রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে সোনিয়া বনাম মমতা লড়াইয়ে ইউপিএ সরকারে কতটা সঙ্কট ঘনীভূত সেটা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। কিন্তু লিয়েন্ডার বনাম মহেশ লড়াই ভারতীয় টেনিসকে যে গভীর সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
মাত্র বিয়াল্লিশ দিন দূরে থাকা লন্ডন অলিম্পিকে ডাবলসে একটাই টিম পাঠাবার সিদ্ধান্ত শুক্রবার বেঙ্গালুরুতে নিল এআইটিএ-র নির্বাচন কমিটি। এবং সেই জুটি হল লি-হেশ। কিন্তু মহেশ আগেই পেশাদার সার্কিটে বর্তমানে তাঁর নিয়মিত পার্টনার রোহন বোপান্নাকে নিয়ে এক যৌথ ই-মেলে ভারতীয় টেনিস সংস্থার মহাসচিব অনিল খন্নাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, অলিম্পিকের জন্য তাঁদের নাম যদি বিবেচনা করা হয় তা হলে যেন একমাত্র জুটি হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। দু’জনের কাউকেই যেন একক ভাবে তৃতীয় কোনও প্লেয়ারের জুটি হিসেবে বিবেচনা করা না হয়।
সোজা কথা, নাম না করে তাঁরা দু’জনেই লিয়েন্ডারের সঙ্গে অলিম্পিকে খেলতে অস্বীকার করেন। যেটাকে পাত্তা না দিয়ে এআইটিএফের তরফে পালটা ই-মেলে মহেশ-বোপান্নাকে বলা হয়, তোমরা লিখিত ভাবে আমাদের জানাও নির্বাচকেরা যে প্লেয়ারের সঙ্গে খেলার জন্য তোমাদের কাউকে একক ভাবে বাছবে, তোমরা তার সঙ্গেই নিঃশর্তে অলিম্পিক ডাবলসে দেশের স্বার্থে খেলতে রাজি আছ। পাশাপাশি এটাও বলা হয়, কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকে তোমাদের ই-মেলের কপি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু অলিম্পিক প্রস্তুতির জন্য অন্য প্লেয়ারদের মতো তোমাদের দু’জনকেও প্রচুর টাকা দিয়েছে সরকার। |
এ দিন শুধু লি-হেশ জুটিকেই অলিম্পিকের জন্য বাছার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এক নির্বাচক বললেন, “আমরা সংখ্যা নয়, মানের দিকে নজর দিয়েছি। ভারতীয় টেনিসে এই মুহূর্তে তিন জন বিশ্বমানের ডাবলস প্লেয়ার আছে। লিয়েন্ডার, মহেশ, বোপান্না। কিন্তু দু’টো জুটি পাঠাতে হলে এদের মধ্যে এক জনকে খুব সাধারণ মানের এক জন পার্টনারকে নিয়ে খেলতে হত। এআইটিএ চায় না, অলিম্পিকে কোনও দুর্বল ডাবলস টিম পাঠাতে। আমাদের দুর্ভাগ্য, তিন জন দুর্দান্ত ডাবলস প্লেয়ারের মধ্যে এক জনের অলিম্পিকে যাওয়া হবে না।”
কিন্তু সে ক্ষেত্রে মহেশ-বোপান্না জুটির বদলে লিয়েন্ডার-মহেশ জুটিকে বাছা হল কেন? যেখানে লি-হেশ এ বছর একটাও ম্যাচ একসঙ্গে খেলেননি! অথচ মহেশ-বোপান্না গত ছ’মাস একসঙ্গে খেলে দুবাই ওপেন জেতা ছাড়াও তিনটে মাস্টার্সের সেমিফাইনালে উঠেছেন। এই মুহূর্তে বিশ্ব ডাবলসে সাত নম্বর টিম। নির্বাচকদের পালটা বক্তব্য হল, এই মুহূর্তে বিশ্ব ডাবলস র্যাঙ্কিংয়ে তিন জনের মধ্যে লিয়েন্ডার (৭) সবার আগে। সেই বিচারে স্বভাবতই অলিম্পিকে যাওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার প্রাপ্য তাঁরই। সে জন্য প্রথমেই নির্বাচকেরা লিয়েন্ডারকে নির্বাচিত করেন এ দিন। এর পরে তাঁর পার্টনার বাছার কাজ শুরু হয়। মহেশ (১৪) র্যাঙ্কিংয়ে বোপান্নারও (১২) পিছনে থাকলেও লি-হেশ জুটির পেশাদার সার্কিটে গত ১৫ বছরের বিশাল অভিজ্ঞতা আর দুর্দান্ত সাফল্যের কথা মাথায় রেখেই ওঁদের জুটিকে বেছে নেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, লি-হেশ দু’জনেই ৫০টা করে এটিপি ডাবলস খেতাব জিতেছেন। যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি (২৬টা) খেতাব দু’জনের একসঙ্গে খেলে জেতা। দীর্ঘ ৯ বছর পর গত মরসুমে দু’জনে সার্কিটে জুটি বেঁধে খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও তিনটে খেতাব জিতেছিলেন।
