স্নাতক স্তরের পরীক্ষা শুরুর মুখে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামকের মাথার উপরে তৃণমূল শিক্ষাসংস্কৃতি মঞ্চের নেতাকে উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করে বিতর্কের মুখে পড়লেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। চলতি মাসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অচিন্ত্য বিশ্বাস গৌড়বঙ্গ শিক্ষাসংস্কৃতি উন্নয়ন মঞ্চের কার্যকরী সভাপতি সমর মিশ্র ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক পল্লব দাসগুপ্তকে উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যনির্বাহী সমিতির অনুমোদন ছাড়াই কী ভাবে উপাচার্য রাজ্যের শাসক দলের অনুগামী এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে ওই পদে নিয়োগ করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবককেরা। উপাচার্য অবশ্য দাবি করেছেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাওয়ায় তাঁকে এই বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে হয়েছে। উপাচার্য বলেন, “গত ৮ জুন ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দেন। সেই কারণে সময় মতো পরীক্ষা নেওয়া এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রেজাল্ট বার করার জন্য অবসরপ্রাপ্ত ওই অধ্যাপককে পরীক্ষা নিয়ামক বিভাগে উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। ওই দুজনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হবে।” কিন্তু কার্যনির্বাহী সমিতির অনুমতি ছাড়াই শাসক দলের অনুগামী কোনও অবসরপ্রাপ্তকে তিনি উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করতে পারেন কি না সেই প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেছেন, “যে দুইজন উপদেষ্টাকে নিয়োগ করা হয়েছে তাদের একজন যে একটি সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি তা আমার জানা ছিল না। পরে বিষয়টি জেনেছি। কার্যনির্বাহী সমিতির পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি অনুমোদনের জন্য আনা হবে। সমিতি যদি বলে আমি উপদেষ্টা বসিয়ে ঠিক করিনি তবে তাদের তুলে নেওয়া হবে।” বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গৌড়বঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী পরীক্ষা নিয়ামক নেই। এরই মধ্যে অস্থায়ী ভাবে ৬ জন পরীক্ষা নিয়ামকের পদ সামাল দিয়েছেন। বতর্মান ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামক রজতকিশোর দে ৮ মে পরীক্ষা নিয়ামক পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আগের উপাচার্য গোপা দত্তকে চিঠি দিয়েছিলেন। তখন তাঁকে অব্যাহতি না দিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। বতর্মান উপাচার্য ১৪ মে যোগ দেওয়ার পরে ফের ৮ জুন পরীক্ষা নিয়ামকের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি পাঠান রজতকিশোরবাবু। ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামক বলেন, “স্ত্রী ও মেয়ে অসুস্থ। পরীক্ষা নিয়ামকের পদ সামলে পরিবারে সময় দিতে পারছি না। পারিবারিক কারণে পরীক্ষা নিয়ামকের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রমাণে ঘাটতি রাখব না।” পরীক্ষা নিয়ামকের মাথার উপর উপদেষ্টা বসানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে তৃণমূল প্রভাবিত গৌড়বঙ্গ শিক্ষাসংস্কৃতি উন্নয়ন মঞ্চের সম্পাদক নরেশ রায়। তিনি বলেন, “নতুন উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিশ্বদ্যালয়ের দুনীতি ধরতে শুরু করায় কিছু আধিকারিক তাঁকে ব্ল্যাকমেল করছেন। ২৫ জুন থেকে স্নাতক স্তরের পরীক্ষা। পরীক্ষার মুখে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামক অব্যাহতি চেয়ে চিঠি পাঠিয়িছেন। উপাচার্যকে হেনস্থা করার জন্যই এটা করা হয়েছে। উপাচার্য সেটা বুঝতে পেরেই ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামকের মাথার উপরে দুজন উপদেষ্টা বসিয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থেই এটা করা হয়েছে। উপাচার্যের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানচ্ছি।” গৌড়বঙ্গ অধ্যাপক মঞ্চের সম্পাদক দিলীপ দেবনাথ বলেন, “উপদেষ্টা বসিয়ে কতটা কাজের সুবিধা হবে সেটা সময়ই বলবে।” ওয়েবকুটার জেলা সম্পাদক সোহরাব আলি বলেন, “যাদের উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে তাঁরা শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। ওঁদের পরিবর্তে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত সিনিয়র শিক্ষকদের উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করা হলে ভাল হত।” |