‘পৃথক’ সেলেই পিঙ্কি, জেলে ডাক্তারি পরীক্ষা
বৃহস্পতিবার বেঁকে বসেছিলেন। শুক্রবার লিঙ্গ নির্ধারণের পরীক্ষা দিতে রাজি হয়ে গেলেন বিতর্কিত ‘মেয়ে’ অ্যাথলিট পিঙ্কি প্রামাণিক। এক বিবাহবিচ্ছিন্নাকে ধর্ষণ, প্রতারণা, মারধরের অভিযোগে বারাসত আদালত এ দিন পিঙ্কিকে ১৪ দিন জেল হাজতের নির্দেশ দেয়। সেখানেই বিচারক জানান, জেলে থাকাকালীনই দোহা এশিয়ান গেমসের সোনাজয়ী ক্রীড়াবিদের লিঙ্গ নির্ধারণের পরীক্ষা করবেন উত্তর ২৪ পরগণার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।
একই সঙ্গে শুক্রবার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ঈশানী চক্রবর্তীর নির্দেশ, দমদম সেন্ট্রাল জেলে আলাদা সেলে রাখতে হবে পিঙ্কিকে। কোনও ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে রাখা যাবে না। তাকে রাখাও হয়েছে পৃথক সেলে। যা থেকে স্পষ্ট, পিঙ্কি পুরুষ না মেয়ে তা নিয়ে পুলিশের মতো ধন্দে আদালতও। এ দিকে সাইয়ের ডাক্তাররা জানাচ্ছেন, হরমোনের প্রভাবে শরীরে নানারকম পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। সেটা কোনও মেয়ে অ্যাথলিটের হাতে থাকে না।
বারাসত কোর্টে পিঙ্কি
প্রামাণিক। ছবি: সুদীপ ঘোষ
সবাই-ই তাই ডাক্তারি পরীক্ষার উপরই জোর দিচ্ছেন।
ধর্ষণের অভিযোগটি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য কিনা জানতে আদালত সরকারি পর্যায়ে ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশ দিলেও কেন তেঘরিয়ার একটি নার্সিংহোম হঠাৎই বৃহস্পতিবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পিঙ্কিকে ‘পুরুষ’ ঘোষণা করে দিল, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। জেরার সময় অসুস্থ হয়ে পড়ায় পিঙ্কিকে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। কিন্তু পুলিশের দাবি, পিঙ্কির লিঙ্গ নির্ধারণের নির্দেশ নার্সিংহোমকে দেওয়া হয়নি। বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, “আমরা ওঁকে কাছাকাছি নার্সিংহোমে নিয়ে যাই ঠিকই। কিন্তু লিঙ্গ নির্ধারণ করতে বলিনি।” তবে সে ক্ষেত্রেও প্রশ্ন, সরকারি হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে কেন পুলিশ নার্সিংহোমে নিয়ে গেল আটক পিঙ্কিকে। অনামিকা এবং পিঙ্কিকে কেন বৃহস্পতিবার একই গাড়িতে আদালতে আনা হয়, সেই প্রশ্নেও সদুত্তর দিতে পারেনি পুলিশ।
শুক্রবার দুপুর ১টা নাগাদ পিঙ্কিকে বারাসত আদালতে নিয়ে আসে পুলিশ। অভিযোগকারিণী অনামিকা আচার্য হাজির হন প্রায় একই সময়ে। মামলার সওয়াল শুনতে ভিড় উপচে পড়েছিল। উৎসাহীদের চেঁচামেচিতে বিরক্তিও প্রকাশ করেন বিচারক। বলেন, “এটা আর পাঁচটি মামলার মতোই। একে আলাদা গুরুত্ব দেওয়ার কী আছে!” নীল জিনস ও টি শার্ট পরা পিঙ্কিকে অবশ্য এজলাসের লক-আপে ঢোকানো হয়নি।
সওয়াল-জবাব শুরুর আগেই এ দিন ‘মেয়ে’ অ্যাথলিট হিসাবে পিঙ্কির জেতা সোনা-রুপোর পদক এবং শংসাপত্র আদালতে জমা দেন তাঁর আইনজীবীরা। এফআইআরের অসঙ্গতি তুলে তাঁরা প্রশ্ন করেন, “দু’বছর ধরে পিঙ্কির সঙ্গে অনামিকাদেবী রয়েছেন। যদি ধরেই নেওয়া যায় পিঙ্কি পুরুষ এবং সহবাস করছেন, তবে অনামিকাদেবীর ইচ্ছাতেই তা করেছেন। তা হলে সেটা ধর্ষণ হয় কী করে? তা ছাড়া স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স না করে কী ভাবে অন্য একজনকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতির কথা বলছেন অভিযোগকারিণী?”
