৪৫ বিঘা আমবাগানের মালিক ছিলেন. এলাকায় সবার চেয়ে বেশি সম্পত্তির মালিকও ছিলেন। অথচ নিয়মিত রিক্সা চালাতেন শহরে যেতেন। এলাকার লোকজনই নয়, ওই প্রৌঢ়ের সঙ্গে বনিবনা ছিল না পরিবারের সদস্যদেরও। এমনই মানসিকতার ওই প্রৌঢ়ের খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়াল। মালদহের রতুয়ার কৈরিটোলা এলাকার ঘটনা। রবিবার সকালে বাড়ির উঠোন থেকে ওই প্রৌঢ়ের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে ওই প্রৌঢ়কে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম পাঁচু মন্ডল (৫৭)। ঘটনার পরই মৃতের স্ত্রী কিশোরী মেয়েকে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। মৃতের বড় মেয়ের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তদন্তে নেমেছে। মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেছেন, “সম্পত্তি নিয়ে সমস্যার জেরে খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। স্ত্রী ওই ঘটনায় জড়িত কি না তা দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি অন্য কোনও কারণে অন্য কেউ খুন করেছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্ত্রী মাধুরী দেবী ছাড়াও দুই মেয়ে, এক ছেলে পাঁচুবাবুর। বড় মেয়ে সনিতা বিবাহিত। প্রচুর সম্পত্তির মালিক হলেও ছোট মেয়ে শম্পা ও ছেলে নীতেনকে তিনি স্কুলে পড়াতেন না। মাধুরী দেবী ছেলেকে মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেখানেই ছেলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। এ ছাড়াও স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের পাঁচুবাবু ঠিক ভাবে খেতে দিতেন না বলেও অভিযোগ। প্রতিবেশীদের সঙ্গেও বনিবনা ছিল না তার। নিজের আমবাগান আগলে রাখলেও অন্যের বাগান থেকে চুরি করে আম পাড়া নিয়ে হামেশাই প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিবাদ বাঁধত। পাকা বাড়ি ছিল ১৫ ফুট উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। ওই পাঁচিল ইটভাটা থেকে কয়েক বছর ধরে ইট চুরি করে পাঁচুবাবু তৈরি করেন বলে এ দিন পুলিশকে জানান প্রতিবেশীরাই। প্রতি বছর আম বিক্রির বিপুল টাকা তিনি কোথায় রাখতেন তা তিনি ছাড়া কেউই জানতেন না। প্রৌঢ় খুনের খবর পেয়ে এদিন এলাকায় দেহ উদ্ধার করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয় পুলিশকে। ময়নাতদন্তে জন্য দেহ গাড়িতে তোলার সময় কেউই এগিয়ে না আসায় পুলিশ কর্মীরাই দেহ তোলেন। পরে ছেদন মন্ডল নামে এক প্রতিবেশীকে নিয়ে দেহ মালদহ থেকে নিয়ে আসা সহ সৎকারে উদ্যোগী হন আড়াই ডাঙ্গা পঞ্চায়েতের স্থানীয় সদস্য অঞ্জনা মণ্ডলের স্বামী তপেশবাবু। অঞ্জনা দেবী বলেন, “এক অদ্ভূত চরিত্রের মানুষ ছিলেন। না খেয়ে জমানো, জমি কেনা তার নেশা ছিল।” মৃতের মেয়ে সনিতা দেবী বলেন, “বাবাকে কে, কী ভাবে খুন করল জানি না। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।”
|