তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথেই ঝাড়খণ্ডে কৃষিজমি বাঁচাও আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছে রাজ্যের সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। শিল্পের জন্য কৃষি জমি অধিগ্রহণ-সহ উচ্ছেদের প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই বিচ্ছিন্ন ভাবে কৃষি জমি বাঁচাও মঞ্চ গড়ে ছোটনাগপুর এবং সাঁওতাল পরগনার বিভিন্ন অংশে অধিগ্রহণ-বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে।
ওই আন্দোলনকে ঝাড়খণ্ডের প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে দিতে আগামী ১৬ জুন রাজ্যে ১২ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দিয়েছে সিপিএম তথা ঝাড়খণ্ডের বামফ্রন্ট। এখানে বামফ্রন্টের বাইরে থাকা একাধিক রাজনৈতিক সংগঠন তাদের ডাকা বন্ধকে সক্রিয় ভাবে সমর্থন করছে বলে দাবি করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য প্রকাশ বিপ্লব।
কৃষিজমি অধিগ্রহণ-বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যায় ঝাড়খণ্ডের সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গের দলীয় নেতৃত্বের কাটা ঘায়ে নুন ছেটানোর মতো লাগতে পারে। ঝাড়খণ্ডের সিপিএম নেতারা স্পষ্টই বলেছেন, “আমরা শিল্প- বিরোধী নই। কিন্তু কৃষি জমিতে শিল্প কেন? রাজ্যে তো প্রচুর অনুর্বর, পতিত এবং পাথুরে জমি রয়েছে। সেখানে শিল্প হোক। তা না-করে শিল্পের জন্য অপেক্ষাকৃত উর্বর কৃষি জমি অধিগ্রহণ হচ্ছে। যেখানে রাজ্যে খাদ্য শস্যের ঘটতির পরিমাণ অনেক।”
প্রসঙ্গত পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর আন্দোলনের কথা তুলে ঝাড়খণ্ডের সিপিএম নেতা প্রকাশ বিপ্লব বলেন, “সিঙ্গুরে দলের ভুল হয়েছিল। এলাকার কৃষকদের বিষয়টি বোঝানো হয়নি। তবে এটাও ঠিক সিঙ্গুরে উচ্ছেদ হওয়া কৃষকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ যে প্যাকেজ তৈরি হয়েছিল, তা গোটা দেশের মধ্যে উদাহরণ।”
ঝাড়খণ্ডের বামফ্রন্ট নেতৃত্বের অভিযোগ, গত বছর দুয়েকের মধ্যে ১০৭ টি শিল্প গড়ার ‘মউ’ স্বাক্ষরিত হয়েছে। শিল্পের জন্য প্রায় আড়াই লক্ষ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। যার অধিকাংশটাই প্রায় কৃষি জমি।
ফ্রন্ট নেতারা জানান, এই মুহূর্তে রাজ্যের জনসংখ্যা ৩ কোটি ২৯ লক্ষ। বার্ষিক প্রয়োজন ৪২ লক্ষ টান খাদ্য শস্য দরকার। কিন্তু গত বছর ভাল বর্ষা হওয়ার পরও খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ১৪ লক্ষ টনের বেশি হয়নি। “এর পরও যদি শিল্পের জন্য কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা হয় তবে রাজ্যে খাদ্য সঙ্কটকেই ডেকে আনা হবে”—মন্তব্য করেন রাজ্যের প্রথম সারির এক সিপিএম নেতা।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রকাশ বিপ্লবের অভিযোগ, রাঁচির নাগরি-সহ ঝাড়খণ্ডের অনেক জায়গায় জোর জবরদস্তি উচ্ছেদ করে জমি অধিগ্রহণ হয়েছে।
তিনি বলেন, “সংবিধানের পঞ্চম তফসিল অনুযায়ী গ্রামসভার অনুমোদন ছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকার জমি অধিগ্রহণ করা যায় না। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সংবিধানের ওই নির্দেশকেও অগ্রাহ্য করা হচ্ছে।”
এই ব্যাপারে রাজ্যের ভূমি রাজস্ব ও ভূমি সংস্কার দফতরের মন্ত্রী মথুরাপ্রসাদ মাহাতো বলেন, “কয়েক বছর আগে শিল্পের জন্য কৃষি জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তার পর আর নতুন করে কৃষি জমি অধিগ্রহণ হয়নি। এবং এটাও স্পষ্ট বলছি, কৃষিজমি আর অধিগ্রহণ হবে না। পাশাপাশি আমরা আদিবাসীদের জমির অধিকারের রক্ষাকবচ ছোটনাগপুর টেনেন্সি আইনও (সিএনটি) চালু করেছি।” |