|
|
|
|
|
|
দরজা খোলার মন্ত্র... |
গৌরী সেনের দরকার নেই |
ছেলেবেলা শেষ। স্কুলের পরিচিত দরজাটি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষায় পা রাখা। এই সময়েই দরকার
আর্থিক সহায়তা। আর এই সহায়তার জন্যে প্রস্তুত নানা স্কলারশিপ। জানাচ্ছেন স্বাতী ভট্টাচার্য |
এগিয়ে যাও, আমি তো আছি।’ জীবনে এক একটা সময় আসে, যখন এমন কারওকে দরকার হয় যে কাঁধে হাত রেখে এই ক’টা কথা বলবে। তেমন একটা সময় হল স্কুলের দরজা পেরিয়ে উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের মুহূর্তটি। ছেলেবেলার শেষ হয় স্কুলের সঙ্গে সঙ্গে, নিজের চিন্তা নিজেকে করার অভ্যাস এ বার শুরু করার পালা। তাই এ বার ভাবতে হয়, কোথা থেকে আসবে ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি পড়ার টিউশন ফি, কিংবা চার বছর বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার খরচ। পরিবার যদি সে খরচ সহজে দিতে না পারে, তখন উপায়?
উপায় স্কলারশিপ। যাদের পরীক্ষার ফল চমকে দিয়েছে, কিন্তু পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি সামান্য, তাদের জন্য সরকারি বেসরকারি নানা সংস্থা নানা স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। স্কলারশিপকে কেবল টিউশন ফি জোগাড় করার উপায় ভাবলে অবশ্য ভুল হবে। যে হেতু বেশ কঠিন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে নির্বাচন হয়, তাই একটা ভাল স্কলারশিপ পাওয়া একটা বড় স্বীকৃতিও বটে। তাই কেরিয়ারের দরজা খুলে দিতে পারে স্কলারশিপ। তেমনই কিছু সুযোগের খোঁজ রইল এই পাতায়। |
ফারসি থেকে ফার্মাসি |
যে কোনও বিষয়ে নিজের পছন্দের কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য আর্থিক সহায়তা দেবে দিল্লির ‘ফাউন্ডেশন ফর অ্যাকাডেমিক একসেলেন্স অ্যান্ড অ্যাকসেস।’ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্তরে তিন বছর পড়ার জন্য পাওয়া যায় আর্থিক অনুদান, তার পর আরও দু’বছর পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের জন্যও স্কলারশিপ পাওয়া যেতে পারে। পড়াশোনার সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক খরচ এঁরা দেবেন, ছাত্রের প্রয়োজন অনুসারে। যাঁদের পরিবারের বি পি এল কার্ড রয়েছে, এবং যাঁরা তফশিলি জাতি বা জনজাতি, কিংবা ‘ও বি সি’ সম্প্রদায় ভুক্ত, তাঁরা বিশেষ সুযোগ পাবেন। কিন্তু যে কোনও গরিব পরিবারের ছাত্রছাত্রীর আবেদন করতে বাধা নেই। বিশদ জানা যাবে www.faeaindia.org ওয়েবসাইটে। এই ওয়েবসাইট থেকেই ফর্ম ডাউনলোড করে পূরণ করে পাঠানো যাবে, কিংবা অনলাইন আবেদন পাঠানো যাবে। আবেদন ডাকে জমা দিতে হলে পাঠাতে হবে এই ঠিকানায় এফএইএ, সি- ২৫ কুতব ইনস্টিটিউশনাল এরিয়া, নিউ মেহেরৌলি রোড, নয়াদিল্লি ১১০০১৬। ফোন ০১১-৪১৬৮৯১৩৩। এই ফাউন্ডেশনকে সহায়তা দেয় BHEL, CII, টাটা গ্রুপ প্রভৃতি নানা সংস্থা। ফাউন্ডেশনের পক্ষে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ভি আর মেহতা জানিয়েছেন, শেষ তারিখ ২৩ জুন, কিন্তু ছাত্রদের প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হতে পারে। এই ফাউন্ডেশন এখনও অবধি দেশের ১২০০ ছেলেমেয়েকে স্কলারশিপ দিয়েছে। এ বছর ৩০০ ছাত্র সহায়তা পাবে। তবে এই স্কলারশিপ কেবল ডিগ্রি কোর্সের জন্য, ডিপ্লোমার জন্য নয়।
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে যে কোনও বিষয় পড়ার জন্য আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে আর একটি সংস্থা, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন। সর্বভারতীয় স্তরে এরা দিচ্ছে ২৬০০টি ‘মেরিট কাম মিনস’ (‘মেধা ও সামর্থ্য’ ভিত্তিতে) স্কলারশিপ। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার জন্য, বা দশম শ্রেণির পর আইটিআই (ITI)-তে পড়ার জন্য মাসে এক হাজার টাকা পাওয়া যাবে। ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল (এম বি বি এস) এবং এম বি এ (রেগুলার) পড়ার জন্য মাসে তিন হাজার টাকা পাওয়া যাবে।
