকে পড়া...বেঞ্জেমাকে ছোট্ট পাস...বেঞ্জেমাকে ‘ফলো’ করে উঠে এসে মেনেজের বাঁ পায়ের নিখুঁত ফিনিশ। ছবির মতো এমন কাউন্টার অ্যাটাক এই ইউরোতে এখনও দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। দ্বিতীয় গোলটাও দুর্দান্ত। ফ্রান্সের কাবায়ে আর দেবুসি উঠে এল ইউক্রেন বক্সে। ওখান থেকে কাবায়ের গোল। প্রথমার্ধে কাবায়ে, দেবুসি এবং ক্লিচি—এই তিন জন রক্ষণ নিয়ে বড় বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ছিল, তাই ফ্রান্সকেও ফ্রান্সের মতো লাগছিল না।
উৎসব। মেনেজের গোলের পর সে ব্লুজ।
বরং আমি একটু অবাকই হয়েছিলাম, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে শুরুর দিকে ফ্রান্স একটু ডিফেন্সিভ হয়ে যাওয়ায়। ব্লাঁ এমনিতে ৪-৩-৩ ছকে টিমকে খেলাতে বেশি পছন্দ করেন। যাতে বলের উপর দখল অনেক বেশি থাকে, আক্রমণও বেশি তুলে আনা যায়। আজ সেই ব্লাঁ-কেই দেখলাম ৪-২-৩-১-রে ডিফেন্সিভ ফর্মেশনে চলে যেতে। যাঁর হাতে ফ্র্যাঙ্ক রিবেরির মতো ফুটবলার আছে, তিনি কেন ডিফেন্সিভ ছকে যাবেন? মনে হয়, প্রতিপক্ষ ইউক্রেনকে তাদের ঘরের মাঠে মেপে নেওয়ার একটু ব্যাপার ছিল। তার উপর ঝড়-বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকায় ছন্দটাও নষ্ট হয়েছিল কিছুটা। দ্বিতীয়ার্ধে রিবেরির দৌড় তো শেভচেঙ্কোদের মোটামুটি মুছে দিল ম্যাচ থেকে।
বৃষ্টিভেজা গ্যালারিতে ইউক্রেন সমর্থকেরা। খেলা তখন বন্ধ।
রিবেরির হাত ধরেই দ্বিতীয়ার্ধে ফরাসি বিপ্লব। গোটা বিশ্বে রিবেরির মতো উইঙ্গার খুব কমই আছে। ওর গতি যেমন, দু’তিন জন ডিফেন্ডারকে ড্রিবল করে বেরিয়ে যাওয়াও ব্যাপার নয়। জিদান তো রিবেরি নিয়ে একবার বলেছিল, “ও ফরাসি ফুটবলের রত্ন।” কেন বলেছিল, সেটা এ দিন রিবেরি বোঝাল। বলতে গেলে, দ্বিতীয়ার্ধে রিবেরির দৌড়, পিছন থেকে উঠে এসে দেবুসি-কাবায়ের সাপোর্ট প্লে-ই ম্যাচে ইউক্রেনের যাবতীয় স্বপ্ন শেষ করে দিল।
ইউরোর তালে তালে। দোনেৎস্কে ফরাসি সমর্থকেরা।
দুটো ম্যাচ থেকে চার পয়েন্ট, ফ্রান্স দারুণ ভাবে উঠে এল নক আউটের দৌড়ে। প্রথমার্ধেই অবশ্য ওদের গোল পেয়ে যাওয়ার কথা। মেক্সেসের অসাধারণ হেডটা অবিশ্বাস্য দক্ষতায় উড়ে গিয়ে বাঁচায় ইউক্রেনের গোলকিপার। ইউক্রেনকে ভাল কিছু করতে হলে শেভচেঙ্কোকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হত। সেটা নেয়নি, তা নয়। গোলে শটও একটা নিয়েছিল। কিন্তু টিম হিসেবে ফ্রান্স আর সুইডেনের তফাত আছে। তা ছাড়া শেভচেঙ্কোর পক্ষে রোজ রোজ রূপকথা লেখা সম্ভব নয়। তবু ওর জন্যই ফ্রান্স রক্ষণে বেশ কিছু ফাটল চোখে পড়ল। বিশেষ করে সেন্ট্রাল ডিফেন্স বলে কিছু নেই ফ্রান্সের। নক আউট পর্বের আগে এই সমস্যাগুলো মিটিয়ে ফেলা দরকার। মনে রাখা ভাল, ইংল্যান্ড বা ইউক্রেন কেউই কিন্তু শক্ত চ্যালেঞ্জ নয়।
জার্মানি বা স্পেন কিন্তু একটা ভুলও ক্ষমা করবে না।

ছবি: এএফপি




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.