কথার লড়াই চলছেই। গত কালই কড়া ভাষায় অণ্ণা শিবিরের সমালোচনা করে বার্তা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এর পর আজ অণ্ণা-ঘনিষ্ঠ কিরণ বেদী টুইটারে ধৃতরাষ্ট্রের উদাহরণ টেনে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সমালোচনায় সরব হন। প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধে বলেন, তাঁর ‘দুর্নীতিপরায়ণ সহযোগীরা’ ফৌজদারি অপরাধের কড়া এবং দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দেবেন না। কিরণের মন্তব্যের পরই কড়া প্রতিক্রিয়া জানান কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। তিনি বলেন, এই ভাবে ব্যক্তিগত কুৎসা করে কোনও লাভ হবে না।
টুইটারে আজ কী লিখেছেন কিরণ?
কিরণ লিখেছেন, “তাঁর সচিবালয় প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন জানিয়েছেন। দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের সময় সব জেনে শুনেও ধৃতরাষ্ট্র কি কৌরবদের সমর্থন করেননি? ভারতীয় সংস্কৃতিতেই তো এমন উদাহরণ রয়েছে।” তিনি আরও জানান, কেন্দ্রে যে দল ক্ষমতায় রয়েছে, তাকেই অণ্ণা শিবির সমালোচনা করেছে। কারণ তারাই পারে দুর্নীতি রোধে কঠোর আইন তৈরি করতে। বিরোধীরা নয়।
কালই অণ্ণা শিবিরের সঙ্গে সংঘাত জোরালো করে কেন্দ্র। কয়লাখনি বণ্টনে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনের দাবি খারিজ করে দেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ স্বামী দাবি করেন, অণ্ণা হজারের চার দিকে রয়েছে রাষ্ট্রবিরোধী কিছু লোক। দেশে অস্থিরতা তৈরি করতেই তারা ইউপিএ সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে। তিনি জানান, কয়লাখনি বণ্টন সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে সিবিআই তদন্ত করছে। তাই আরও একটি কমিটি গড়ে তদন্ত চালানো নিষ্প্রয়োজন বলে অণ্ণা হজারেকে চিঠিও দেন নারায়ণ স্বামী।
এর পরই কেন্দ্র তথা প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনায় ফের সরব হন অণ্ণা শিবিরের অন্যতম সদস্য কিরণ বেদী। তিনি আজ জানিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী-সহ ১৫ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনের দাবিতে ২৫ জুলাই থেকে আমরণ অনশনে বসছেন তাঁরা।
কিরণের সমালোচনায় এর পরেই আসরে নামেন সলমন খুরশিদ। বলেন, “দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে তাঁরা আন্দোলন শুরু করেছিলেন। আন্দোলনের উদ্দেশ্য শুভ ছিল। কিন্তু এর পর তাঁরা আন্দোলনের সেই পথ থেকে সরে এসেছেন। এখন তাঁরা ব্যক্তিগত কুৎসার রাজনীতি করছেন। আমার বিশ্বাস, সময় এলে মানুষই তাঁদের সঠিক জবাব দেবেন।”
এরই পাশাপাশি, আইনমন্ত্রী বলেন, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর জনগণ তাঁদের কাজের মূল্যায়ন করেন। কেউ ভোটে জেতেন। কেউ হারেন। কিন্তু এই ‘স্ব-ঘোষিত বিশিষ্ট জনেরা’ যে সব দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, তা নিয়েই তাঁদের আগে সরব হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভায়লার রবিও অণ্ণা শিবিরকে আজ এক হাত নিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, “দেশে অস্থিরতা তৈরি করার জন্য বিভিন্ন মার্কিন সংস্থার থেকে অর্থ সাহায্য পাচ্ছে অণ্ণা শিবির। শুধু তা-ই নয়, অণ্ণা-ঘনিষ্ঠ অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও কিরণ বেদীর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির বহু মামলা রয়েছে।”
আজ কিরণের টুইটের পরে ফের কেন্দ্রের সমালোচনায় সরব হয়েছে বিজেপি। বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভি এ দিন বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সততা নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠছে না। কিন্তু যে ভাবে পরের পর দুর্নীতির অভিযোগ তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে উঠছে, তাতে প্রধানমন্ত্রীর গায়েও কালি লাগতে বাধ্য। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই ভবিতব্য।” তাই তিনি বলেন, বিজেপি চায়, অণ্ণা শিবিরের সঙ্গে কথার লড়াই শেষ হোক। প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে বিশেষ তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে দুর্নীতির তদন্ত করার নির্দেশ দিন। |