বছর বিজ্ঞাপন বেরোয় জুনের মাঝামাঝি, আবেদন জমা দিতে হয় অগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে। ওয়েবসাইট www.applicationnew.com/ioclscholar। যোগাযোগ M/s এস কনসালট্যান্ট, বি- ১৩, ডিএসআইডিসি কমপ্লেক্স, ফাংশনাল ইনডাসট্রিয়াল এস্টেট, পতপারগঞ্জ ইনডাসট্রিয়াল এরিয়া, নয়াদিল্লি- ১১০০৯২। ফোন ০১১-২২১৬২৯৭০। এই স্কলারশিপের ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটর’ দেবব্রত ঘোষ জানালেন, শুধুমাত্র অনলাইন আবেদনই গ্রাহ্য করা হবে, ডাকে আবেদন পাঠালে গ্রাহ্য হবে না। |
|
ডাক্তার হতে হলে: বহু ছাত্রছাত্রীর ইচ্ছের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ডাক্তারি। অথচ ডাক্তারির পাঠ দীর্ঘ, ব্যয়বহুল। নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন সফল করতে ২০১০ সাল থেকে এশিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন দিচ্ছে ‘উদয়ের পথে’ স্কলারশিপ, এ রাজ্যের ছেলেমেয়েদের জন্য। মাধ্যমিকে যারা অন্তত ৮৫ শতাংশ পেয়েছে, এবং জীবন বিজ্ঞান-সহ একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখায় পড়ছে, তাদের পড়াশোনার খরচ এবং জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার কোচিং-এর খরচ দেবে এই স্কলারশিপ, জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেস-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, ডা. কুনাল সরকার। দু’বছরের জন্য দেওয়া হবে এই স্কলারশিপ। আর যারা জয়েন্ট এন্ট্রান্স মেডিক্যাল পরীক্ষায় প্রথম ১০০০-এর মধ্যে র্যাঙ্ক পেয়েছে, কিন্তু পড়ার খরচ নিয়ে চিন্তিত, তাদের জন্য রয়েছে সাড়ে চার বছরের স্কলারশিপ। নির্বাচন হয় আবেদনের মান এবং ইন্টারভিউয়ের ভিত্তিতে। আবেদনের শেষ তারিখ ২২ জুন, প্রয়োজনে সময়সীমা বাড়ানো হবে। যোগাযোগ অক্ষয় মোহান্তি, আরটিআইআইসিএস (RTIICS), ১২৪ মুকুন্দপুর (ই এম বাইপাস), কলকাতা ৯৯। মোবাইল ৯০০৭০৯৪৮৬০।
এ ছাড়া কোল ইন্ডিয়া দিচ্ছে মোট ছ’টি স্কলারশিপ মেডিক্যাল ছাত্রদের জন্য। শর্ত ইঞ্জিনিয়ারিং-এর স্কলারশিপের মতোই (নীচে দেখুন)।
আর যারা ইঞ্জিনিয়ার: ইঞ্জিনিয়ারিং যারা পড়তে চায় তাদের জন্য ‘কোল ইন্ডিয়া’ দিচ্ছে ৯৪টি স্কলারশিপ। এটা সর্বভারতীয় স্কলারশিপ। যাদের পরিবারের ‘বি পি এল’ কার্ড রয়েছে, এবং কোনও সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা মেডিক্যাল কলেজে যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের ফার্স্ট ইয়ারে, বা প্রথম সেমিস্টারেই আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে, তার একটি পাতা পূরণ করতে হবে কলেজের প্রধানকে। টিউশন ফি, হস্টেল, খাওয়া-দাওয়া প্রভৃতি সব খরচ দেবে এই স্কলারশিপ। বিশদ জানতে দেখতে হবে ওয়েবসাইট www.coalindia.in। কোল ইন্ডিয়ার তরফে এম বি অপরাজিত জানালেন, ওয়েবসাইট থেকে ফর্ম ডাউনলোড করে তা পূরণ করে, এবং কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রমাণপত্র নিয়ে ছাত্ররা পাঠাতে পারে আবেদন। কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। ২০১২-১৩ সালের বিজ্ঞাপনের জন্য জুন থেকে নিয়মিত ওয়েবসাইটে লক্ষ রাখতে হবে।
তফশিলি জাতি ও জনজাতির ছাত্রছাত্রীদের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য চার বছরের স্কলারশিপ দেয় অয়েল অ্যান্ড ন্যাচরাল গ্যাস কর্পোরেশন (ONGC)। যে কোনও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে যারা ভর্তি হয়ে গিয়েছে, প্রথম বর্ষের সেই ছেলেমেয়েরা আবেদন করতে পারে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষায় অন্তত ৬০ শতাংশ পেয়ে থাকতে হবে, আর পরিবারের আয় হতে হবে বার্ষিক দেড় লক্ষ টাকার কম। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে বছরে ১২ হাজার টাকা, এবং তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে বছরে ১৮ হাজার টাকা করে পাওয়া যায়। সর্বভারতীয় এই স্কলারশিপ বি টেক, বি ই কোর্স-এর জন্য, এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন স্তরে জিঅলজি এবং এম বি এ পড়ার জন্যও দেওয়া হয়। এই স্কলারশিপের বিজ্ঞাপন সাধারণত বের হয় অক্টোবরের গোড়ায়, আবেদন জমা দিতে হয় ডিসেম্বরের মধ্যে। ওয়েবসাইট www.ongcindia.com. এই ওয়েবসাইটে গত বছরের আবেদনপত্রটি এখনও রয়েছে, সেটা দেখলে আগাম তৈরি হওয়া যাবে। যোগাযোগের ঠিকানা দ্য ম্যানেজার (এইচআর)-আই/সি, এসসি/ এসটি সেল, রুম নম্বর ৩, ওল্ড সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং, ও এন জি সি, তেল ভবন দেরাদুন- ২৪৮০০৩।