পিঙ্কির আইনজীবীদের দাবি, “বিভিন্ন সর্বভারতীয় ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে এবং রেলে চাকরির সময় লিঙ্গ নির্ধারণের পরীক্ষা দিয়েছে পিঙ্কি। তাতে সে মেয়ে বলেই প্রমাণিত। পিঙ্কির মা-বাবাও মেয়ে হিসেবেই ওঁকে বড় করেছেন।” অনামিকাদেবীর আইনজীবীরা অবশ্য পাল্টা বলেন, “সার্টিফিকেটে লিঙ্গ নির্ধারণের কথা কোথাও লেখা নেই। নার্সিংহোমেও মেডিক্যাল বোর্ড পিঙ্কিকে পরীক্ষা করে ‘পুরুষ’ বলেই রায় দিয়েছে।” যদিও নার্সিংহোমের ওই দাবি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
আদালতে সওয়াল-পাল্টা সওয়ালের বাইরেও এ দিন বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য সামনে এসেছে। পিঙ্কির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করার আগে অভিযোগকারিণী বেশ কিছু প্রাক্তন অ্যাথলিট, রাজ্য অ্যাথলেটিক সংস্থার কর্তার সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে বা ফোনে যোগাযোগ করেন বলে জানা গিয়েছে। রাজ্য অ্যাথলেটিক্সের এক কর্তার দাবি, “আমাকে ফোন করে অনামিকা বলে, পিঙ্কিকে আমি বিয়ে করতে চাই। ও কথা দিয়েও এখন কথা রাখছে না। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ও তো মেয়ে! বিয়ে করবে কি করে? অনামিকা বলল, না স্যার। পিঙ্কি ছেলে। প্রমাণ হিসেবে কিছু ছবি আমার মোবাইলে তোলা আছে। আপনাকে দেখাতে যাব? আমি রাজি হইনি। বলে দিই ওসব নোংরামির মধ্যে আমি নেই।”
জানা গিয়েছে, পিঙ্কি এবং অনামিকাদেবীর ঝামেলা অনেকদিন ধরেই চলছে। মাঝে তা মিটেও যায়। এ দিন প্রাক্তন এক অ্যাথলিট বলেন, “পিঙ্কি আর অনামিকার সঙ্গে থাকতে চাইছিল না। আমাকে একটা মেয়েদের হস্টেল দেখতে বলেছিল অনামিকার জন্য। অনামিকাকে দু’ লক্ষ টাকাও দেবে বলেছিল। কিন্তু অনামিকা বেশি টাকা চাওয়াতেই গণ্ডগোল বাধে।” পিঙ্কির পরিবার সূত্রে খবর, অনামিকার সঙ্গে মেয়ের ঝামেলার কথা পিঙ্কির বাবাও জানতেন। কিন্তু পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মেয়েকে সামাল দেওয়া বাবা-মার পক্ষে সম্ভব হয়নি। পিঙ্কির মা পুস্প প্রামাণিক এ দিনও বলেন, “পিঙ্কি তো মেয়েই। ওকে মেয়ে বলেই মানুষ করেছি। ছোটবেলা থেকেই একটু ডানপিটে স্বভাবের ছিল। মেয়েদের সঙ্গেই তো খেলত। কোনওদিন তো সমস্যা হয়নি।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.