চাষের এলাকা কমেনি। উৎপাদনও একই রয়েছে। কিন্তু ভিন রাজ্যে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উত্তরবঙ্গের আলু এ বার মহার্ঘ হয়েছে।
ভাল কিছু না হোক। নিম্ন মধ্যবিত্তের সংসারে আলু সেদ্ধ ভাতে বেঁচে থাকার স্বপ্নেও যেন ভাঙনের ছায়া। বাজারে দরদাম করতে হাত পুড়ছে গৃহকর্তারা। কেজি প্রতি আলুর দাম চড়েছে ১৪ টাকা। কিন্তু হাসফাঁস করলেও নিরুপায়। দাম কমবে এমন লক্ষ্যণ আপাতত মিলছে না। তবে বাজারের ঊর্ধ্বগতি দেখে খদ্দেরের কপালে দুশ্চিন্তার মেঘ জমলেও চাষিরা স্বস্তিতে। কারণ অন্য কিছু নয়। ভাল দাম প্রাপ্তি। গত বছর দেড় টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে রাজি হয়েও ফসলের খদ্দের মেলেনি। এ বার মরশুমের শুরু থেকে উল্টো ছবি। আলু চাষিদের বাড়িতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের ভিড়। শুরু থেকে তাঁরা কেজি প্রতি দাম ৬ টাকা থেকে ৮ টাকা দিয়েছেন। জলপাইগুড়ির মুখ্য কৃষি আধিকারিক আনোয়ার হোসেন বলেন, “গত দু’বছর থেকে চাষিরা লোকসান করে এ বার ভাল দাম পেয়েছে।” কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। এ বার হয়েছে ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি জমিতে উৎপাদনে খুব একটা হেরফের নেই। গড়ে ২৩ থেকে ২৫ টন আলু মিলেছে। গত বছর দাম না মেলায় চাষি ও ব্যবসায়ীদের অনেকে হিম ঘরে মজুত করা আলু বার করেনি। তা পচে নষ্ট হয়েছে। ময়নাগুড়ির মাধবডাঙা-২ এলাকার চাষি তথা সিপিএম নেতা শিরেন রায় ওই ভয়ে এ বার আলু চাষ করেননি। এখন বাজার দেখে তিনি বলছেন, “এতটা ভাল দাম মিলবে ভাবতে পারিনি।”
বাজারের তেজিভাব দেখে অনেকে খেতের ফসল পুরোটা হিম ঘরে না পাঠিয়ে খুচরো বিক্রির জন্য বাড়িতে রেখে দেন। তাঁদের লাভ বেড়েছে। যেমন মনেজ রায়। হুসলুরডাঙা এলাকার বাসিন্দা তৃণমূল নেতা মনোজবাবু নিজের এবং লিজে নেওয়া মিলিয়ে ৪০ বিঘা জমি চাষ করেন। বিঘা প্রতি জমিতে উৎপাদন হয়েছে ৩২ কুইন্টাল। খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা। বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, “১৮ বছর থেকে আলু চাষ করছি। অনেক দিন পরে এ বার বেশি পয়সা পেলাম।”
কেন আলুর দাম ঊর্ধ্বমুখী! জলপাইগুড়ি মহকুমা কৃষি আধিকারিক হরিশ্চন্দ্র রায় বলেন, “মরশুমের শুরু থেকে প্রচুর আলু ভিন রাজ্যে চলে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।” কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছর হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বর্ধমান থেকে প্রচুর আলু উত্তরবঙ্গের বাজারে আসে। এ বার উল্টো ঘটনা ঘটেছে। ওই সমস্ত এলাকায় উৎপাদনে ঘটতি থাকায় উত্তরবঙ্গ থেকে আলু বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ছাড়াও অসম ও নেপালে যেতে শুরু করে। তাই দাম বাড়ে। একই মত কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের। সংগঠনের উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ইতিমধ্যে জলপাইগুড়ির ২৭টি হিমঘর থেকে আলু বার হতে শুরু করেছে।” পাইকারেরা জানান, দাম কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ, খেত থেকে ৬ টাকা কেজি দামে আলু কিনে হিমঘরে মজুত করার সময় কিছু ঘাটতি হয়। রয়েছে পরিবহণ খরচ। হিমঘর ভাড়া। দাম পড়ে যায় ৯ থেকে ১১ টাকা কেজি। সেটা খুচরো বাজারে পৌঁছে ১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। |