কাছাড়
‘বিদেশি’ চিহ্নিত হওয়ায় আত্মঘাতী তরুণ
দেশে জন্মেও বিদেশি নির্ধারণ ট্রাইব্যুনালের ফতোয়ায় গায়ে তকমা লেগেছিল ‘বিদেশি’ বলে। ট্রাইব্যুনালের একতরফা রায়ের পর চার বছর ধরে যন্ত্রণায় ছটফট করতেন কাছাড় জেলার কাটিগড়া থানার সুবোধনগর গ্রামের যুবক অর্জুন নমশূদ্র। কেউ কেউ বলত ‘পাগল’।
আপিল মামলা যত এগোচ্ছিল, সুস্থ হচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সচিত্র ভোটারতালিকার জন্য নির্বাচন-কর্তারা বাড়ির ১৮-ঊর্ধ্ব সবার কাছ থেকে কাগজপত্র চেয়ে নিলেও অর্জুনের খোঁজ করেননি। কারণ, সর্বশেষ ভোটারতালিকায় তাঁকে ‘ডাউটফুল’ অর্থাৎ ‘সন্দেহভাজন’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বার আর সইতে পারেননি। গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হলেন এই তরুণ।
অর্জুনের মা অকন নমশূদ্র ১৯৫৯ সালের কাগজপত্র দেখিয়ে জানতে চান, যে-ছেলে কোনও দিন বাংলাদেশে এক বারের জন্যও গেল না, তাকে কী করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়? কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অর্জুনের মা, স্ত্রী এবং তিন সন্তান।
আইনজীবী অনুপ চৌধুরীর কথায়, ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে সমন জারি হলে অর্জুন ২০০৭ সালের ৩ মে যথারীতি আদালতে হাজির হন। কিন্তু পরবর্তী তারিখ আর জানতে পারেননি। ২০০৮-এর ১১ ফেব্রুয়ারি একতরফা ভাবে তাঁকে ‘বিদেশি’ বলে রায় দেন ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের সদস্য এ কে চৌধুরী। রায় পড়েই তাঁরা জানতে পারেন, নাগাড়ে অনুপস্থিত থাকার দরুন একতরফা রায় হয়েছে। মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার ট্রাইবুন্যালকে জানিয়েছেন, অর্জুন ১৯৭১ সালের পর এ দেশে এসেছেন। তাঁর মূল বাড়ি বাংলাদেশের জকিগঞ্জ থানার মাসুন্দাতে। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পাল্টা মামলা করেন অর্জুন। অর্জুনের আইনজীবীর দাবি, এই মামলায় অর্জুনের জয়া প্রায় নিশ্চিত ছিল। কারণ, ১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি তারিখে কাছাড় জেলাশাসকের জারি করা রিহ্যাবিলেটেশন লোন সার্টিফিকেট রয়েছে বাবা প্রয়াত অনন্ত নমশূদ্রের নামে। কিন্তু ভোটারতালিকায় নামের পাশে ‘ডি’ চিহ্নিত হয়ে পড়ায় ভয় পেয়ে যান অর্জুন, সঙ্গে অপমানও বোধ করছিলেন।
অর্জুনের আত্মহত্যার এই ঘটনায় এলাকা জুড়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতি (সিআরপিসি) এই ঘটনার প্রতিবাদে মানবাধিকার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়ে দিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থ। তিনি বলেন, “অর্জুনকে আত্মহত্যায় বাধ্য করা হয়েছে। ভারতে জন্মেও তাঁকে দেশে থাকতে না-দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন। কাগজপত্র না দেখেই অর্জুনের নাম ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গরিব মানুষ আইন-আদালত বোঝে না বলে তাদের গায়ে অহেতুক ‘বাংলাদেশি’ তকমা এঁটে হয়রানি করা হচ্ছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.