ডিপ্লোমা বা ভোকেশনাল ট্রেনিং: এই কোর্সগুলির জন্যেও স্কলারশিপ দেয় লাইফ ইনসিয়োরেন্স কর্পোরেশন-এর গোল্ডেন জুবিলি ফাউন্ডেশন। সেই সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল বা অন্য যে কোনও বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশনের জন্যও টাকা পাওয়া যায়। স্কলারশিপের পরিমাণ বছরে ১০ হাজার টাকা। শর্ত, পরিবারের আয় হতে হবে বার্ষিক ৬০ হাজার টাকার মধ্যে, আর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অন্তত ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়ে থাকতে হবে। বিশদ জানতে দেখতে হবে ওয়েবসাইট http://www.licindia.in/GJF_scholarship.htm। গত বছর অগস্ট মাসের আট তারিখ আবেদন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল। অনলাইন আবেদন জমা দেওয়া যায়। ঠিকানা ‘Yogakshema’, Nariman Point, Mumbai - 21. Fax No.022-22884103। ইমেল : mailto:co_gjf@licindia.com
কেবল কেমিস্ট্রি: যারা রসায়ন অনার্স নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করতে চায়, তেমন দশজন ছাত্র-ছাত্রীকে মাসে এক হাজার টাকা স্কলারশিপ দিচ্ছে এস ডি আহুজা ফাউন্ডেশন। আর্থিক সহায়তা না পেলে যারা পড়াশোনা চালাতে পারবে না, এবং উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল্য পরীক্ষায় যারা কেমিস্ট্রিতে অন্তত ৬৫ শতাংশ পেয়েছে, তাদের জন্য এই স্কলারশিপ। ফাউন্ডেশনের পক্ষে শুচিতা রায়চৌধুরী জানালেন, প্রার্থীদের একটি ৩০ মিনিটের সাধারণ জ্ঞানের লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে কলকাতার অফিসে। ঠিকানা ১৪/২ পাম অ্যাভিনিউ, কলকাতা ১৯, ফোন ২২৮১ ৯১৯৫। ইমেল trust@dpahuja.com। চিঠির উপর ‘এস ডি আহুজা স্কলারশিপ’ উল্লেখ দরকার। শেষ তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়নি।
সরকারি সহায়তা: পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘মেরিট কাম মিনস’ স্কলারশিপ দেয় সেই সব ছাত্রছাত্রীদের যাদের পরিবারের বার্ষিক আয় ৮০ হাজার টাকার কম। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য মাসে ৫০০ টাকা, গ্র্যাজুয়েশন স্তরের জন্য মাসে ৭৫০ - ১৫০০ টাকা পাওয়া যায়। মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৭৫ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিকেও ৭৫ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ডিপ্লোমা কোর্স, বা গ্র্যাজুয়েশন স্তরে পলিটেকনিকে পড়ার জন্যও এই অনুদান পাওয়া যায়। বিজ্ঞাপন বেরোয় জুন-জুলাই মাসে, আবেদন করতে হয় ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। ওয়েবসাইট www.wbgov.com, www.banglarmukh.com। বিধান নগরের বিকাশ ভবনে নর্থ ব্লকে নবম তলে শিক্ষা দফতরের স্কলারশিপ বিভাগেও যোগাযোগ করা যেতে পারে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইনরিটিজ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফিনান্স কর্পোরেশন’ উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরের জন্য স্কলারশিপ দেয়। এদের ওয়েবসাইট www.wbmdfc.org, ফোন 033 40047469
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘মিনিস্ট্রি অব মাইনরিটি অ্যাফেয়ার্স’ মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, শিখ, সব সম্প্রদায়ের জন্য স্কলারশিপ দেয়। এ রাজ্যের মুসলিম ছেলেমেয়েদের জন্য ছয় হাজারেরও বেশি স্কলারশিপ রয়েছে। পরিবারের বার্ষিক আয় হতে হবে আড়াই লক্ষ টাকার কম। দেখুন ওয়েবসাইট --
http://momascholarship.gov.in/minority_scholarship/internalIndex.jsp |
|
|
|
|
|