কিন্তু এগুলো যদি লি-হেশ জুটির আলোর দিক হয়, তা হলে অন্ধকার দিকও আছে। বহু বার বহু ইস্যুতে দু’জনের সম্পর্কে ভাঙন ধরেছে। সর্বশেষ যেটা ভারতীয় টেনিসমহলে ঘোরাঘুরি করছে যে, গত বছরের শেষের দিকে লিয়েন্ডারই প্রথমে বোপান্নাকে বলেন, তাঁর সঙ্গে নতুন মরসুমে জুটি বাঁধতে। যাতে দু’জনে অলিম্পিকে খেলতে পারেন। সেটা কোনও ভাবে মহেশের কানে পৌঁছয়। এবং তিনি ক্ষুব্ধ হন, কী করে লিয়েন্ডার তাঁর সঙ্গে খেলতে-খেলতে বোপান্নাকে এ রকম প্রস্তাব দেন! ৯ বছর পর লি-হেশ জুটির তো পুনর্মিলনই হয়েছিল, ২০১২ অলিম্পিকে একসঙ্গে খেলার লক্ষ্য নিয়ে। শেষ পর্যন্ত মহেশ-বোপান্না জুটিকেই এ বছর সার্কিটে একসঙ্গে খেলতে দেখা যায়। সেই থেকেই দু’জনেরই রাগ লিয়েন্ডারের ওপর। এমনকী গত ছ’মাস লিয়েন্ডারের সঙ্গে মহেশ-বোপান্নার কোনও বাক্যালাপ পর্যন্ত নেই! |
এই অবস্থায় লি-হেশ জুটির থেকে অলিম্পিকে কতটা ভাল পারফরম্যান্সের আশা করা সম্ভব? লিয়েন্ডারের এটা ষষ্ঠ অলিম্পিক। শ্যুটার রনধীর সিংহ ছাড়া কোনও ভারতীয় এত বার অলিম্পিকে যাননি। লি-হেশ জুটি চার বার অলিম্পিকে নামলেও এখনও পদকহীন। ২০০৮ বেজিং অলিম্পিকের আগেও মহেশ এআইটিএ-কে এ রকমই চিঠি দিয়ে লিয়েন্ডারের সঙ্গে ডাবলস খেলতে অস্বীকার করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘দেশের স্বার্থে’ রাজি হয়ে যান। এআইটিএ এ বারও সে রকমই কিছু আশা করছে। তাঁদের কারও কারও ব্যাখ্যা, লিয়েন্ডারের অলিম্পিক মেডেল (১৯৯৬ আটলান্টায় সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ) থাকলেও মহেশের নেই। লি-র যেমন ৩৯ বছর বয়স, হেশের তেমনই ৩৮ বছর। এটাই শেষ অলিম্পিক। অধরা অলিম্পিক মেডেল পাওয়ার একটা শেষ চেষ্টা করবেই ও। সে জন্য শেষমেশ হয়তো খেলতে রাজি হয়ে যাবে লিয়েন্ডারের সঙ্গে।
এ ছাড়াও এ দিনই আইটিএফের কাছে সানিয়া মির্জার জন্য মেয়েদের ডাবলস এবং মিক্সড ডাবলসের ওয়াইল্ড কার্ডের আবেদন করেছে এআইটিএ। ধরে নেওয়া হচ্ছে, বিশ্ব ডাবলস র্যাঙ্কিংয়ে ১২ নম্বর সানিয়া ওয়াইল্ড কার্ড পেয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে মিক্সড ডাবলসে ভারতের প্রথম পছন্দের টিম হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা সদ্য ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন মহেশ-সানিয়া জুটির। কিন্তু মহেশ যদি পুরুষ ডাবলস না খেলেন, তা হলে অলিম্পিকের নিয়ম মতো তিনি মিক্সড ডাবলস খেলার যোগ্যতা হারাবেন। এআইটিএ-র অনেকে মনে করছেন, সে কারণেও মহেশ শেষ পর্যন্ত লি-র সঙ্গে খেলতে রাজি হয়ে যাবেন। ২১ জুন আন্তর্জাতিক টেনিস সংস্থার থেকে অলিম্পিকের খেলোয়াড় তালিকা প্রকাশের শেষ দিন। সুতরাং তার মধ্যেই মহেশকে নিজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। এআইটিএ-র এক বিশ্বস্ত সূত্র এ দিন জানালেন, মহেশ একেবারে অনড় থাকলে সে ক্ষেত্রে বোপান্নাকে ডাকা হবে লিয়েন্ডারের সঙ্গে খেলতে। বোপান্নাও খেলতে অস্বীকার করলে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে লিয়েন্ডার-সোমদেব দুর্বল জুটিকে অলিম্পিকে পাঠানো হবে। পাশপাশি মহেশ-বোপান্নার বিরুদ্ধে কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। দু’বছর পর্যন্ত তা
সোজা কথায়, সর্বভারতীয় টেনিস সংস্থা এবং তার নির্বাচন কমিটিকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসেছেন মহেশ ভূপতি! |