এ যেন শনির দশা! এক সঙ্গে নানা সমস্যায় জর্জরিত মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
প্রসূতি বিভাগের ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) সংক্রমণ। ফলে ওটি বন্ধ। আপাতত সার্জারি ওটিতেই টেবিল সংখ্যা বাড়িয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। বিদ্যুৎবাহী তারে ত্রুটি থাকায় হাসপাতালের একাংশে বিদ্যুৎ পরিষেবাও স্বাভাবিক নেই। ফলে, পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। পাম্পে জল উঠছে না। বিদ্যুৎ সমস্যার জন্যই বন্ধ সিটি স্ক্যান। রোগীদের বাইরে যেতে হচ্ছে। হাসপাতালে পাওয়া যাচ্ছে না স্যালাইনও। একসঙ্গে এতগুলো সমস্যা সামলাতে হিমসিম হচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও দ্রুত সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতাল সুপার যুগল কর। তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ পরিবেষা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। গাইনি ওটিতে সংক্রমণ হয়েছে। তাই সেটি স্থানান্তর করা হয়েছে। আর স্যালাইনের সমস্যা অন্য হাসপাতালেও রয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে সমস্যা মিটে যেতে পারে।”
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিধান ব্লকের একতলায় প্রসূতি বিভাগের ওটি ছিল। দো’তলায় রয়েছে সার্জারি ওটি। সংক্রমণ ধরা পড়ায় রবিবার থেকে প্রসূতি বিভাগের ওটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সার্জারি ওটিতে টেবিল সংখ্যা বাড়িয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। সংক্রমণের খবরে প্রসূতি ও তাঁদের পরিজনেরাও উদ্বিগ্ন। কয়েকজন প্রসূতি অন্য হাসপাতালে চলে গিয়েছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন নন্দিতা দে। বাড়ি গড়বেতায়। শনিবার মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন। এ দিন দুপুরে পরিজনেরা তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চলে যান। নন্দিতাদেবীর স্বামী অমিত দে বলেন, “ওটিতে সংক্রমণ হয়েছে বলে শুনেছি। তাই ওঁকে এখানে না রাখার সিদ্ধান্ত নিই।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, উদ্বেগের কিছু নেই। |
বিদ্যুৎ সমস্যা চলছে শুক্রবার থেকে। শুক্রবার রাতে হাসপাতালের একাংশে বিদ্যুৎবাহী তারে ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে শনিবার সকালে পুরনো ভবনের দু’টি ট্যাঙ্কে জল তোলা যায়নি। মেডিক্যালে মোট ৪টি জলের ট্যাঙ্ক। তার মধ্যে দু’টিতে জল না ওঠায় হাসপাতালে পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। রবিবারও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। মেদিনীপুর মেডিক্যালে শয্যা সংখ্যা ৫৬১। তবে গড়ে রোগী থাকেন সাড়ে সাতশোরও বেশি। অধিকাংশ রোগীর সঙ্গে পরিজনেরাও থাকেন। জল-সঙ্কটে জেরবার হন সকলেই।
বিদ্যুৎ সমস্যার জন্যই শনিবার থেকে বন্ধ সিটি স্ক্যান। মেদিনীপুর মেডিক্যালে দিনে গড়ে ৩০-৩৫ জন রোগীর সিটি স্ক্যান হয়। জরুরি এই পরিবেষা বন্ধ থাকায় রোগীর আত্মীয়স্বজনরা ক্ষুব্ধ। রোগীকে বাইরে নিয়ে গিয়ে স্ক্যান করিয়ে আনতে হচ্ছে। এমনিতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে ‘নো-লোডশেডিং জোন’-এর মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ, হাসপাতালে সব সময় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক থাকার কথা। তা রয়েওছে। তবে একাংশে তারে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। হাসপাতাল সুপার বলেন, “তারে ক্রুটি থাকলে কারও কিছু করার নেই। মেরামতের চেষ্টা চলছে।”
এরই মধ্যে আবার স্যালাইনের অভাব দেখা দিয়েছে। রোগীর পরিজনদের বাইরে থেকে স্যালাইন কিনে আনতে হচ্ছে। ওটিতেও স্যালাইন নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, অন্য হাসপাতালেও এই সমস্যা রয়েছে। দু ’সপ্তাহ ধরে সমস্যা চলছে। আগে ডিস্ট্রিবিউটররা হাসপাতালে স্যালাইনের জোগান দিতেন। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মেনে এখন স্যালাইন প্রস্তুতকারী সংস্থার থেকে সরাসরি থেকে তা নিতে হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। সেই মতো ই-মেলে কত স্যালাইন প্রয়োজন তা জানিয়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সুপারের আশ্বাস, “চলতি সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্যালাইনের বোতল চলে আসতে পারে।” |